এই জাতির বাকি কাজগুলো করার দায়িত্বও আওয়ামী লীগের
২১ জুন ২০২১ ১২:০৭
ঢাকা: ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দলের উপদফতর সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করার পর দলের এই নির্ভরযোগ্য কর্মীকে ব্যক্তিগত সহকারী করে নেন। পরে দলের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে সাংগঠনিকভাবেও পদোন্নতি দিয়ে দফতর সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করেন।
বিপ্লব বড়ুয়া আওয়ামী লীগের দফতর সামলানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে বর্তমানে কাজ করে চলেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তার সঙ্গে কথা বলেছেন সারাবাংলার সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট নৃপেন রায়।
সারাবাংলা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজকের পথচলায় আগামী দিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পথচলাকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
বিপ্লব বড়ুয়া: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বয়স ৭২ বছর। এই জনপদের এবং এই জাতির যা কিছু মহৎ অর্জন, সেটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ করেছে। এই আওয়ামী লীগ হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং এই আওয়ামী লীগের হাত ধরে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগের যত নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছে, আত্মাহুতি দিয়েছে, পৃথিবীতে অন্য কোন রাজনৈতিক দলের এতো নেতাকর্মী এতো আত্মাহুতি দেননি।
এই দলেরই মহান নেতা জাতির পিতাকে সপরিবারে এই স্বাধীন বাংলাদেশে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ৭৫ পরবর্তী সময়ে বাঙালির স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধকে ছিনতাই করে নিয়ে গিয়েছিল স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান-এরশাদ সরকার এবং সে জায়গায় দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, মানুষের হারিয়ে যাওয়া ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং মানুষের ভাত কাপড়ের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা তার ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। এই ৭২ বছরের আওয়ামী লীগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হচ্ছে ৪০ বছর। তিনি ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের ১৩তম কাউন্সিলে এই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন এবং তিনি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ একটি অন্ধকার সময়ে এই জাতিকে তিনি পথ দেখিয়েছেন। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মানুষের ভোট-ভাতের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অতুলনীয় সাংগঠনিক দক্ষতা থাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে চারবার আওয়ামী লীগকে দেশের জনগণের সেবা করার সুযোগ করে দিয়েছেন শেখ হাসিনাকে। তিনি চারবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
প্রতিবারের তিনি এ ধরনের নির্বাচনের পূর্বে জাতির সামনে দেশের সামনে একটি গোল তিনি সেট করেছেন, টার্গেট দিয়েছেন এবং তার লক্ষ্য ছিল সেই টার্গেট ফুলফিল (পূরণ) করা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাকে বলছিলেন যে, ২০০৭ সালে তিনি যখন ওয়ান/ইলেভেনে কারাগারে ছিলেন তিনি সেই সময়ও দেশ নিয়ে ভাবতেন। দেশের জনগণের শোষণমুক্তি অর্থনৈতিক মুক্তির কথা ভাবতেন। তিনি শপথ করেছিলেন যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কখনো যদি ফিরে পান, জনগণের ভোটে তিনি মানুষের বিশ্ব সভায় যে আমাদের স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রের স্ট্রেজ (পর্যায়/ধাপ) থেকে পর্যায় থেকে আমাদেরকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে যে নিয়ে যাবেন, তিনি সেদিন শপথ গ্রহণ করেছিলেন সেই কারাগারে বসেই।
তিনি আজকে জনগণের ভোটে বারবার ক্ষমতায় আসার কারণেই তার যে নৈতিক সংস্কার কর্মসূচি বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মসূচি তার যে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তিনি সেটি বাস্তবায়ন করার সুযোগ পেয়েছেন। এই কারণে করোনা মহামারির সময়ও আমাদের জিডিপি গ্রোথ দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা সবচেয়ে এগিয়ে আছি। আমাদের মাথাপিছু আয় করোনার মধ্যেও বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি শক্ত কাঠামোর ওপর বাংলাদেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়ও কিন্তু দেশের কোনো মানুষ না খেয়ে নেই। দেশের প্রতিটি সেক্টর যেন সচল থাকে তার জন্য তিনি অর্থনৈতিক প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছেন এবং উপযোগী বাজেট প্রণয়ণ করে যাচ্ছেন। সে বাজেটে সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য যে বরাদ্দ, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় বলেন এবং গৃহহীন-ঘরহীন মানুষের জন্য ঘর নির্মাণ করার জন্য তিনি অর্থবরাদ্দ বেশি করেছেন।
সারাবাংলা: তার মানে আওয়ামী লীগের যে মূল রাজনীতি; দুঃখী মানুষের মুক্তি, শোষণমুক্তি, অর্থনৈতিক মুক্তি, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার যে প্রত্যয় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে সেই রাজনীতির মূল দর্শনের প্রতি তিনি অনুগত আছেন, বিশ্বস্ত আছেন। আওয়ামী লীগ যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই সেই রাজনৈতিক দর্শন বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
বিপ্লব বড়ুয়া: আমরা বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ দিতে চাই যে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি তারা নিরঙ্কুশ সমর্থন জানিয়েছে বারবার এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি বারবার সমর্থন জানিয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে দেশের মানুষকে সেবা দিয়েছে তা নয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান যখন ক্ষমতার বাইরেও ছিল, যদি বলি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের স্বদেশভূমিকে মুক্ত করেছিলেন। কিন্তু সেই স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স আজ ৫০ বছর। সেখানে যদি আপনারা দেখেন যে আমরা ২০ বছরের বেশি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কখনও ছিলাম না। আজকে বাংলাদেশের যে অর্জন, সেটা আওয়ামী লীগের অর্জন। আজকে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি সেটা আওয়ামী লীগের অগ্রগতি এবং সেটি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৭৫’ পরবর্তী সময়ে সম্ভব হয়েছে।
আওয়ামী লীগ কখনো বিন্দুমাত্র দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে কখনও আপস করেনি। যখন বিরোধী দলে ছিল তখনও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য, সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ সবসময় রাজপথে ছিল। মানুষকে ছেড়ে যায়নি। এই যে মানুষের সঙ্গে থাকার রাজনৈতিক যে প্রত্যয়, যে অঙ্গীকার যেটি জন্মলগ্ন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ধারণ করেছিল আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেও সে আওয়ামী লীগ সেই অঙ্গীকারে প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছে।
আমি মনে করি যে, আওয়ামী লীগের আারও অনেক কিছু দেওয়ার রয়েছে। আমাদের একটি ট্রান্সফর্ম হচ্ছে সোসাইটির (সমাজের)। আমাদের মানুষের আজকে খাদ্যভাব নেই। আমাদের নতুন যে তরুণ প্রজন্ম; সেই তরুণ প্রজন্মের জন্য আমরা কর্মসৃজন করে তাদেরকে কাজ দেওয়া একটা বড় চ্যালেঞ্জ এবং তার জন্য উপযোগী বাজেট করা হয়েছে। আমি মনে করি যে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যেমনটি বলেছেন যে, সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ আর একটা জাতির অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। সেই জাতির মাথার শিড় উচ্চ করে পৃথিবীতে দাঁড়ানোর যে অবস্থান সেটি একটি নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আজকে একটি জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এই জাতির বাকি কাজগুলো করার দায়িত্ব কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। আমি জনগণকে আমাদের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দিনে ধন্যবাদ জানাব, কৃতজ্ঞতা জানাব এবং আগামী দিনগুলোতে আমাদের অনুরোধ তাদের সমর্থন, তাদের সহযোগিতা আমরা প্রত্যাশা করি।
সারাবাংলা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
বিপ্লব বড়ুয়া: সারাবাংলাকেও ধন্যবাদ।
সারাবাংলা/এনআর/একে
আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া শেখ হাসিনা