হেফাজত নিয়ে ভাবনার কিছু নেই, টার্গেট দলকে শক্তিশালী করা
২১ জুন ২০২১ ২০:২৩
চট্টগ্রাম থেকে: আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। তিনি চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। গত শনিবার (১৯ জুন) থেকে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রামের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে। শনিবার বিকেলে হাটহাজারী উপজেলার নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। এরপর রোববার (২০ জুন) সকাল থেকে চট্টগ্রাম ৪, ৫, ৮, ৯, ১০ ও ১১ আসনের সংসদ সদস্য ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। করোনা মহামারির সময় স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সকাল ১০টা থেকে চার দফায় অনুষ্ঠিত এসব বৈঠক চলে রাত পর্যন্ত। এসব বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়।
প্রসঙ্গত, করোনায় ঝিমিয়ে পড়া সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে তৃণমূলমুখী হয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের নেতা সংশ্লিষ্ট বিভাগে তিন দিনের সফরে এসেছেন। বিভিন্ন সময় আলোচিত হেফাজতে ইসলামের শক্ত ঘাঁটি খ্যাত হাটহাজারীর দিকে বিশেষ নজরসহ সংগঠনকে তৃণমূল পযর্ন্ত সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছেন। এছাড়া মাঠের স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে বিবেচিত সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনের ওপরও জোর দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এসব বিষয় নিয়েই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের ফাঁকে কথা বলেছেন সারাবাংলার সঙ্গে।
হেফাজতে ইসলামের ঘাঁটি হিসাবে সুপরিচিত হাটহাজারী উপজেলার সাংগঠনিক কর্মসূচির বিষয়ে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ছোট ছোট মিটিং করছি। ওরা কি বলে, সেটা শুনতে চাই। সেখানে মূলত যে প্রবলেমটা ফেস করতে হচ্ছে সেটা হলো- সেখানে আমাদের এমপি (নৌকা) নাই। দীর্ঘদিন এমপি না থাকার কারণে নৌকার যে প্র্যাকটিসটা, আওয়ামী লীগের যে প্র্যাকটিসটা সেটাও নাই। এছাড়া প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় নাই।’
তিনি বলেন, ‘হাটহাজারীর সামাজিক সম্পর্কগুলো মোল্লা কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। ওখানে মোল্লাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতার বাসাতেও একজন হুজুর জায়গির থাকে। ওই নেতা কিন্তু তাকে খারাপ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে না। কিন্তু ওই হুজুর যে বাইরে গিয়ে অনৈতিক কাজ করে, সেটাও তো দেখে না। হাটহাজারীতে কয়েকটি কওমি মাদরাসা আছে। অর্থ্যাৎ সেখানে হুজুরকেন্দ্রিক একটা সমাজ দর্পণ গড়ে উঠেছে। তারা এখন দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এখন আমাদের নেতাকর্মীদের বুঝাতে হচ্ছে- তারা হুজুর নয়, তারা ধর্ম ব্যবসায়ী।’
আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক সারাবাংলাকে আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন হয় না। কিন্তু ফাইটিং ফোর্স হচ্ছে সহযোগী সংগঠন। চট্টগ্রাম ২০১৯ সালে সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। থানা আওয়ামী লীগের সংগঠন কেন্দ্রিক এক ধরনের গ্যাপ আছে। এ বিষয়গুলোই আমরা আলোচনা করছি। আগামী ২০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরে এই মাসের শেষে আমি আবার হাটহাজারী ড্রাইভ দেবো।’
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘চট্টগ্রামে হেফাজত একটা বড় ইস্যু। তাই এখানে যদি আমরা আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে পারি তাহলে হেফাজত এমনিতেই কোণঠাসা হয়ে যাবে। আমাদের টার্গেট হেফাজত নয়, আমাদের টার্গেট হচ্ছে দল। আমার দলকে শক্তিশালী করার জন্য এই মিটিংগুলো করছি।’
তিনি বলেন, ‘ওখানে (হাটজাহারী) আমাদের আয়েশা ওয়াসিকা খান আছে। তিনি কেন্দ্রীয় নেত্রী। আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক। সেখানে জাতীয় পার্টির এমপি আছেন। উনাকে রিকোয়েস্ট করে বললাম, আপনি একটু স্পেশাল কেয়ার নেন। জাস্ট নেতাকর্মীদের সঙ্গে রিলেশন করার জন্য। নওফেল সাহেব, নাছির সাহেবকে অনুরোধ করে বললাম, আপনারা একটু যাওয়া-আসা করেন। কারণ এরা একটা ফিগার। এরা যখন যাবেন, কর্মীরা উজ্জীবিত হবে।’
আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলতে থাকেন, ‘জেলাগুলোতে হয় বর্ধিত সভা। সেখানে আসলে কি হয়? একটা বর্ধিত সভার আয়োজন হয়, টাইম দেওয়া হয়, ১০টার মিটিং ১১টায় শুরু। অনুষ্ঠান শুরুর আনুষ্ঠানিকতার পর ইউনিয়নের পক্ষ থেকে একজন বলেন, ওয়ার্ডের পক্ষ থেকে একজন বলেন, থানা-উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে একজন বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলেন। তারপর আমরা যারা আছি ভাষণ দিই। এর মধ্য দিয়ে দুপুরের খাওয়ার সময় হয়ে যায়। খাওয়া-দাওয়া করে আমরা ঢাকামুখী রওনা হই।’
কিন্তু চট্টগ্রামে এবার সেরকমটা করা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীদের মধ্যে ভেতরে ভেতরে এক ধরণের ক্ষোভ কাজ করে। তাদের মত প্রকাশের জায়গাটা আসলে কোথায়? সে পার্টি করে, সে ইউনিটের একজন নেতা, সে কোথাও কথা বলতে পারে না। তারা কেন্দ্রীয় নেতোদের সামনে কথা বলতে পারে না। স্বাস্থ্যবিধির কারণে সীমিত পরিসরে মিটিংগুলো করছি। আমরা শুধু মহানগর নিয়ে সাতটা মিটিং করছি। আজ চারটি, গতকাল করেছি তিনটি। এখন বসছি (দুপুর আড়াইটা) চট্টগ্রাম-১০ আসন নিয়ে। এখানে আমরা এমপি, দলীয় নেতা, জনপ্রিতিনিধি, থানা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কথা শুনছি। সকালের মিটিংয়ে সবাই প্রাণ খুলে মনের কথা বলেছে। এখনও বলবে।’
চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক লক্ষ্য নিয়ে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আমাদের টার্গেট হলো- অক্টোবরের মধ্যে ইউনিট এবং ওয়ার্ড সম্মেলন করা। নভেম্বরে থানা সম্মেলন করব। ডিসেম্বরে নেত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে আমরা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনটা করতে চাই। ডিসেম্বরে টার্গেট আছে। চট্টগ্রাম জেলা উত্তর-দক্ষিণের সম্মেলনও ডিসেম্বরের মধ্যে করে ফেলতে চাই। চট্টগ্রামে নতুন একটা সিস্টেম চালু করলাম। এই সিস্টেমটা আস্তে আস্তে সারাদেশে চালু হবে।’
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক