সমৃদ্ধির স্বপ্ন বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক পরিকল্পনার কৌশল
২১ জুন ২০২১ ২২:৪৪
ঢাকা: উন্নয়নশীল দেশ থেকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ পাড়ি দিয়ে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের কাতারে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে ১০ থেকে ১৫ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনা (স্ট্র্যাটেজিক প্লানিং) প্রণয়নে হাত দিয়েছে সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের নেতৃত্বে এই পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা প্রণয়নের অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গত মে মাসে প্রথমবারের মত পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনীতিবিদ, সাবেক কূটনীতিক, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। আর এমন বৈঠক ধারাবাহিকভাবে হতেই থাকবে বলে জানা গেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ৫০ বছরে আমাদের অনেক অর্জন হয়েছে। বৈশ্বিক একাধিক ফোরামে আমরা নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছি। এই নেতৃত্ব আমাদের ধরে রাখতে হবে। প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোর আমাদের ওপর প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। তাদের প্রত্যাশার বিপরীতে আমাদের ডেলিভার কী হবে- সেসব বিষয়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কৌশল নির্ধারণ করছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ১০ বা ১৫ বছরে আমরা কী করতে চাই- সে বিষয়ে পরিকল্পনা করছি। আমরা এখন নন-অ্যালাইন পলিসি নিয়ে চলছি। আগামীতে আমরা আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোর প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করব। এর পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা আমাদের উন্নত রাষ্ট্রের যে স্বপ্ন সেটা বাস্তবায়ন করে ফেলব। এগুলো করার জন্য আমাদের যেসব নতুন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, সেসব কৌশল নির্ধারণ করছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আরও বলেন, ‘দেশের স্বার্থে ইকোনমি ডিপ্লোমেসি এবং পাবলিক ডিপ্লোমেসি আমার নিজের উদ্যোগে চালু করেছি। কিন্তু আমাদের আরও অনেক ইস্যু আছে। যেমন- সমুদ্র, ডি-৮, জলবায়ুসহ সব বিষয়ে আমরা আরও কীভাবে অগ্রসর হব- এসব বিষয়ে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে কৌশল নির্ধারণ করছি।’
তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের নিয়ে করা প্রথম বৈঠকে তেমন কোনো পরামর্শ আসেনি। তবে আমরা এই বৈঠক ধারাবাহিকভাবে করব। আমরা চাই বিশেষজ্ঞদের যে বুদ্ধি আছে সেটা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন, যাতে দেশের জন্য কার্যকর কৌশল নির্ধারণ করতে পারি। আমরা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ছোট ছোট গ্রুপে বসেও তাদের কাছ থেকে বুদ্ধি নেব।’
এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০১৪-১৫ সাল থেকে বিশ্ব বলা শুরু করল যে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। যা আগে বলা হতো না। এভাবেই বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বৈশ্বিক রাজনৈতিক পটে আবির্ভূত হচ্ছে। শক্তি এবং ভূ-কৌশলগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক অঙ্গনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। বাংলাদেশের অগ্রাধিকার হচ্ছে শান্তি, প্রগতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা। আমাদের সক্ষমতা আরও বাড়তে হবে, যাতে বিদেশি লোকজন আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে আসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে, তার মধ্যে প্রথমেই আসবে শিফটিং ইকনোমি এবং নিউ অ্যালায়েন্সেস। পুরো এশিয়াতে আমাদের অবস্থান আছে, বিশ্বে অবস্থান আছে, আবার আমাদের দক্ষিণ এশিয়াও একটা অবস্থান আছে। দ্বিতীয়ত, বঙ্গেপসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থান হওয়ায় পরিবেশ বা জলবায়ু সংক্রান্ত প্রচুর ঝুঁকিও আমাদের রয়েছে। তৃতীয়ত, টেকনোলজিক্যাল অ্যাডভান্সেস। যেটা রিবেন্সিং দ্য পাওয়ার স্ট্রাকচার, বোথ ইকনোমিকলি অ্যান্ড পলিটিকেলি- ওই জায়গাতে আমরা কেমন আছি, তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। সোসাইটিকে বাদ দিলে কিছুই হয় না। সেজন্য রাইজ অব পপুলেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিজমকে আমাদের গুরুত্ব দিতেই হবে। এটা নতুন ডায়নামিকস। সর্বশেষ বে অব বেঙ্গলের একটা জিও ইকনোমিকস এবং জিও পলিটিকস দাঁড়িয়েছে। সেখানেও আমাদের সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে।’
মো. শহীদুল হক বলেন, ‘মিডল পাওয়ার হিসেবে কীভাবে আমরা আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে পলিটিকস করব- এটা নির্ধারণ করতে হবে। এটা শুধু নির্ধারণ করলেই হবে না, যারা প্লেয়ার তাদের মাইন্ড সেট চেঞ্জ করতে হবে। কারণ যে ধারণার ওপর ভিত্তি করে আমরা এতদিন কূটনীতি করেছি তার অনেক কিছুই ভেঙে পড়েছে। এটা নানা কারণে ঘটেছে। আমাদের নিজেদের উন্নয়নের কারণে যেমন ভেঙেছে, পৃথিবীর উন্নয়নের কারণেও ভেঙেছে। তাই আগের ধারণা থেকে সরে আসতে হবে এবং সিস্টেমেটিক উপায়ে উপরে উঠতে হবে।’
শহীদুল হক মনে করেন যে, বাংলাদেশের এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সময় এসেছে একটা জিও স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করার, যা সবাই মিলে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করতে হবে।
সারাবাংলা/জেআইএল/পিটিএম