পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় নাসির-অমি ৫ দিনের রিমান্ডে
২৩ জুন ২০২১ ১৭:৩০
ঢাকা: অভিনেত্রী পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (২৩ জুন) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট রাজিব হাসান এ আদেশ দেন।
এর আগে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সাভার থানার ইন্সপেক্টর কামাল হোসেন আসামিদের আদালতে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক এ আদেশ দেন।
এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ জামিন বাতিল চেয়ে রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ রিমান্ডের আদেশ দেন।
এদিন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মেজবাহ উদ্দিন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি শুনানিতে বলেন, পরীমনি প্রথম শ্রেণির একজন অভিনেত্রী (নায়িকা)। গত ৯ জুন তাকে এই দুই আসামিসহ অন্যরা মারধর করে। পরিশেষে তাকে মদ পান করায়। কেন মদ পান করালো, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ছিল কি না জানার জন্য রিমান্ডের প্রয়োজন।
এরপর ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর শেখ হেমায়েত হোসেন রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, এজাহারে এই দুইজনের নাম আছে। ঘটনার সঙ্গে আরও অজ্ঞাতনামারা জড়িত আছে। তাদের গ্রেফতারের লক্ষে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। আর আসামিরা এ অপরাধ থেকে মুক্তি পেলে সমাজে এ ধরনের অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। সমাজকে এ ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত করতে তাদের বিচার হওয়া জরুরী।
সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্তি পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল বলেন, সেলিব্রেটি না হয়ে পরীমনি একজন সাধারণ নারী হিসেবে ন্যায়বিচার পাবে না। মামলার দিকে দেশ, জাতি তাকিয়ে আছে। তাকে যখন সেলিব্রেটি বলা হলো তখন হু হা করার কি আছে। আশা করবো, পুলিশ যে রিমান্ড আবেদন করেছে তা আদালত মঞ্জুর করবেন।
অপরদিকে নাসির উদ্দিন ও অমির পক্ষে ঢাকা বারের সভাপতি আব্দুল বাতেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মামুনসহ কয়েকজন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানি করেন।
শুনানিতে আসামির আইনজীবীরা বলেন, সেলিব্রেটি হলেই আমাকে রাত ১২ টার পর ক্লাবে যেতে হবে এমন প্রশ্ন রাখেন মিজানুর রহমান মামুন। এরকম হলে তো আরও অনেক কিছুই হতে পারে। ধর্ষণ বা হত্যাচেষ্টার মামলা হলে তো ডিএনএ, ফরেনসিক টেস্ট করা দরকার। আসামিদের সিমটোম নিক তারা চেষ্টা করেছেন কি না। তাছাড়া আজ যারা আসামি তারা কি কম সেলিব্রেটি। পরীমনি সেলিব্রেটি ভালো কথা, উনার জায়গায় উনি থাকুক। আমরা (আসামিরা) মানকের চিপায় পড়ে গেছি। মিডিয়া ট্রায়াল। এর রেজাল্ট কি হবে আমরা জানি। কয়েকদিন আগে বনানীর একটি ক্লাবে গিয়ে ভাংচুর করেছেন পরীমনি। সেলিব্রেটি হয়ে অন্যদের ভিকটিমাইজড করছেন পরীমনি। নাসির উদ্দিন এবং অমিও ভিকটিমাইজড।
আবদুল বাতেন বলেন, পরীমনি বাসা থেকে রওনা দিছেন স্বেচ্ছায়। ১২টার পর তো ক্লাব বন্ধ হয়ে যায়। আর নাসির কেন তাকে রেপ করতে যাবেন। এজাহারে অমির বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য নাই। কেন তাকে রিমান্ডে পাঠাবেন। সাবানা, ববিতা, রোজিনাও নায়িকা ছিলেন। তাদের আমরা শ্রদ্ধা করি। তারা কোনো ক্লাবে যাননি। তিনি কেন রাত ১২ টার পর ক্লাবে যাবেন। আসামিরা ভালো মানুষ। বিপদে পড়ে গেছেন। হয়রানি করতে মামলা দেওয়া হয়েছে। রিমান্ড বাতিল চেয়ে তাদের জামিন চাচ্ছি।
শুনানি শেষে আসামি নাসির বিচারকের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার বয়স ৬৫। এজমাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছি। গত ৯ দিন ডিবির রিমান্ডে ছিলাম। এখন আবার আমাকে রিমান্ডে পাঠানো হলে মনে হয় না আর বাঁচবো। আমি ছাত্র থেকে রাজনীতি করে আসছি। আমি একজন সমাজসেবক। তাছাড়া আমি উত্তরা ক্লাবের সভাপতি ছিলাম। সাভার বোট ক্লাবের সদস্য। বোট ক্লাব ভবন নির্মাণে আমিসহ কয়েকজন অবদান রেখেছি। এর আগে আমার বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ নাই। আমি কোনো ঝামেলায় ছিলাম না। দয়া করে রিমান্ড না দিয়ে আমাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।
গত ১৫ জুন নাসির-অমির বিরুদ্ধে মাদক মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিলেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। মাদক মামলায় লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধাকে জিজ্ঞেসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ১৪ জুন দুপুরে রাজধানীর উত্তরা ১-নম্বর সেক্টরের ১২-নম্বর রোডের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, জনপ্রিয় নায়িকা পরীমনির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের সময় ওই বাসায় অভিযানকালে বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত ১৪ জুন বেলা ১২টার দিকে সাভার থানায় নাসির উদ্দিনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমনি। এতে নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে আরও চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে পরীমনি বলেন, গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, অমি ও বনিসহ দুটি গাড়িতে উত্তরার দিকে যান। পথিমধ্যে অমি বলে বেড়িবাঁধে ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডে তার ২ মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো আমরা ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে গাড়ি দাঁড় করাই। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। তখন অমি ভেতরে যায় এবং অমি অনুরোধ করে এখানের পরিবেশ অনেক সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পারো।
এজাহারে পরীমনি আরও উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যেই আমার ছোট বোন বনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলে আমরা ঢাকা বোট ক্লাবে প্রবেশ করে বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করি। টয়লেট হতে বের হতেই ১নং বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদেরকে ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ ১ নম্বর আসামি মদ্যপান করার জন্য জোর করেন। আমি মদ্যপান করতে না চাইলে ১ নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখের মধ্যে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এতে আমার সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই। ১ নম্বর আসামি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেন ও আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ১ নম্বর আসামি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারেন। তখন আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ১ নম্বর আসামিকে বাধা দিতে চাইলে তাকেও মারধর করে নীলাফোলা জখম করে। আমি প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিতে গেলে আমার ব্যবহৃত ফোনটি টান মেরে ফেলে দেয়। আবারও ফোনটি উঠিয়ে কল দিতে চাইলে আবারও ফোনটি টেনে ফেলে দেয়। আসামি অমিসহ অজ্ঞাতনামা চারজন আসামি ১ নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহায়তা করে।
সারাবাংলা/এআই/এসএসএ