জামিন জালিয়াতি: ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী গ্রেফতার
২৩ জুন ২০২১ ২১:০৮
ঢাকা: বগুড়ায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ভুয়া আগাম জামিন আদেশ তৈরিতে জড়িত থাকার দায়ে ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী রাজু আহমেদ রাজীবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (২৩ জুন) পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা আইনজীবী রাজুকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে।
আইনজীবী রাজুকে গ্রেফতারের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম মিতি।
এদিকে আজ হাইকোর্টের তলব আদেশে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ইন্সপেক্টর সুলতান হোসেন আসামিদের গ্রেফতারে তাদের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাতে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হন।
তদন্ত কর্মকর্তা সুলতান হোসেন আদালতকে জানান, এ মামলায় আগের গ্রেফতার আইনজীবীর সহকারী সোহাগের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আরও অনেকের নাম উঠে এসেছে। তখন আদালত তাদেরকেও গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। পরে এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১২ জুলাই দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। আজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম মিতি।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম মিতি বলেন, হাইকোর্টে শুনানির পর আজ ঢাকা থেকে আইনজীবী রাজুকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া আইনজীবীকে আগামীকাল (২৪ জুন) আদালতে হাজির করা হবে।
বগুড়ায় মোটর মালিক গ্রুপে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মামলায় ভুয়া আগাম জামিন আদেশ তৈরির ঘটনায় সিআইডির তদন্তে চারজনের নাম উঠে আসে। তারা হলেন, ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী রাজু আহমেদ রাজীব, বগুড়া আদালতের আইনজীবী তানজীম আলম ইসলাম, ঢাকা জজ কোর্টের কম্পিউটার অপারেটর মাসুদ রানা ও ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবীর সহকারী মো. সোহাগ। পরে কারাগারে থাকা সোহাগ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এর আগে হাইকোর্টের নির্দেশে গত ৯ জুন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে আদালত দুই আইনজীবী ও কম্পিউটার অপারেটর মাসুদ রানাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। আসামিদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের জাল আদেশ দাখিল করে বগুড়ার আদালত থেকে জামিন নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনায় হাইকোর্ট গত ২৪ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে যুবলীগের সহসভাপতি (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) ও কাউন্সিলর মো. আমিনুল ইসলামসহ ৩০ আসামিকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। ওই আদেশ বাস্তবায়ন করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়াতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহনের ছোটভাই মশিউল আলম বাদী হয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি বগুড়া থানায় মামলা করেন। মামলায় যুবলীগের সহসভাপতি মো. আমিনুল ইসলামসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করেন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে আমিনুল ইসলামসহ ৩০ জনের জামিন নেওয়ার একটি আদেশনামা (জামিন আদেশ) তৈরি করা হয়।
জাল আদেশনামায় দেখানো হয়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে আসামিদের ছয় সপ্তাহের জামিন দেওয়া হয়েছে। এই জামিন শেষে তাদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরে এই ভুয়া আদেশের তথ্য সংশ্লিষ্ট আদালতের নজরে আসে। এরপর এ বিষয়ে জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আরজি জানান অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এসএসএ