বিদেশগামীদের ভ্যাকসিন জটিলতা মেটাতে সময় লাগবে আরও দেড় মাস
২৪ জুন ২০২১ ২১:৫৯
ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি পরিস্থিতিতে দেশে এসে আটকা পড়েছেন অনেক প্রবাসী কর্মী। ভ্যাকসিন দেওয়া না থাকলে প্রায় কোনো দেশই আর ঢুকতে দিচ্ছে না এসব কর্মীকে। আর এ ক্ষেত্রে দেশগুলো নির্ধারিত কিছু কোম্পানির ভ্যাকসিনকেই গ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে চীনের যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হচ্ছে, তা অনেক দেশই অনুমোদন দেয়নি। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ এই ভ্যাকসিনকে গ্রহণযোগ্য বলে স্বীকৃতি না দেওয়ায় দেশে আটকা পড়া প্রবাসীরা বিপাকে পড়েছেন। শুধু তাই নয়, বয়স ৪০ বছরের কম হওয়ায় অনেক প্রবাসী ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য নিবন্ধনই করতে পারেননি।
বেশিরভাগ দেশই ফাইজারের ভ্যাকসিনকে গ্রহণযোগ্য স্বীকৃতি দেওয়ায় এ পরিস্থিতিতে আটকা পড়া প্রবাসীরা তাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে দেশে থাকা এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন। এ দাবি জানিয়ে তারা সংবাদ সম্মেলন থেকে শুরু করে মানববন্ধন-প্রতিবাদ সমাবেশ পর্যন্ত করেছেন। তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রবাসীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা এই জটিলতা সহসাই কাটছে না। সরকার বলছে, এই জটিলতা সমাধানে পররাষ্ট্র এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আগামী দেড় মাসের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
রিক্রুটিং এজেন্সিজ ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী কাজের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যায়। এই সময়ে কমপক্ষে ৫০ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক সৌদি আরব যাওয়ার যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব কর্মী সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন বা যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন, তাদের ভ্যাকসিন ইস্যুতে প্রচণ্ড ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কেননা এখন আমাদের দেশে চীনের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, যা আরব দেশগুলো এখনো অনুমোদন দেয়নি। ফলে বাংলাদেশি কর্মীরা ভ্যাকসিন নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গিয়ে কোনো সুফল পাচ্ছেন না। তাদের সেখানে গিয়ে আবার কোয়ারেনটাইন করতে হচ্ছে এবং ওইসব দেশে অনুমোদিত ভ্যাকসিন নতুন করে নিতে হচ্ছে। এতে কর্মীরা আর্থিকসহ মানসিক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
ভোগান্তি লাঘবে জনসন অ্যান্ড জনসনের একডোজের ভ্যাকসিন সবচেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে— এমন মন্তব্য করে টিপু সুলতান বলেন, জনসনের একডোজের ভ্যাকসিন আরব দেশগুলো অনুমোদন দিয়েছে। তাই বাংলাদেশি কর্মীদের যদি জনসনের একডোজ ভ্যাকসিন দিয়ে বিদেশে পাঠানো যায়, তাদের ভোগান্তি লাঘব হবে। একইভাবে সরকারও আর্থিকভাবে সুবিধা পাবে।
বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মো. নজরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, বিদেশে যাওয়ার আগে বাংলাদেশি কর্মীরা কোন ভ্যাকসিন নিয়ে যাচ্ছে, সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যূ। কেননা বাংলাদেশি কর্মীরা যে দেশে যাচ্ছেন, ওই দেশে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া ভ্যাকসিন নিয়ে যাওয়া উচিত। জরুরি ভিত্তিতে এই বিষয়ের সমাধান প্রয়োজন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) ওয়েজ অর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সৌদি প্রবাসীদের হোটেল কোয়ারেনটাইন খরচ বাবদ বিশেষ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার এক অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, আমার বিশ্বাস, আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। চীনের ভ্যাকসিন সৌদি আরব গ্রহণ করতে রাজি না। আমরা এর মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। এটি নিয়ে সৌদি আরবে আমাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপ করেছি, গতকালও কথা বলেছি। চেষ্টা করছি সৌদি আরব যেন চীনের ভ্যাকসিন গ্রহণ করে। এটা তো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনপ্রাপ্ত।
মন্ত্রী ইমরান আহমেদ নিজেও এ পরিস্থিতিতে জনসন অ্যান্ড জনসনের একডোজের ভ্যাকসিনকে সমাধান মনে করছেন। তিনি বলেন, এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের ভ্যাকসিন। তাই আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ভ্যাকসিন আনার জন্য বলেছি।
এসব বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো বলছে, আগামী ২ মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত সব সমস্যা সমাধান হবে বলে মন্ত্রণালয় আশা করছে। এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ভ্যাকসিন আসবে। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে যে ভ্যাকসিন কেনা আছে, সেই ভ্যাকসিনও আসার কথা রয়েছে। একইসঙ্গে কোভ্যাক্সের ভ্যাকসিন সহায়তাও এই সময়ের মধ্যে পাওয়া যাবে। ফলে ভ্যাকসিন নিয়ে আর সংকট থাকবে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র আরও বলছে, এর পাশাপাশি জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। এই সময়ের মধ্যে এই ভ্যাকসিনও হাতে পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি চীনের ভ্যাকসিনের গ্রহণযোগ্যতা অনুমোদনের জন্য সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে আলাপও শুরু করেছেন কূটনীতিকরা।
প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আশাবাদ অনুযায়ী ভ্যাকসিন সংকটের সমাধান না মিললে দেশে এসে আটকা পড়া প্রবাসীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে বেগ পেতে হবে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এসব কর্মী না ঢুকতে পারলে তা বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। কারণ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রমবাজারের প্রধান গন্তব্যই হলো মধ্যপ্রাচ্য। এর মধ্যে আবার এককভাবে শীর্ষস্থানে রয়েছে সৌদি আরব। এছাড়া ওমান, সিঙ্গাপুর, জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।
বিএমইটি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে মোট ১ লাখ ৯৫ হাজার ২৪০ জন বাংলাদেশি কর্মী কাজের উদ্দেশ্যে একাধিক দেশে গেছেন। এর ৭৪ শতাংশই গেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে।
প্রবাসী বাংলাদেশি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজার