Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৪ জুলাই ‘চমক’ দেবেন বিদিশা, আসতে পারে নতুন জাপার ঘোষণা

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ জুন ২০২১ ২৩:৪৫

ফাইল ছবি: বিদিশা সিদ্দিক

ঢাকা: রাজনীতির মাঠে নতুন ‘চমক’ নিয়ে হাজির হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রায়ত হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক। প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠান করে জানিয়েছেন, এরশাদের দুই সন্তান শাদ এরশাদ ও এরিক এরশাদকে নিয়ে সারাদেশ চষে বেড়াবেন। আর সারাবাংলাকে বিদিশা জানিয়েছেন, রাজনীতি নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন আগামী ১৪ জুলাই। সেদিন তিনি দেশবাসীকে ‘চমক’ উপহার দেবেন। এ বিষয়ে এখনই স্পষ্ট করে মুখ খুলতে রাজি নন তিনি।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় পার্টির বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেই ‘চমক’ হতে পারে জাতীয় পার্টির পুনর্গঠন। ১৪ জুলাই এরশাদের বাসভবন বনানীর প্রেসিডেন্ট পার্কে আনুষ্ঠানিকভাবে রওশন এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হতে পারে। বর্তমানে জাপা’র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা এরশাদের ভাই গোলাম মোহাম্মদ কাদের তথা জি এম কাদেরকে বহিষ্কার করা হতে পারে!

দলের আরেকটি সূত্র বলছে, এরশাদ তার জীবদ্দশায় বিভিন্ন ইসলামিক দলসহ অন্যান্য নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল নিয়ে একটি জোট গঠন করেছিলেন। সেই জোটের দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে বিদিশার। এছাড়া এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের কর্মকর্তারাও বিদিশার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছেন। এর আগে জাতীয় পার্টি থেকে বিভিন্ন সময় বহিষ্কার হওয়া এবং মূল্যায়িত না হওয়ার অভিযোগে দূরে সরে রয়েছেন— এমন অনেক নেতাও বিদিশার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলেছেন। সবকিছু মিলিয়ে তারা বিদিশাকে সামনে রেখে রওশন এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান পদে দেখতে কাজ করে চলেছেন। সে ঘোষণাই আসতে পারে ১৪ জুলাই।

আরও পড়ুন- শাদ-এরিককে নিয়ে লাঙ্গল দিয়ে সারাদেশ চাষ করব: বিদিশা

এসব বিষয় নিয়ে বিদিশা সিদ্দীকির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৪ জুলাই নতুন কিছু চমক থাকবে। ওই দিন প্রেসিডেন্ট পার্কে আসুন, সব জানতে পারবেন, শুনতে পারবেন। আপাতত যেটুকু বলা প্রয়োজন, সেটি প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠানে বলেছি। চমক নিয়ে এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না।’

বিদিশার এমন মন্তব্যের পরও অন্তত কিছু ইঙ্গিত দেওয়ার অনুরোধ করেন এই প্রতিবেদক। এসময় তিনি বলেন, ‘এরশাদ সাহেবের সময় গঠিত জোটের দলগুলো জি এম কাদেরকে প্রত্যাখ্যান করে আমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আমার সঙ্গে জাতীয় পার্টি অনেক সিনিয়র নেতাও রয়েছেন। সময় হলে তারাও প্রকাশ্যে আমার সঙ্গে চলে আসবেন।’ এই জোটের কার্যক্রম আরও আগেই শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

রাজনীতির মাঠে কোমর বেঁধে নামার ঘোষণা এর আগে বিদিশা প্রেস ক্লাবের অনুষ্ঠানেই দিয়েছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন আমার কাছে হাজার হাজার ফোন আসে। যারা জাতীয় পার্টিকে ভালোবাসেন, যারা এরশাদ সাহেবকে ভালোবাসেন, শুধু তাদের হাহাকার। তাদের একটাই কথা— ম্যাডাম, আপনি কবে আসবেন? আপনি জাতীয় পার্টিতে আসেন, আমরা আপনার সঙ্গে আছি। আমরা এরশাদ সাহেবের সৈনিক। জাতীয় পার্টিকে বাঁচান আপনি।’

তাদের ডাকেই সাড়া দিয়ে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হওয়ার ঘোষণা দেন বিদিশা। বলেন, ‘এই প্রেস ক্লাব থেকে আমি রাজপথে চলার ঘোষণা দিচ্ছি। আজ থেকে আমি রাজপথে চলব। আমার যাত্রা শুরু হলো প্রেস ক্লাব দিয়ে।’

প্রেস ক্লাবের অনুষ্ঠান থেকে রাজনীতির মাঠে নামার ঘোষণা দেন বিদিশা

বিদিশার রাজনীতির মাঠে নামার বিষয়ে জানতে চাইলে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমি মন্তব্য করতে চাই না। রাজনৈতিক বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে আমার প্রেসউইংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।’

পরে অবশ্য জি এম কাদের বলেন, ‘কে রাজনৈতিক দল করল বা না করল, সেটি দেখার বিষয় না। বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষ আছে। তাদের প্রত্যেকেরই রাজনৈতিক দল করার অধিকার আছে। অনেক রাজনৈতিক দলও তো আছে। এসব ব্যক্তিগত বিষয়। রাজনৈতিক দল করতে তো কোনো বাধা নেই। তবে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকতে হবে।’

বিদিশার কথামতো ১৪ এপ্রিলের ‘চমক’ জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে অন্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি জাপা চেয়ারম্যান।

এর আগে, এরশাদ তার জীবদ্দশায় যে ‘বিশাল’ রাজনৈতিক জোট করেছিলেন, তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) জোটের ২১টি দল। এই দলগুলো হলো— বাংলাদেশ লেবার পার্টি (একাংশ), গণতান্ত্রিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, আমজনতা পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ইসলামি ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ প্রতিবাদী জনতা পার্টি, বাংলাদেশ তফসিল ফেডারেশন, বাংলাদেশ সচেতন হিন্দু পার্টি, ইউনাইটেড মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ গণজাগরণ পার্টি, বাংলাদেশ গ্রামীণ পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামিক গণতান্ত্রিক লীগ, তৃণমূল লীগ, গণ-অধিকার পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল মাইনরিটি পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ জনতা ফ্রন্ট, জাতীয় হিন্দু লীগ ও বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি।

এছাড়া ইসলামী মহাজোটের ৩৩টি দলও ছিল ওই জোটে। দলগুলো হলো— জাতীয় ইসলামী জোট, ওলামা মাশায়েখ সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফেডারেশন, জমিয়তে মুসলেমিন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইউনাইটেড ইসলামিক লীগ, শরিয়া আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জনতা পার্টি, খেলাফত সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ ইসলামিক জনকল্যাণ পার্টি, জাতীয় শরিয়া আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী গণ-আন্দোলন, জাতীয় ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় ইসলামিক মুভমেন্ট, ইসলামি মূল্যবোধ সংরক্ষণ পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, ন্যাপ ভাসানী, বাংলাদেশ ইসলামী আক্বীদা সংরক্ষণ আন্দোলন, খেদমতে খালক পার্টি, বাংলাদেশ ইত্তেহাদুল মুসলেমিন, বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট বই পার্টি, হেফাজতে মুসলেমিন বাংলাদেশ, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত বাস্তবায়ন পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, মুসলিম জনতা পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফাতুল উম্মাহ, বাংলাদেশ আকিমুদ্বীন মজলিশ, ইসলামী আক্বীদা সংরক্ষণ পার্টি, ইউনাইটেড ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামি পার্টি, ইসলামী সমাজকল্যাণ আন্দোলন, লিবারেল পার্টি বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

জাতীয় পার্টি জি এম কাদের বিদিশা সিদ্দিক রওশন এরশাদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর