পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় নাসির-অমি’র জামিন
২৯ জুন ২০২১ ১৫:৪১
ঢাকা: চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা অভিযোগে গ্রেফতার ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির পাঁচ হাজার টাকার মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৯ জুন) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট মোছা. শাহাজাদী তাহমিদা এ আদেশ দেন।
পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সাভার থানার ইন্সপেক্টর কামাল হোসেন আসামিদের আদালত হাজির করেন। এরপর তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তিনি।
এদিন আসামিপক্ষে এ এইস এমরুল কাউসার, আমানুল করীম প্রমুখ তাদের জামিনের আবেদন করেন। অন্যদিকে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর শেখ হেমায়েত হোসেন, সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্তি পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল এ জামিনের বিরোধিতা করেন।
শুনানির শুরুতেই সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্তি পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবীর বাবুল আসামিদের জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘মামলাটি দেশবিদেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রপক্ষ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চায়। মামলার বিষয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা যে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য নয়, তিনি তা উহ্য রেখেছেন। আসামিরা প্রভাবশালী। জামিনে গেলে মামলার উপরে প্রভাব পড়বে।’
এরপর আসামি পক্ষের আইনজীবী এ এইস এমরুল কাউসার শুনানিতে বলেন, ‘পরীমনির পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ কাজটি করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে আসামিরা জড়িত নন। ওই ক্লাবে রাত তিনটা পর্যন্ত কি করলেন সেই ব্যাখ্যা এজাহারে নেই। তিনি মদ খেয়েছেন টেলিভিশনের ভিডিও ফুটেজে আছে। আমার আসামি নাসির একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক। উনি উত্তরা ক্লাবে কয়েকবার নির্বাচিত হয়েছে। ৬৫ বছরের একজন বয়স্ক লোক। উনার দ্বারা এই কাজ করা সম্ভব নয়। ঘটনার চারদিন পর পরীমনির মামলা রুজু হয়েছে। উনি আগে মিডিয়ার অ্যাডভান্টেজ নিয়ে মামলা করেছেন। পরে মিডিয়া সেই ভুল বুঝতে পেরেছে। আসামি অসুস্থ মানুষ। দুই বারে মোট ১২ দিন রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। নতুন তথ্য বের হয়নি। আসামি জামিন পেলে পালিয়ে যাবেন না।’
আসামি অমির পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘আসামি অমি পরীমনিকে বলেছিল আমি এ ক্লাবে যাচ্ছি তুমি নামতে পার- এখানে কোনো প্রকার জোর করা হয়নি। তার বোনের কথা বলে সে নিজেই গেছে। ভিকটিমের শরীরের কোনো স্পর্শকাতর জায়গাও টাপ করেনি। পরীমনিকে আসামি কোন আঘাত করেনি। অমি তাকে মদ পান করায়নি। এমন কথাও এজাহারে উল্লেখ নেই। উনি নিজেই মদ খেয়ে অপকর্মের চেষ্টা করেছেন। আসামি একজন ব্যবসায়ী। উনার ডায়বেটিস, হাঁটতে পারে না, অ্যাজম্যাও আছে। উনি অসুস্থ। তাই যেকোনো শর্তে তার জামিনের প্রার্থনা করছি।’
এরপর ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর শেখ হেমায়েত হোসেন বলেন, ‘আসামিরা জামিনে বাহিরে থাকলে মামলার তদন্তে ক্ষতি হতে পারে। এজন্য তাদের জামিন না মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।’ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মেজবাহ উদ্দিন শুনানির মাঝে বলেন, ‘মামলার তদন্ত স্বার্থে প্রভাব মুক্ত রাখতে তাদের জেলহাজতে রাখা দরকার।’
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আসামিদের পাঁচ হাজার টাকার মুচলেকায় পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিনের আদেশ দেন।
এর আগে গত ২৩ জুন ঢাকার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। এছাড়া গত ১৫ জুন নাসির-অমির বিরুদ্ধে মাদক মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিলেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। মাদক মামলায়, লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধাকে জিজ্ঞেসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ১৪ জুন দুপুরে রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরের-১২ নম্বর রোডের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, জনপ্রিয় নায়িকা পরীমনির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের সময় ওই বাসায় অভিযানকালে বিদেশি মদও উদ্ধার করা হয়।
এর আগে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত ১৪ জুন বেলা ১২টার দিকে সাভার থানায় নাসির উদ্দিনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন পরীমনি। এতে নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে আরও চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, অমি ও বনিসহ দুটি গাড়িতে উত্তরার দিকে যান। এজাহারে পরী বলেন, ‘পথিমধ্যে অমি বলে বেড়িবাঁধে ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডে তার ২ মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামতো আমরা ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে গাড়ি দাঁড় করাই। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। তখন অমি ভেতরে যায় এবং অমি অনুরোধ করে এখানের পরিবেশ অনেক সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পার।’
এজাহারে পরী আরও বলে, ‘ইতোমধ্যেই আমার ছোট বোন বনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে চাইলে আমরা ঢাকা বোট ক্লাবে প্রবেশ করে বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করি। টয়লেট হতে বের হতেই ১ নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদেরকে ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ ১ নম্বর আসামি মদ্যপান করার জন্য জোর করেন। আমি মদ্যপান করতে না চাইলে ১ নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখের মধ্যে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এতে আমার সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই। ১ নম্বর আসামি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেন ও আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ১ নম্বর আসামি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারেন। তখন আমার কস্টিউম ডিজাইনার জিমি ১ নম্বর আসামিকে বাধা দিতে চাইলে তাকেও মারধর করে নীলাফোলা জখম করে। আমি প্রথমে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিতে গেলে আমার ব্যবহৃত ফোনটি টান মেরে ফেলে দেয়। পুনরায় ফোনটি উঠিয়ে কল দিতে চাইলে আবারও ফোনটি টেনে ফেলে দেয়। আসামি (অমি) সহ অজ্ঞাতনামা চারজন আসামি ১ নম্বর আসামিকে ঘটনা ঘটাতে সহায়তা করে।
সারাবাংলা/এআই/পিটিএম