কোনো জঙ্গি হামলায় আইএস’র অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি: সিটিটিসি
১ জুলাই ২০২১ ১৭:৩৮
ঢাকা: গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও রেস্টুরেন্ট। ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই রাত ৮ টা ৪০ মিনিটের দিকে পাঁচ জনের অস্ত্রধারী একটি দল রেস্টুরেন্টটিতে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে দেশি-বিদেশি ২০ জন নাগরিককে হত্যা করে তারা। পরে ভোরের দিকে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো বাহিনী ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ চালায়। অভিযানে পাঁচ জঙ্গি মারা যায়।
ওই ভয়াবহ হামলা এবং পরবর্তীতে আরও ২৩টি অপারেশনের বিচার বিশ্লেষণ ও আলামত উদ্ধার করে যা বোঝা গেছে, পুলিশ কোথাও আইএসর অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। বাংলাদেশে যেসব হামলা ও অভিযানের ঘটনা ঘটেছে তার প্রতিটিই দেশীয় জঙ্গি সংগঠন জেএমবির পরবর্তী ভার্সন নব্য জেএমবির সদস্যরা জড়িত ছিল।
বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে হলি আর্টিজানে হামলার পাঁচ বছর পুর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা মোট ২০ জনকে হত্যা করে। ২০ জনের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি (নয় জন ইতালীয়ান, সাত জন জাপানিজ এবং একজন ভারতীয়)। অবশিষ্ট তিন জনের মধ্যে বাংলাদেশী-আমেরিকান নাগরিক একজন এবং দুজন বাংলাদেশী। সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্বি ৩২ বিদেশি নাগরিককেও উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে গিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাদের জীবন উৎসর্গ করেন।’
হামলার ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা হয়। মামলার তদন্তে মোট ২১ জন আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। যাদের মধ্যে ১৩ আসামি বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত হন। এর মধ্যে পাঁচ জন ঘটনাস্থলে অপারেশন থান্ডারবোল্ট-এ নিহত হয়। এরা হলেন- মোবাশ্বের (১৯), রোহান ইবনে ইমতিয়াজ (২০), নিবরাস ইসলাম (২৫), মো. খায়রুল ইসলাম পায়েল (২২) এবং মো. শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল (২৬)।
হলি আর্টিজান পরবর্তী সময়ে পুলিশি অভিযানে নিহত অপর আট জন হলেন- তামিম আহমেদ চৌধুরী (৩৩), মুরুল ইসলাম মান (২৩), সরোয়ার জাহান মানিক (৩৫), তানভীর কাদেরী (৪০), বাশারুজ্জামান চকলেট (৩২), মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম (৩৭), মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান (৩২), রায়হানুল কি রায়হান তারেক (২০)।
আর গ্রেফতার হওয়া আট আসামির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আদালতে চার্জ গঠন করেন এবং ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। আর ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর আদালত রায় ঘোষণা করেন। যেখানে আট আসামির মধ্যে সাত জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং আসামি মো. মিজানুর রহমানকে (বড় মিজান) (৬০) খালাস দেওয়া হয়। বর্তমানে জেল কর্তৃপক্ষের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনাল থেকে হাইকোর্ট বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. শরিফুল ইসলাম রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘হলি আর্টিজানের হামলার পর বিগত পাঁচ বছরে সিটিটিসি একের পর এক সফল অভিযানের মাধ্যমে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডকে কঠোরভাবে প্রতিহত করেছে। কল্যাণপুরে অপারেশন সার্ম-২৬, নারায়ণগঞ্জে অপারেশন হিট স্টর্ম-২৭, গাজীপুরের পাতারটেকে অপারেশন স্পেট-৮সহ সিটিটিসি কর্তৃক ২৩ টি হাই-রিস্ক অপারেশনে ৬৩ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। সিটিটিসি কর্তৃক তদন্ত সম্পন্ন করা দুটি মামলায় (হলি আর্টিজান এবং অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড) রায় হয়েছে। যেখানে ১২ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সিটিটিসি আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছিল। যা চলমান রয়েছে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়, পুলিশ সদস্য, কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষী, চৌকিদার-দফাদার, জনপ্রতিনিধি, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, এনজিও সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ, উগ্রবাদী/সন্ত্রাসী (জামিনপ্রাপ্ত), তাদের বাবা-মা ও পরিবারের সদস্য, সন্ত্রাসী ঘটনার ভূক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্য এবং বিভিন্ন অংশীজনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত কর্মশালা। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এ পর্যন্ত এ ধরনের ১৭৪টি আলোচনা সভা/কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে ৩৯ হাজার ৪০০ জনকে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। জঙ্গি সক্ষমতা নেই বললেই চলে। আদালতে সাক্ষ্য প্রমাণ সাপেক্ষেই তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।’
বিদেশে বসে দুটি সংগঠন জঙ্গিবাদী কার্যক্রম চালাচ্ছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘দুটি সংগঠন বলব না। তারা দুজন ব্যক্তি। তারা দেশের বাইরে অবস্থান করলেও করতে পারে। আমাদের কাছে দুজন ব্যক্তির তথ্য রয়েছে। এছাড়া আমরা জঙ্গি সংগঠনগুলোর শীর্ষস্থানীয় অধিকাংশ সদস্যকে গ্রেফতার করেছি। দুয়েকজনকে গ্রেফতারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’
জেএমবির শীর্ষ কয়েকজন সদস্যসহ জুনুদ আল তাওহীদ কানাডিয়ান তামিম। আরও কয়েকজন সদস্য মিলে নব্য জেএমবি গঠন করে। সংগঠনটিকে নিষিদ্ধের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অভিযানের কারণেই জঙ্গিরা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়েছি। সম্প্রতি তারা যে নাশকতা করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম