বিধিনিষেধ, বৃষ্টি, সাপ্তাহিক ছুটি— ঢাকার রাস্তা ফাঁকা
২ জুলাই ২০২১ ১৩:২৯
ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশের মতো রাজধানীতেও চলছে কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন। দিনটি শুক্রবার এমনিতেই সাপ্তাহিক ছুটির দিন, তার ওপর ভোর থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। সব মিলিয়ে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর চিত্র বলছে, সড়কগুলো মোটামুটি ফাঁকা। রাস্তায় মানুষজনের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এখানে-ওখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়ছে কেবল। রাস্তায় যানবাহনের উপস্থিতিও নগণ্য।
শুক্রবার (২ জুলাই) চাঁনখারপুল, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, টিএসসি, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কাকরাইল, নয়াপল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিলের বক চত্বর, তেজগাঁও, মহাখালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
শুক্রবার ভোর থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এমন বৃষ্টি হলে এমনিতেই রাজধানীর রাস্তাঘাট থাকে ফাঁকা। এর মধ্যেই বিধিনিষেধের প্রথম দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে তৎপরতা দেখিয়েছে, তার কারণেই মানুষ খুব একটা বের হয়নি— এমনটিই মনে করছেন রাজধানীবাসী।
গুলিস্তান, মতিঝিল, কাকরাইল, মালিবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় পরিবহন বলতে কেবল রিকশা। প্রাইভেট কারের সংখ্যা খুব সামান্য। কেউ কেউ সাইকেল নিয়ে চলছে। মোটরসাইকেলও খুব একটা চোখে পড়েনি। এর মধ্যে যাদের রাস্তায় দেখা গেছে, তারা বেশিরভাগই বের হয়েছেন বাজার করার জন্য।
শান্তিনগর এলাকায় কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী লতিফুল ইসলামের সঙ্গে। বললেন, আমরা কেউ বিধিনিষেধের মধ্যে বের হচ্ছি না। কিন্তু বাসায় বাজার নেই। কঠোর বিধিনিষেধের আগেই বাজার করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বাজারে অনেক ভিড় শুনে আর যাইনি। গতকাল (বৃহস্পতিবার) বের হলে কী হবে না হবে, সেই চিন্তা করে গতকালও বের হইনি। কিন্তু আজ আর বাজার না করলেই চলছিল না। তাই বের হয়েছি। এসে তো দেখলাম বাজারে অনেকেই আছেন।
মহাখালী-তেজগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এই এলাকায় যানবাহনের উপস্থিতি সামান্য বেশি। এসব যানবাহনের প্রায় সবই ব্যক্তিগত গাড়ি। মোটরসাইকেলের উপস্থিতিও রয়েছে কিছু। হেঁটে বা রিকশা নিয়ে যারা যাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগেরই গন্তব্য হাসপাতাল।
নাবিস্কো বাস স্ট্যান্ড এলাকার পাশেই নাখালপাড়া সকালের বাজারে গিয়ে দেখা গেল, বাজার অন্যান্য শুক্রবারের মতো জমজমাট না হলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি একেোরে কম নয়। তাতে সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ হচ্ছে না। ক্রেতা-বিক্রেতা দুয়েকজনের মুখে নেই মাস্কও। পূর্ব নাখালপাড়া ঢুকে রাস্তার ওপরেই মাছ ও মুরগি বিক্রেতাদেরও দেখা গেল। তাদের কাছ থেকেও দরদাম করে মাছ-মুরগি কিনছেন ক্রেতারা।
ছুটির দিন, বৃষ্টি আর সড়কে মানুষজনের উপস্থিতি কম বলেই হয়তো এদিন সড়কে পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে খুব একটা কড়াকড়ি চোখে পড়েনি। তবে পুলিশ বলছে, তারা সতর্ক অবস্থানেই রয়েছে। বিধিনিষেধ ভঙ্গ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরিফুল ইসলাম যেমন বললেন, বৃষ্টির জন্য এমনিতেই রাস্তায় লোকজন কম। গতকাল পুলিশের আটক-গ্রেফতারের জন্যও বোধহয় বিনা কারণে বের হওয়ার প্রবণতা কমেছে। তারপরও আমরা সতর্ক আছি। যারা আসছেন-যাচ্ছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে, আইএসপিআর জানিয়েছে, শুক্রবার সারাদিন রাজধানীর ২৪টি পয়েন্টে সেনাবাহিনীর ২৪টি টিম টহল দেবে। এসব টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন মেজর বা ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার একজন করে সেনা কর্মকর্তা।
এর আগে, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় ১ জুলাই থেকে সরকার সাত দিনের জন্য সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। সেই বিধিনিষেধের প্রতিপালন করতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দিনভর কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিনা কারণে বা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৪৯৭ জনকে আটক করে, এর মধ্যে গ্রেফতার করা হয় ২৫৮ জনকে। শাস্তি দেওয়া হয় ৭৮ জনকে।
এদিকে, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার ও মুদি দোনান সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়ে মার্কেট ও শপিং মল বন্ধ রাখতে বলা হয়ছে কঠোর বিধিনিষেধের নির্দেশনায়।
সারাবাংলা/এসজে/টিআর