Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আতঙ্কের কিছু নেই, রাজনীতি-রাষ্ট্র চালাচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃত্বই

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২ জুলাই ২০২১ ২২:৩১

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি (কোভিড-১৯) করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবা ও সরকারি কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের। তা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন রাজনীতিবিদরা। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) এবং রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিভিন্ন সময়েই বলে আসছেন, দেশ চালাচ্ছেন আমলারা। একই বিষয় নিয়ে সম্প্রতি জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ক্ষোভ জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্যও। তাদের বক্তব্যের সার কথা— রাজনীতি ও রাষ্ট্র এখন আর রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বে নেই। প্রশাসনিক কর্মকর্তা, তথা আমলাদের নেতৃত্বে চলছে সবকিছু।

বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যসহ নেতা এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও কিছু কিছু নেতার এমন মন্তব্য ও ক্ষোভ প্রসঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। সারাবাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপে তিনি বলছেন, একটি রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে চলতে গেলে এর বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন হয়। রাষ্ট্রের প্রতিটি বিভাগকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেভাবেই চলছে দেশ।

দেশ চালাতে গিয়ে সরকার আমলানির্ভর হয়ে পড়েছে— জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরবিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ অভিযোগ পুরনো। তবে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে এ বিষয়টি নিয়ে সংসদ সদস্যরা ক্ষোভ জানালে তা নতুন করে আলোচনায় আসে।

আরও পড়ুন- দেশ চলছে জগৎ শেঠ ও আমলাদের হাতে— সংসদে আলোচনায় এমপিরা

গত সোমবার (২৮ জুন) সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘এখন রাজনীতিবিদদের চেয়ে আমলাদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।’ একই আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেওয়ায় রাজনৈতিক সরকার ও রাজনীতিবিদদের কর্তৃত্ব ম্লান হয়ে যাচ্ছে।

সরকার ও বিরোধী দলীয় দুই সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেখুন, তারা জাতীয় সংসদে বক্তব্য রেখেছেন, জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য সবার সব কথা বলার সুযোগ রয়েছে। আমাদের শ্রদ্ধাভাজন নেতা কথা বলেছেন। আমার কথা সেটি নয়, আমার কথা হলো— দেশ পরিচালনা করছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। একটি দেশ পরিচালনা করতে গেলে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরুরি ভূমিকা পালন করতে হয়। একটি রাষ্ট্রকে কল্যাণকামী রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে এসব প্রতিষ্ঠানকেও যথযথ ভূমিকা রাখতে হয়। এখন রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত সব প্রতিষ্ঠানকে সেই ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে।

একটি উদাহরণ দিয়ে নানক বলেন, একটি গাড়ি কিন্তু কেবল ইঞ্জিন দিয়ে চলে না। গাড়ির কিন্তু আরও অনেক যন্ত্রাংশ রয়েছে। টায়ার ছাড়া গাড়ি চলবে না, টিউব ছাড়া গাড়ি চলবে না, ব্রেক ছাড়া গাড়ি চলবে না। এসব কিছু নিয়েই কিন্তু গাড়ি পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। সবগুলো যন্ত্রাংশ ঠিকমতো চললে তবেই গাড়িটিও ঠিকমতো চলতে পারে। ঠিক একইভাবে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রের কতগুলো অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হয়। এখন সেটিই হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই রাষ্ট্র ও সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর কিন্তু দেশের পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এরপর যারাই দেশ পরিচালনা করেছে, তারা কিন্তু রাজনৈতিক দল থেকে আসা ব্যক্তি নয়। কেউ সামরিক কর্মকর্তা, কেউ গৃহবধূ থেকে রাজনীতি করেছেন। ওই সময় কিন্তু কেবল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই রাজনৈতিক পরিবার থেকে বেরিয়ে এসে রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়েছেন, পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রও পরিচালনা করেছেন। এখনো তিনিই দেশ ও সরকার পরিচালনা করছেন।

তিনি আরও বলেন, এই যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্বই হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশ কিন্তু এখানেও সফল। আর সেই সফলতার কারণ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত কর্মকৌশল। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে তিনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছেন। আর সেটি কারও একার পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। সরকার, দল, রাজনীতিবিদ, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গ একসঙ্গে কাজ না করলে সেই কৌশলপত্র বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেটিই হয়েছে। রাষ্ট্রের সব অঙ্গ কাজ করছে। ফলে এখানে একটি অঙ্গের সঙ্গে অন্য অঙ্গের সংঘর্ষ বা দ্বন্দ্বের কোনো বিষয় নেই, কোনো অস্থিরতা নেই।

সরকারের আমলানির্ভর হয়ে পড়েছে বলেই আমলা বা মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা সংসদ সদস্য বা অন্যান্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকেন— এমন অভিযোগও করেন অনেকেই। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নানক বলেন, এ বিষয়ে একেবারেই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে মন্তব্য করব। এই সরকার টানা ১২ বছর ক্ষমতায় রয়েছে। এর মধ্যেই আমি এমপি ছিলাম, প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি।এখন এমপিও নই, মন্ত্রীও নই। তারপরও ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতা হিসেবে আমার কখনোই মনে হয়নি যে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো আমাকে কখনো অবহেলা করেছে। এরকম কোনো লক্ষণ আমি আজ পর্যন্ত পাইনি।

সরকারের আমলানির্ভর হয়ে পড়ার আলোচনাকে তাহলে যৌক্তিক মনে করছেন কি না— সারাবাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, তারা যেভাবে বিষয়টি তুলে ধরেছেন, আমি মোটা দাগে সেভাবে বলতে চাই না। আমি বলতে চাই— একটি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানেরই কার্যকর অংশগ্রহণের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে প্রশাসনের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে, প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা আমলারা সেটি পালন করবেন। আবার রাজনৈতিক দল সরকারের নেতৃত্ব দেবে। দেশ কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের নেতৃত্বেই স্বাধীন হয়েছে। এখনো যত কাজ হচ্ছে, তার নেতৃত্বেও কিন্তু রয়েছে রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রধান এবং একইসঙ্গে সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গ সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করছে। ফলে আমলানির্ভরতা বা প্রশাসনের ওপর নির্ভরতার আলোচনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দেশ চলছে রাজনৈতিক নেতৃত্বেই।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আমলানির্ভরতা জাহাঙ্গীর কবির নানক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর