Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘করোনা মহামারি প্রতিরোধে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ জুলাই ২০২১ ০০:৪২

ঢাকা: সারাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের হার ও মৃত্যু সংখ্যা ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের নেতারা। সেই সঙ্গে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত টেস্ট, চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন প্রদানে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করেছেন তারা। করোনায় মানুষের মৃত্যুর দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন বাম জোটের নেতারা।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৩ জুলাই) বাম গণতান্ত্রিক জোটের ভার্চুয়াল সভায় নেতারা এই মন্তব্য করেন। জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদক মনীর উদ্দিন পাপ্পু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সভাপতি হামিদুল হক, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবি নেতা সাজ্জাদ জহির চন্দন, কাফী রতন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, ইউসিএলবি সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণসংহতি আন্দোলনে সম্পাদক বাচ্চু ভুইয়া, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ।

বিজ্ঞাপন

আলোচনা বলা হয়, গত বছর যখন দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ সনাক্ত হয় তখন সরকারের মন্ত্রীরা বলেছিলেন শেখ হাসিনার সরকার করোনার চেয়েও শক্তিশালী। তাদের এই অহম, আত্মম্ভরিতা, অবহেলা, অমনোযোগ, সর্বোপরি আত্মতুষ্টি করোনা সংক্রমণ থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে পারেনি। তখনই দেশের স্বাস্থ্য খাত ও চিকিৎসা ব্যবস্থার ভঙুর দশা ফুটে উঠেছিল। কিন্তু দেড় বছর পরেও দেখা যাচ্ছে বিনা চিকিৎসায়, অক্সিজেন না পেয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর অসহায় মৃত্যু ঘটছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদফতর থেকে মিথ্যা তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে জনগণের সাথে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করা হচ্ছে। যে পরিমাণ চিকিৎসা সরঞ্জাম-যন্ত্রপাতি, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে বাস্তবে সরেজমিন গিয়ে দেখা যাচ্ছে সে পরিমাণ যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়নি। অথচ এজন্য কোনো কর্মকর্তার আজ পর্যন্ত শাস্তি হয়নি। এতে দুর্নীতি-অনিয়ম ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আর এর নিকৃষ্টতম শিকার হচ্ছে জনগণ। সাতক্ষীরা ও বগুড়ায় সাত জন করে মোট ১৪ জন করোনা রোগী অক্সিজেন না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। এর দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য অধিদফতর, মন্ত্রণালয়, এমনকি সরকার কোনোমতেই এড়াতে পারে না।

সভায় আলোচকরা বলেন, বাম জোটের পক্ষ থেকে গত বছর এপ্রিলেই সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল করোনা মহামারিকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী সংগঠন বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, সমাজের বিভিন্ন অংশের শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিয়ে সর্বদলীয় জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের। সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিম- যাদের দক্ষতা রয়েছে তাদের দিয়ে ফিল্ড হাসপাতাল করে দৈনিক কমপক্ষে ১ লাখ টেস্ট, বিনামূল্যে চিকিৎসা, আইসোলেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার। কিন্তু সরকার সে দাবি শোনেনি। এমনকি দলীয় লোক, মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানদেরকেও এ কাজে সম্পৃক্ত না করে সচিব আমলাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে করোনা প্রতিরোধে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

সভায় বলা হয়, শুধু করোনা টেস্ট, চিকিৎসাই নয়, এমনকি ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও সরকার জনস্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় তৎপর থেকে শুধুমাত্র ভারতের ওপর নির্ভরশীল থাকায় আজ ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক টিকা বাণিজ্যের ফাঁদে পড়ে ভারতের মুখাপেক্ষী হয়ে চীনের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল দিতে না দেওয়া ছিল সরকারের বিরাট ভুল। যা এখন মন্ত্রীদের বক্তব্যে বেরিয়ে আসছে।

অতিউচ্চ সংক্রমিত জেলাসমূহে জরুরি ভিত্তিতে অবিলম্বে ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি, হাসপাতালগুলোতে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু, পর্যাপ্ত নেসাল ক্যানুলা, আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয় সভায়। এবং বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়ারও দাবি জানানো হয়।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম

বাম গণতান্ত্রিক জোট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর