Monday 05 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রিমান্ডে নারী আসামিকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৪ জুলাই ২০২১ ১২:৪২

বরিশাল: বরিশালের উজিরপুরে হত্যা মামলায় এক নারী আসামিকে রিমান্ডে যৌন নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। রিমান্ড শেষে আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারকের কাছে এই অভিযোগ করেন ওই নারী।

বরিশালের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজুর রহমান শুক্রবার আসামির অভিযোগ আমলে নিয়ে নির্যাতন এবং হেফজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নির্যাতনের চিহ্ন এবং নির্যাতনের সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বেঞ্চ সহকারী নাহিদা খানম জানান, আসামি উজিরপুর থানায় রিমান্ডে নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ আনলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাটি তদন্তের আদেশ দেন। একইসঙ্গে আসামির সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করানোর নির্দেশ দেন আদালত।

নির্দেশনা অনুযায়ী শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নির্ধারিত সময়ের (শনিবার) মধ্যেই একটি তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে পেশ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম। তবে দাখিল করা প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি পরিচালক। তিনি জানান, আদালতের তদন্তাধীন বিষয়ে বাইরে বলাটা আইনসঙ্গত নয়। আমরা যা পেয়েছি তা আদালতকে জানিয়েছি।

জানা গেছে, উজিরপুর উপজেলার হারতা গ্রামের নারায়ণ চক্রবর্তীর ছেলে বাসুদেব চক্রবর্তীর সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক ছিল পাশের জামবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সী এক নারীর। ২৫ জুন (শুক্রবার) দুপুরে মোবাইল কলের সূত্র ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান বাসুদেব চক্রবর্তী। সন্ধ্যায় আর বাড়ি ফেরেননি। রাত ৩টার দিকে স্থানীয় চৌকিদার গৌতম বল্লভ বাসুদেব চক্রবর্তীর ভাই বরুন চক্রবর্তীকে মোবাইলে জানান, ওই নারীর বাড়ির উত্তর পাশে বাসুদেব চক্রবর্তীর মরদেহ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ২৭ জুন উজিরপুর থানায় ওই নারীর নাম উল্লেখ করে মামলা করেন বরুন বিশ্বাস।

বিজ্ঞাপন

ওই নারী নির্যাতনের যে বিবরণ আদালতকে দিয়েছেন তা জানিয়েছেন বেঞ্চ সহকারী নাহিদা খানম। অভিযোগকারীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ২৮ জুন গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পরপরই এক নারী পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালায়। পরে উপস্থিত অন্য পুলিশ সদস্যরাও তাকে লাঠি দিয়ে প্রহার করে। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আদালতে আবেদনের মাধ্যমে ২৯ জুন দুই দিনের রিমান্ডে নেয় তদন্তকারী পুলিশ পরিদর্শক মইনুল ইসলাম।

আদালতকে তিনি জানান, ওইদিন তাকে থানায় নিয়ে রাখা হলেও মারধর করা হয়নি। ৩০ জুন সকালে তাকে তদন্ত কর্মকর্তা কক্ষে নিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে যৌন হয়রানি করেন। কিছুক্ষণ পরে এক নারী পুলিশ সদস্যকে ডেকে এনে আবার তাকে পেটাতে থাকেন। নারী পুলিশ সদস্যের মারধর মন মতো না হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা নিজে উঠে ১৫/২০ মিনিট মারধর করেন। এতে জ্ঞান হারান তিনি। জ্ঞান ফেরার পর তিনি নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় দেখতে পান। অভিযোগে তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার আগে পুলিশের এক কর্মকর্তা তাকে খুনের অপরাধ স্বীকার করতে বলেন।

এই হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মাইনুল বলেন, ২৬ জুন উজিরপুর উপজেলার জামবাড়ি গ্রামে একটি ডোবা থেকে বাসুদেব চক্রবর্তী নামের একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বাসুদেবের ভাই পরদিন ওই ডোবা সংলগ্ন বাড়ির এক নারীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২৮ জুন ওই নারীকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ জুন তাকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। তিনি আরো বলেন, ‘আমি কোনো নির্যাতন করিনি। এটা একবারেই মিথ্যা অভিযোগ।’

ওই নারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান বলেন, পুলিশ রিমান্ড চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে সতর্কতার সঙ্গে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে শারীরিক এবং স্পর্শকাতর স্থানে নির্যাতন করেছে। যা যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শামিল।

বরিশালের পুলিশ সুপার মারুফ হাসান খান বলেন, ‘আমরা আদালতের নির্দেশনার কথা শুনেছি। এখনও আমরা লিখিত নির্দেশনা পাইনি। নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

সারাবাংলা/একে

খুনের আসামি টপ নিউজ নারী নির্যাতন বরিশাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর