টাইলস বিক্রেতা মোহাম্মদ ট্রেডিংয়ের ৩৯ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি
৫ জুলাই ২০২১ ২৩:৪৫
ঢাকা: টাইলস বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ট্রেডিংয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রায় ৩৯ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। একইসঙ্গে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার (৫ জুলাই) রাতে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ড. মইনুল জানান, মোহাম্মদ ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানটি আরএকে সিরামিকস বাংলাদেশ ও স্টার সিরামিকসের কাছ থেকে বিভিন্ন আকারের টাইলস ও স্যানিটারি আইটেম কিনে তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ভ্যাটযোগ্য সেবার বিপরীতে প্রযোজ্য রাজস্ব যথাযথভাবে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। এছাড়া বিক্রির পরিমাণের সঠিক তথ্য গোপন করে ঘোষণা বহির্ভূত স্থানে মূসক সংক্রান্ত দলিল সংরক্ষণ করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছে।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল গত ৩ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন বহির্ভূত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। এতে অভিযোগটির সত্যতা পাওয়া যায়। দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট সংক্রান্ত মূল দলিলপত্র মোড়কজাত করে এগুলো ধ্বংস করার জন্য ওই স্থানে স্তূপ করা হয়েছিল। অভিযানে জানা যায়, ভ্যাট গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় থেকে এগুলো গোপনে ধ্বংস করার জন্য সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। গোয়েন্দা দল তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় আরএকে টাওয়ারও একইসঙ্গে অভিযান পরিচালনা করে।
ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, তদন্তের সময় প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অডিট প্রতিবেদন, দাখিলপত্র (মূসক-১৯) এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জমা করা ট্রেজারি চালানের কপি ও অন্যান্য দলিল থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত আড়াআড়ি যাচাই করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। তদন্তের মেয়াদ ছিল জানুয়ারি ২০১৮ থেকে এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত।
আরও জানা গেছে, মোহাম্মদ ট্রেডিং প্রকৃত বিক্রয়মূল্যের বিপরীতে ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট না দিয়ে কেবল বিক্রি করা পণ্যের মূল্যের বিপরীতে প্রাপ্ত কমিশনের ওপর ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি দাখিলপত্রে বিক্রয়মূল্য ২১ কোটি ২৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৩৮ টাকা কমিশন দেখিয়েছে। এর ওপর তারা ১ কোটি ৫৪ হাজার ৬৫৫ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কমিশনসহ মোট ভ্যাটযোগ্য বিক্রয়মূল্য ছিল ৬৩২ কোটি ৩৩ লাখ ৭ হাজার ৯৮২ টাকা এবং এর ওপর প্রযোজ্য ভ্যাটের পরিমাণ ২৮ কোটি ৩৬ লাখ ৭৮ হাজার ৮৭০ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি ২৭ কোটি ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ২১৫ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। আইন অনুযায়ী, এই ফাঁকির ওপর মাসে ২ শতাংশ হারে ১১ কোটি ৪৮ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮২ টাকা বিলম্বজনিত সুদ প্রযোজ্য হবে।
অন্যদিকে, ওই একই মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটি স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার বিপরীতে ১১ লাখ ২৮ হাজার ৫৭০ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ২০ লাখ ৭৭ হাজার ১০২ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি ৯ লাখ ৪৮ হাজার ৫৩২ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এর ওপর মাসিক ২ শতাংশ হারে আদায়যোগ্য সুদ ৫ লাখ ১২ হাজার ৩২৫ টাকা।
সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের ২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৭ টাকা এবং সুদ বাবদ ১১ কোটি ৫৩ লাখ ৬০ হাজার ৬ টাকা, তথা মোট ৩৮ কোটি ৯৯ লাখ ৩২ হাজার ৭৫৪ টাকার ভ্যাট আদায়যোগ্য।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর বলছে, ভ্যাট আইনে এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে যে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উঠে এসেছে, তা আদায়ের জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে তদন্ত প্রতিবেদনটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারটে পাঠানো হয়েছে।
সারাবাংলা/এসজে/টিআর