Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হালদার শাখা খালে ভেসে এলো মরা ডলফিন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ জুলাই ২০২১ ১৪:৪৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশে কার্পজাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীর সঙ্গে যুক্ত একটি খালে একটি মৃত ডলফিন পাওয়া গেছে। গবেষকদের ধারণা, বয়সের কারণে হালদা নদীতে ডলফিনটির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে সেটি শাখা খালে ঢুকে পড়েছে।

মঙ্গলবার (৬ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মেখল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে চানখালী খাল থেকে মৃত ডলফিনটি উদ্ধার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন চানখালী ব্রিজের নিচে খালে ভাসমান মৃত ডলফিনটি দেখতে পেয়ে আমাদের খবর দেন। আমরা লোক পাঠিয়ে সেটি উদ্ধার করে খালপাড়ে রেখেছি। এরপর আমরা হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির টিমকে বিষয়টি জানাই। তারা আমাদের বলেছেন, ডলফিনটিকে হত্যা করা হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য এর শরীরে কোনো জখমের চিহ্ন থাকলে সেটা ছবি তুলে নোট করে রাখতে। এরপর সেটিকে আপাতত মাটিচাপা দিয়ে রাখতে বলেছেন তারা। একমাস পর প্রয়োজনে তারা কঙ্কাল তুলে পরীক্ষা করবেন।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, প্রায় সাড়ে ৭ ফুট দীর্ঘ মৃত ডলফিনটির ওজন প্রায় ১২০ কেজি। স্থানীয়রা এর শরীরে জখমের কোনো চিহ্ন দেখেননি বলে জানিয়েছেন। এজন্য ধারণা করা হচ্ছে বয়স পরিপূর্ণ হওয়ায় ডলফিনটির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এরপরও প্রয়োজনে ময়নাতদন্ত করা হবে বলে তিনি জানান।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা হয়ে প্রবাহিত প্রায় ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ হালদা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ১৭টি খালের মধ্যে একটি চানখালী খাল। স্থানীয়ভাবে এটিকে চ্যাংখালী খালও বলা হয়। কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে গাঙ্গেয় প্রজাতির ডলফিনের অবাধ বিচরণ আছে। স্থানীয়ভাবে একে হুতুম বা ‍শুশুক নামে অভিহিত করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) গাঙ্গেয় ডলফিনকে বিপন্ন হিসেবে লাল তালিকায় রেখেছে। ২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুসারে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত।

বিজ্ঞাপন

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ছয়মাসে হালদা নদীতে ১৮টি মৃত ডলফিন পাওয়া যায়। এত বেশি সংখ্যক ডলফিনের মৃত্যুর ঘটনা অনুসন্ধান করে চবি’র হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির পক্ষ থেকে সেটা ঠেকাতে সরকারের কাছে কয়েক দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বালিমহাল ইজারা দেওয়া বন্ধ এবং নদীতে ড্রেজার চলাচল নিষিদ্ধ করা। কারণ অধিকাংশ ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে ড্রেজারের প্রপেলারের আঘাতে বলে তাদের অনুসন্ধানে উঠে আসে।

গবেষক মনজুরুল কিবরিয়া জানান, সরকার সুপারিশ দু’টি আমলে নিয়ে ড্রেজার চলাচল নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। এর ফলে হালদায় ডলফিনের মৃত্যুও কমে আসে। ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মাত্র ১০টি মৃত ডলফিন পাওয়া গেছে। তবে এর মধ্যে ২০২০ সালের ৮ মে একটি মৃত ডলফিন পাওয়া গেছে, যাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে চর্বি সংগ্রহ করা হয়েছে।

‘অধিকাংশ ডলফিন ড্রেজারের আঘাতে মারা গেছে। ২-৩টি পরিকল্পিত হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটি শুধু চর্বি সংগ্রহের জন্য শিকার করা হয়েছে। আরও কয়েকটি জালে আটকা পড়ার পর মেরে ফেলা হয়েছে। তবে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ ও জনসচেতনতা তৈরির কারণে আস্তে আস্তে ডলফিন শিকার ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসছে।’

২০২১ সালের শুরু থেকে এই প্রথম একটি মৃত ডলফিন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া।

সারাবাংলা/আরডি/এমও

ডলফিন ড্রেজার চলাচল মরা ডলফিন হালদা

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর