স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই চালু হচ্ছে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র
৭ জুলাই ২০২১ ২০:২৪
ঢাকা: করোনা সংক্রমণের মুখে নির্মাণকাজ শেষ হতে কিছুটা দেরি হলেও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই (ডিসেম্বরের মধ্যেই) রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে চায় সরকার। সে লক্ষ্যে এরই মধ্যে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিটের নির্মাণকাজ ৮০ শতাংশ শেষ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাকি ২০ শতাংশ কাজ ডিসেম্বরের আগেই শেষ হবে।
২০১২ সালে সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে বাগেরহাট জেলার রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। উপজেলার সাপমারি-কাটাখালী ও কৈর্গদাশকাঠি এলাকায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইউনিট নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৪ সালে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, এক হাজার ৮৩৪ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড নামে বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০০ কোটি ডলার। যার মধ্যে, ১৬০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক।
প্রকল্পের মূল কাজ শেষ করতে কিছুটা দেরি হলেও ভূমি উন্নয়ন, সীমানা প্রাচীর ও স্লোপ প্রোটেকশন, মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফেসিং, বিদ্যুৎ-পানি সরবরাহসহ বেশকিছু কাজ এরই মধ্যে শেষের পথে।
এ প্রসঙ্গে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আফসার উদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, সব মিলিয়ে কাজের অগ্রগতি ৬৮ শতাংশ শেষ। আর একটা ইউনিট যেটা ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেটার অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। বাকি সময়ের মধ্যে ২০ শতাংশ শেষ করা যাবে। কারণ অল্পকিছু কাজ বাকি আছে।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর সংক্রমন রোধে বিধিনিষেধ এর কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাইটে ঢুকতে পারছেন না। এখন যে ২০ শতাংশ কাজ বাকি তার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাবস্টেশনের কমিশনিং, চিমনি-এফজিডি-ওয়াটার সিস্টেমের কিছু কাজ। যন্ত্রপাতি চলে এসেছে। টারবাইন জেনারেটর স্থাপন হয়ে গেছে। এখন ভেতরে ফ্লাসিং হবে, কন্ট্রোল সিস্টেম স্থাপন করা হবে।
সরকারি সূত্রগুলো জানাচ্ছে, সাত বছর আগে হাতে নেওয়া এই কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নানান কারণে বারবার বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে।
প্রকল্প শুরুর আগে থেকেই, সুন্দরবনের কোলঘেঁষে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে দেশের পরিবেশবাদীদের ঘোর আপত্তি ছিলো। তাদের বক্তব্য, কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কারনে রামপাল প্রকল্প পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং নিকটবর্তী সুন্দরবনে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ডেকে আনবে।
সরকার এর বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়েছে, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের কোনো ধরনের ক্ষতি করবে না। নষ্ট হবে না সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য।
ওই সময়েই কয়েকদফা সময়সূচি পিছিয়ে ২০২১ সালের জুনে প্রথম ইউনিটটি চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু, করোনার কারণে কাজ বন্ধ থাকায় তা আরও পিছিয়ে এ বছরের ডিসেম্বরে চালু করার দিন ঠিক করা হয়।
এদিকে, ডিসেম্বরে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করতে জোরেসোরে কাজ চলছে। এরইমধ্যে, কয়লার দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে জানিয়ে প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আফসার উদ্দীন জানান, ইন্দোনেশিয়া, অষ্ট্রেলিয়া অথবা, সাউথ আফ্রিকা থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আসবে। টেন্ডার রিসিভ হয়নি এখনো, বিধিনিষেধ কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি জানান, কোল ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য ভারতের পাঠানো কয়লা চলতি সপ্তাহের যে কোনো দিন রামপালে পৌঁছে যাবে। ভারতের কয়লা প্লান্টের কার্পেটিং জন্য ব্যবহার করা হবে। আর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দরপত্র চূড়ান্ত হওয়ার পর সিদ্ধান্ত হবে কোন দেশ থেকে কয়লা আসবে।
তবে, সব প্রক্রিয়া দ্রুতই শেষ করে অক্টোবরের শেষে কিংবা নভেম্বরের শুরুতে কয়লা আনা হবে বলে জানান প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
অন্যদিকে, প্রথম ইউনিট ডিসেম্বরে চালু হলে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে ২০২২ সালের মে মাস নাগাদ। এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কমিয়ে আনার নীতি গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে, নির্মিতব্য দশটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিকল্পনা বাতিল করেছে। সেক্ষেত্রে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। গুরুত্ব পাচ্ছে লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাসভিত্তিক (এলএনজি) বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোও।
সারাবাংলা/জেআর/একেএম
বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড ভারতের এক্সিম ব্যাংক রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী