কোরবানির গরু নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা-ব্যবসায়ী সবাই সংশয়ে
৭ জুলাই ২০২১ ১৩:০৮
ঢাকা: করোনা মহামারি শুরুর পর গত বছর একটি কোরবানির ঈদ অতিবাহিত হয়েছে। দৌড়গোড়ায় আরেকটি কোরবানির ঈদ। কিন্তু কোরবানির ঈদের প্রধান আকর্ষণ গরুর হাট বসা ও ঢাকায় গরু আসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন রাজধানীবাসী। তাদের আশঙ্কা গতবছরের মতো এবারও ঢাকার হাটগুলোতে গরুর সংকট দেখা দিতে পারে।
অনেকেই বলছেন, গত বছরের চেয়েও এবার ভয়াবহ আকারে পশুর সংকট দেখা দেবে। করোনাভাইরাসের বৃদ্ধি ও সরকারি কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে পশুরহাট কতটা জমবে এবং কত পশু হাটে উঠবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। হাটে গরু উঠলেও দাম নিয়েও সংশয় কাজ করছে।
জানা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ২৫টি পশুরহাট বসবে। এরমধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ১৪টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ১১টি হাট বসানোর কথা রয়েছে।
সিটি করপোরেশন থেকে জানা গেছে, আগমী ১৪ জুলাই থেকে ঢাকার কোরবানির হাটগুলোতে পশু বেচাকেনা শুরু হবে। করোনার কারণে সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও পশুবাহী ট্রাক ও পরিবহনগুলো আওতামুক্ত থাকবে। পশুবাহী গাড়িগুলো নির্বিঘ্নে ঢাকার হাটগুলোতে প্রবেশ করতে পারবে। এ ব্যাপারে প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
ঢাকার গেন্ডারিয়া ধুপখোলা পশুরহাট থেকে প্রতিবছর গরু কেনেন আব্দুল মোত্তালিব। তিনি মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সারাবাংলাকে বলেন, গত বছর গরুর সংকট থাকায় ৭০ হাজার টাকার গরু কিনতে হয়েছে এক লাখ ১০ টাকা দিয়ে। আর ঈদের দুইদিন আগে তো অনেকে গরু কিনতেই পারেননি। আমার মতো অনেকেই গরু কিনেছেন বেশি দাম দিয়ে। আবার কেউ কিনতেই পারেনি। তাই এবার তিনি সংশয়ে আছেন। গরু এবার আগেই কিনবেন। আবার আগে কিনলে গরুকে খাওয়ানো এবং দেখাশোনা ও যত্ন করার জন্য লোক লাগে। ঢাকায় সেটি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই এক দুই দিন আগে গরু কিনলে সুবিধা হয়।
কমলাপুর পশুরহাট থেকে প্রতিবছর গরু কিনতেন আহমেদ জামান ফেরদৌস। তিনি মতিঝিল গোপীবাগে থাকেন। তিনিও সংশয় প্রকাশ করে বলেন, এবার নাকি গরু কিনতে কষ্ট হবে। লকডাউন থাকায় গরুর সংকট দেখা দেবে রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে। তাই আগেভাগেই গরু কেনার চিন্তা করছেন তিনি।
বাড্ডা আফতাব নগর পশুরহাট থেকে গরু কেনেন রামপুরা বনশ্রীর আতিকুল ইসলাম মোহন। তিনি বলেন, এবার পশু কিনতে সংশয় আছে। হাটে কয়টা গরু ওঠে সেটাই এবার দেখার বিষয়। যেভাবে লকডাউন চলছে এটি যদি ১৪ জুলাইয়ের পর আরও বাড়ে তাহলে কোরবানির পশু কেনা নিয়ে ঢাকাবাসীর সংশয় রয়েছে। দাম যতই হোক না কেন কিনে নেব। তবে করোনা বৃদ্ধির কারণে হাটে যাওয়া নিয়ে একটা দুশ্চিন্তাও কাজ করছে। আবার যারা গরু কাটাকাটি করবে তাদের সংস্পর্শে আসলে কতটুকু নিরাপদ থাকা যাবে, সেটা নিয়েও ভয় কাজ করছে। সব মিলে এবারের পশু কেনা ও জবাই করা নিয়ে অনেক বেশি সংশয়ে রয়েছি।
অন্যদিকে যেসব জায়গা থেকে ঢাকায় গরু আসে সেসব জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের হাটগুলোতে তেমন পাইকার নেই। বেচাকেনাও তেমন হচ্ছে না। এলাকার খামারিরা তাকিয়ে আছেন ঢাকার পাইকারদের দিকে। কিন্তু ঢাকার পাইকাররাও গরু কিনতে সন্দিহান। কারণ লকডাউন আরও বাড়বে কী না? গরু নিয়ে ঢাকায় গিয়ে বিক্রি হবে কী না? নাহলে সেগুলোর কি হবে সবমিলে সন্দিহান রয়েছে গরুর পাইকাররা।
রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, নওগাঁ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, মেহেরপুর ও নরসিংদীর গরুর হাটগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো গরুর হাটেই এখনও বেচাকেনা শুরু হয়নি। খামারিরা পোষা গরু হাটে তুললেও পাইকারের অভাব এবং কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে আবারও বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থা থাকলে বড় লোকসানের মুখে পড়বেন বলে আশঙ্কা করেছেন খামারীরা।
রংপুর সঠিবাড়ি গরুর হাটের পাইকার আলাউদ্দিন খান সারাবাংলাকে বলেন, গরু কিনবো ঢাকায় নেওয়ার জন্য। কিন্তু এখনও সঠিক সংবাদ পাইনি যে, ঢাকায় গরু নেওয়া যাবে এবং তা বিক্রি করা যাবে। বুঝেশুনে তারপর গরু কিনবো। আর এবার গরুর দাম কেমন হবে তার ওপর নির্ভর করবে কত টাকা দিয়ে গরু কিনবো। কারণ বেশি দামে কিনে তো কম দামে বিক্রি করতে পারবো না।
এক প্রশ্নের জবাবে ওই পাইকার বলেন, গরুর হাটে ঘোরাঘুরি করছি, গরু ওঠে অসংখ্য। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে না। মনে হচ্ছে গরু এবার সস্তায় কেনা যাবে।
দুই হাটে গরু তুলেও বিক্রি করতে পারেননি পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার বড়াল ব্রীজের হাটে। গরু বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়ার পর অনলাইনে ছবি তুলে ছেড়ে দেন জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, দুই হাটে গরু বিক্রি করতে পারিনি। বাড়িতে আনার পর ছেলে গরুর ছবি তুলে অনলাইনে দিয়েছে। কয়েকজন দাম করলেও এখনও বিক্রি হয়নি। তবে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন তিনিও।
ঢাকার পশুরহাটের সবশেষ অবস্থা জানতে চাইলে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের সারাবাংলাকে বলেন, ১৪টি হাটের টেন্ডার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এখন হাট বসার অপেক্ষায় রয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরুর হাটগুলো পরিচালিত হবে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তদারকি করা হবে। ভ্রাম্যমান আদালত থাকবে।
সরকারি সিদ্ধান্ত মতে, যেহেতু পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান চলাচলে কোনো নিষেধাঙ্গা নেই তাই পশুবাহী পরিবহন চলাচলেও কোনো বাধা নেই। তবে সরকারি দুটি প্রজ্ঞাপনের একটিতেও পশুবাহী গাড়ি চলাচলে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
সারাবাংলা/ইউজে/এএম