ভ্যাকসিন নিয়ে অন্ধকারে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা
৮ জুলাই ২০২১ ০০:১৯
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশে শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই বন্ধ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সে প্রায় দেড় বছর চললো। নিয়ন্ত্রণে আসার বদলে এখনো সেই ভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্ত, শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে সুরক্ষিত করে উচ্চ শিক্ষাদানে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হবে। সে ঘোষণার পর এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সুরক্ষা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে শুরু করেছেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ভ্যাকসিন নিবন্ধনের কোনো সুযোগ নেই! এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে আসেনি কোনো ঘোষণা, আবার প্রতিষ্ঠান প্রধানেরাও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
জানা গেছে, অগ্রাধিকারভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য ৩৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ তিন হাজার ১৫২ জন আবাসিক শিক্ষার্থীদের তালিকা করে তাদের নিবন্ধনের সুযোগ কর দিচ্ছে ইউজিসি। যেসব শিক্ষার্থীর তালিকা ইউজিসি পেয়েছে, তারা এরই মধ্যে সুরক্ষার মাধ্যমে নিবন্ধনের সুযোগও পাচ্ছেন। কিন্তু সেই তালিকায় নেই সাত কলেজের নাম। অথচ ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজে আবাসিক শিক্ষার্থী প্রায় ৩০ হাজার। ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধনের সুযোগ না পাওয়ায় এসব শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ, হতাশ।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির তালিকায় সাত কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থীদের না থাকার অর্থ হলো তাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। ভ্যাকসিন নিয়ে অন্যরা শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়মিত হওয়ার সুযোগ পেলে এবং সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলে তারা আরও বেশি দীর্ঘ সেশন জটের মুখে পড়বেন।
সরকারি তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থী সাহেদুজ্জামান সাকিব সারাবাংলাকে বলেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বরাবরই তাদের বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। করোনার ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও এভাবে বঞ্চিত হওয়াটা সত্যিই দুঃখজনক। যেহেতু রাজধানী ঢাকার একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী সাত কলেজে অধ্যয়ন করে, তাই ভ্যাকসিনের তালিকায় সাত কলেজের নাম না থাকাটা বেদনাদায়ক।
সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী ইমন ইসলাম রাকিব বলেন, অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা বরাবরই অবহেলিত। আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের অধিকার আদায় করতে হয়। সবসময় এমনই হয়ে আসছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিভাবক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর দায় দিচ্ছে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের তাদের শিক্ষার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না। তাদের এই সিদ্ধান্তহীনতার মাঝখানে ঝুলছে আমাদের ক্যারিয়ার। ভ্যাকসিন ছাড়া যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে না, তাই আমাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। ইউজিসি চাইলে নিশ্চয় সরকার ভ্যাকসিন দেবে। কিন্তু কিন্তু চাইতে তো হবে! আমরা চাই এর দ্রুত সমাধান হোক।
ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তনিমা ইসলাম আইনুন বলেন, ঢাবি অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকেই যেন এই প্রশ্ন ঘুরপাক খায়— সাত কলেজ কার? কে সাত কলেজের? ইউজিসি বলছে, আমাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলছে উদ্যোগ নিতে হবে সাত কলেজ অধ্যক্ষদের। সাত কলেজের অধ্যক্ষরা আবার বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুমতি লাগবে।
ক্ষোভ জানিয়ে তনিমা আরও বলেন, কেবল ভ্যাকসিন না, পরীক্ষা-রেজাল্ট থেকে শুরু করে যেকোনো প্রশাসনিক প্রয়োজনেই শিক্ষার্থীদের এমন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এমন অবহেলা আমাদের কাম্য নয়। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে উদাসীনতা কাটিয়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করছি।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. সাগর আলী বলেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই তালিকায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নেই! এই গাফিলতির জন্য দায়ী কে? ভ্যাকসিন দেওয়ার পর দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলে সাত কলেজ কি খুলে দেওয়া হবে না? আমরা কেন এমন বৈষম্যের শিকার হচ্ছি? এ প্রশ্নের উত্তরই বা কে দেবে!
তিনি বলেন, সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল লেখাপড়ার মান উন্নয়নের জন্য, আন্দোলন করে আমাদের ভবিষ্যত নষ্ট করার জন্য না। আমরা বৈষম্যমুক্ত সাত কলেজ চাই। শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হোক। সাত কলেজকেও ভ্যাকসিনের আওতাভুক্ত করে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিতুমীর কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আশরাফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের এখনো এ বিষয়ে অবহিত করা হয়নি। তবে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের যে প্রক্রিয়ায় ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, আমাদের শিক্ষার্থীদেরও সে প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হবে।
এ বিষয়ে সাত কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট) ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম উল্লাহ খোন্দকার সারাবাংলাকে বলেন, আমরা এখনো ভ্যাকসিনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। তবে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। সুযোগ এখনো হয়ে ওঠেনি। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দিতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
সারাবাংলা/এনএসএম/টিআর