কোভিশিল্ডের ২য় ডোজের অপেক্ষা ফুরাচ্ছে
৯ জুলাই ২০২১ ১৪:১০
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় পর্যায়ে শুরু করা হয় ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে প্রস্তুত করা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’ প্রয়োগ করা হচ্ছিল দেশব্যাপী। পরে ভারতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ভ্যাকসিন সরবরাহে ভাটা পড়ে। প্রথম ডোজ নিলেও ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ এখনো সেই ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষার আছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর সূত্র বলছে, তাদের অপেক্ষার দিন শেষ পর্যন্ত ফুরাতে যাচ্ছে। আগস্টেই তাদের জন্য দেশে আসছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন।
৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের ভ্যাকসিন কেন্দ্রগুলো থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’ ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। তবে ভ্যাকসিন ঘাটতির আশঙ্কায় ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন প্রয়োগ বন্ধ রাখা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জনকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনাকার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন পেয়েছেন ৪২ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ জন। সে হিসাবে ১৫ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ জন এখনো দ্বিতীয় ডোজের কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন পাননি।
এর মধ্যে গত কয়েকদিনে দেশে মডার্না ও সিনোফার্মের ভ্যাকসিন এসেছে। এসব ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে নতুন করে নিবন্ধনও উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এক ডোজ কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন যারা নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষা আর ফুরায়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যারা এখনো এরকম কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেননি, তাদের বিষয়টি সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে ভাবছে। দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিনের ঘাটতি পূরণে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে আসছে ১০ লাখ ৮০০ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। তবে এই ভ্যাকসিন ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে আসছে না। বরং দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় থাকা জনগোষ্ঠীর কথা ভেবে সরকার বৈশ্বিক ভ্যাকসিন জোটের উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে এই ভ্যাকসিন সংগ্রহ করছে। এর বাইরে অন্য উৎসগুলো থেকেও কোভিশিল্ডসহ অন্যান্য কোম্পানির ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতেও কাজ করছে সরকার।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতির এখনো তেমন উন্নতি না হওয়ায় সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কেনা ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা এখনই করছে না সরকার। সে কারণেই কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় থাকা নাগরিকদের এই ভ্যাকসিন দিতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সরকার যোগাযোগ করতে থাকে। দেশ থেকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন আনার জন্য যোগাযোগ করতে থাকে সরকার। সেসব যোগাযোগের সূত্র ধরেই আগস্টের প্রথম সপ্তাহে দেশে আসছে ১০ লাখ ৮০০ ডোজ কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সারাবাংলাকে বলেন, যারা অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দিতে পারেননি, তাদের জন্য আমরা কাজ করছি। খুব দ্রুতই তারা ভ্যাকসিন পেয়ে যাবেন। সিরামের কাছ থেকে আমাদের ভ্যাকসিন কেনা আছে। তারা আগস্টে একটি চালান দিতে চেয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ বলেনি। সিরাম থেকে না এলেও আমরা কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির আওতায় কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছি। এই ভ্যাকসিন এ মাসেও আসতে পারে, না এলে আগস্টের প্রথম দিকেই পেয়ে যাব।
মন্ত্রী জানান, কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষমাণদের কথা জানিয়ে কোভ্যাক্সকে মেইল করে বাংলাদেশ। সেই মেইলের উত্তর পাওয়া গেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারা আমাদের ১০ লাখ ৮০০ ডোজ কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন দেবে বলে চিঠি দিয়েছে। খুব দ্রুতই আমরা এই ভ্যাকসিন পেয়ে যাব। এছাড়া আমরা অন্যান্য উৎস থেকেও ভ্যাকসিন সংগ্রহের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, দেশে যখন ভ্যাকসিন এসেছিল তখন দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে অনেকেই বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলছিল। অথচ নানা সীমাবদ্ধতা নিয়েও আমরা ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম ভালোভাবে শুরু করতে পেরেছিলাম। সেখানে কিছুটা ছন্দপতন হয়েছিল। সিরামের কাছ থেকে ভ্যাকসিন কেনা হয়েছিল। কিন্তু তারা চুক্তি অনুযায়ী আমাদের ভ্যাকসিন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তখন যে ভারতের পরিস্থিতির এতটা অবনতি ঘটবে, সেটি তো কারও জানা ছিল না। তারপরও আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করছি। দেশে আবারও ভ্যাকসিন আসা শুরু হয়েছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অবশ্যই এখানে আমরা সফল হব।
জাহিদ মালেক আরও বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেবেন। আমরা সেই লক্ষ্য পূরণেই কাজ করে যাচ্ছি।
ভ্যাকসিন কেনার জন্য টাকার কোনো অভাব নেই জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চলমান বাজেটে ভ্যাকসিন কেনার জন্য টাকার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্যাকসিন কেনার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার (২ জুলাই) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন আগস্টের মধ্যেই আসবে। আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই ভ্যাকসিন পাওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা বাংলাদেশি নাগরিকরাও ভ্যাকসিন পেতে সহযোগিতা করেছেন।
এর আগে, গত বছরের ৫ নভেম্বর সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার তিন কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন কিনতে সরকার, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও সিরামের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক সই হয়। ১৩ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত ক্রয়চুক্তি সই করে সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছে পাঠানো হয়। ৫ জানুয়ারি সরকার এই ভ্যাকসিন কিনতে ৫০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাঠায় সিরামকে। চুক্তি অনুযায়ী ৫ জানুয়ারি আসে সিরামের কাছ থেকে সরকারের কেনা ভ্যাকসিনের প্রথম চালানের ৫০ লাখ ভ্যাকসিন। এর পরের পাঁচ মাসে আরও ৫০ লাখ করে ভ্যাকসিন আসার কথা ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে ২০ লাখ ডোজের পর সিরাম আর কোনো ভ্যাকসিন দেয়নি বাংলাদেশকে।
এদিকে, ভ্যাকসিন পাওয়ার পর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হয়। ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয় দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগের কার্যক্রম। কিন্তু ভ্যাকসিনের মজুত ফুরিয়ে আসতে থাকায় ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীদের নিবন্ধনও বন্ধ করা হয়।
সবশেষ পরিস্থিতি বলছে, চীনের কাছ থেকে কেনা সিনোফার্মের ভ্যাকসিন ছাড়াও কোভ্যাক্সের আওতায় মডার্না ও ফাইজারের ভ্যাকসিন সরকারের হাতে থাকায় ফের শুরু হচ্ছে জনসাধারণ পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম। সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধনও সে উপলক্ষে উন্মুক্ত হয়েছে নতুন করে।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর