দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই সংখ্যা ছিল ২১২। একদিনে করোনায় এত বেশি মৃত্যুর সাক্ষী এর আগে কখনো হয়নি বাংলাদেশ। এর আগে গত পরশু বুধবার (৭ জুলাই) একদিনে সর্বোচ্চ ২০১ জন মারা গিয়েছিলেন। গত ২৪ ঘণ্টার ২১২ মৃত্যু নিয়ে দেশে করোনায় মৃত্যুও ছাড়িয়ে গেল ১৬ হাজার।
শুধু তাই নয়, একই সময়ে ফের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১১ হাজারের বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় এর পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৩২৪, যা দেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্ছ। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিনের মতো সংক্রমণ শনাক্ত হলো ১১ হাজারের বেশি। একইসঙ্গে মোট সংক্রমণ ছাড়িয়ে গেল ১০ লাখ।
শুক্রবার (৯ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার সই করা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বুলেটিনে গত ২৪ ঘণ্টার করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।
একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড
এর আগে, গতকাল (বৃহস্পতিবার) একদিনে ১৯৯ জন ও পরশু (বুধবার) একদিনে ২০১ জন মারা গিয়েছিলেন করোনা সংক্রমণ নিয়ে। এই দুই দিনের রেকর্ড ভেঙে গত ২৪ ঘণ্টায় একদিনে সর্বোচ্চ ২১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মোট মৃত্যু দাঁড়াল ১৬ হাজার ৪ জনে। সংক্রমণের বিপরীতে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬০ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় যারা করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ১১৯ জন, নারী ৯৩ জন। তাদের মধ্যে ১৬ জন বাসায় ও বাকি ১৯৬ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৩০ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ৩৬ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃতদের বয়সভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৯০ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী মারা গেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৬ জন, তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪০ জন মারা গেছেন ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী। এছাড়া ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ১৭ জন, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী সাত এবং ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী দুই জন গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন করোনা সংক্রমণ নিয়ে।
বিভাগভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের মতো গত ২৪ ঘণ্টাতেও সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। এ বিভাগে মারা গেছেন ৭৯ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৩ জন মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৬ জন মারা গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগে। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ২৩ জন ও রংপুর বিভাগে মারা গেছেন ১২ জন। এর বাইরে ময়মনসিংহ বিভাগে আট জন, সিলেট বিভাগে ছয় জন ও বরিশাল বিভাগে পাঁচ জন করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়।
তৃতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড
স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তির তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৬১৩টি ল্যাবে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এসব ল্যাবে ৩৯ হাজার ২০৯টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৮৬টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে ৬৯ লাখ ৩ হাজার ২৬৮টি নমুনা পরীক্ষা হলো।
গত ২৪ ঘণ্টায় যেসব নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, তার মধ্যে ১১ হাজার ৩২৪টিতে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এটি দেশে একদিনে তৃতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের নতুন রেকর্ড। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার একদিনে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৬৫১ এবং গত মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৫২৫ নমুনায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। মাঝে বুধবার ১১ হাজার ১৬২ নমুনায় সংখ্রমণ শনাক্ত হওয়ায় এ নিয়ে টানা চার দিন সংক্রমণ শনাক্ত হলো ১১ হাজারের বেশি।
এ নিয়ে দেশে মোট করোনা সংক্রমণও ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেল। গত ২৪ ঘণ্টার হিসাবসহ এখন পর্যন্ত সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১০ লাখ ৫৪৩ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
বেড়েছে সুস্থ হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির সংখ্যাও বেড়েছে। আগের দিন ৫ হাজার ৮৪৪ জন সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন করোনা সংক্রমণ থেকে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৩৮ জন। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠলেন মোট ৮ লাখ ৬২ হাজার ৩৮৪ জন। সংক্রমণ বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।