Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনায় মৃত্যু ছাড়াল ১৬ হাজার, সংক্রমণ ছাড়াল ১০ লাখ

সারাবাংলা ডেস্ক
৯ জুলাই ২০২১ ২০:২৬

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে সংক্রমণ ও করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টাতেই দেশে একদিনে করোনা সংক্রমণ নিয়ে ২১২ মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। অন্যদিকে, এর আগের ২৪ ঘণ্টায় একদিনে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৬৫১ সংক্রমণ শনাক্তের রেকর্ড দেখেছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে গত ২৪ ঘণ্টার সংক্রমণের চিত্র যুক্ত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের ৪৮৯ দিনের মাথায় সংক্রমণ ছাড়িয়ে গেল ১০ লাখ। একই দিনে এবং দেশে করোনায় মৃত্যুর ৪৭৯ দিনের মাথায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু ছাড়াল ১৬ হাজার।

বিজ্ঞাপন

সাম্প্রতিক সময়ের করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা বোঝা যায় করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের আগের পরিসংখ্যানগুলো বিবেচনায় নিলে। এর আগে গত এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে শুরু করে ১৫ দিনের মাথায় গিয়ে সংক্রমণ এক লাখ পেরিয়েছিল। সবচেয়ে কম সময়ে লক্ষাধিক সংক্রমণের রেকর্ড ছিল সেটিই। সেখানে সবশেষ এক লাখ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে!

অন্যদিকে, এর আগেই সপ্তাহেই মাত্র ৮ দিনের ব্যবধানে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজারে পৌঁছেছিল। সেখানে ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার মৃত্যুতে পৌঁছাতে সময় লেগেছে মাত্র পাঁচ দিন!

আরও পড়ুন- একদিনে ২১২ মৃত্যুর নতুন রেকর্ড, সংক্রমণ আরও ১১৩২৪

যেভাবে করোনায় মৃত্যু ১৬ হাজারে

দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। সেদিন একজনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিংয়ে। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০১ জন। একমাস পাঁচ দিন পর ২৫ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় পাঁচশ। ১৫ দিনের মাথায় ১০ জুন এই সংখ্যা স্পর্শ করে হাজারের ঘর। সে হিসাবে দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের ৯৫ দিনে করোনায় মৃত্যু স্পর্শ করে হাজারের ঘর।

এর ২৫ দিন পর ৫ জুলাই দুই হাজার ছাড়িয়ে যায় মৃত্যু। এর পরের এক হাজার মৃত্যু হয় আরও দ্রুত— মাত্র ২৩ দিনে। ২৮ জুলাই তিন হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায় করোনায় মৃত্যু। দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম হাজার মৃত্যু পেরিয়ে যায় যথাক্রমে ২৫ আগস্ট ও ২২ সেপ্টেম্বর। দুই বারেই সময় লাগে ২৮ দিন করে। এর ৪৩ দিন পর ৪ নভেম্বর ছয় হাজার, এর ৩৮ দিন পর ১২ ডিসেম্বর সাত হাজার এবং এর ৪২ দিন পর ২৩ জানুয়ারি করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু পেরিয়ে যায় আট হাজারের ঘর। এরপর করোনায় মৃত্যুর গতিতে লাগাম ধরানো সম্ভব হয়।

বিজ্ঞাপন

আট হাজারের পর ৯ হাজারের ঘরে যেতে সময় লাগে দুই মাসেরও বেশি— ৬৭ দিন। এ বছরের ৩১ মার্চ দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা পেরিয়ে যায় ৯ হাজার। এপ্রিলে এসে করোনায় মৃত্যু সর্বোচ্চ চূড়া স্পর্শ করে। এই মাসেই একদিনে ওই সময়কার সর্বোচ্চ ১১২ জনের মৃত্যুও দেখেছে বাংলাদেশ। তাতে এপ্রিলের প্রথম ২৫ দিনেই করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু হয় দুই হাজার ৭ জনের। এর মধ্যে ১৫ এপ্রিল ১০ হাজার ও ২৫ এপ্রিল করোনায় মোট মৃত্যু ছাড়িয়ে যায় ১১ হাজার। এর ১৬ দিন পরে অর্থাৎ ১১ মে মৃত্যু ছাড়ায় ১২ হাজারের ঘর।

একমাস পর গত ১১ জুন দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ১৩ হাজার। এর পরের হাজার মৃত্যুতে সময় লাগে ১৫ দিন। গত ২৬ জুন দেশে করোনায় মৃত্যুর মোট সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ১৪ হাজার। এর ঠিক আট দিন পরেই ৪ জুলাই দেশে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়ায় ১৫ হাজার। আর এর পরের পাঁচ দিনেই মৃত্যু এবার ছাড়াল ১৬ হাজার। এই পাঁচ দিন তো বটেই, এর আগের দিনসহ সবশেষ ছয় দিনেই দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে দেড় শতাধিক করে। এর মধ্যে দুই দিন মৃত্যু ছাড়িয়েছে দুইশ’র ঘর।

করোনায় মৃত ১০ জনের ৭ জনই পুরুষ

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যুবরণকারী ২১২ জনের ১১৯ জন পুরুষ, ৯৩ জন নারী। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট ১১ হাজার ২৫৪ জন পুরুষ ও চার হাজার ৭৫০ জন নারী করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন। শতাংশ হিসাবে করোনায় মোট মৃত ব্যক্তির ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ পুরুষ, ২৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ নারী।

বয়সভিত্তিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে মোট মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি ষাটোর্ধ্ব। সবচেয়ে কম মৃত্যু হয়েছে নবজাতকসহ অনূর্ধ্ব-১০ বছর বয়সীদের।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত ১৬ হাজার চার জনের মধ্যে ৮ হাজার ৯০৯ জনই ষাটোর্ধ্ব, যা শতকরা হারে ৫৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৩ হাজার ৮৭১ জন (২৪ দশমিক ১৯ শতাংশ) ও ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী এক হাজার ৮৬২ জন (১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ) মারা গেছেন করোনা সংক্রমণ নিয়ে।

মৃত্যুর হার কম বয়সীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম। এর মধ্যে নবজাতক থেকে শুরু করে ১০ বছর বয়সীদের মধ্যে মারা গেছে ৫২ জন (শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ)। সবশেষ এক হাজার মৃত্যুর মধ্যে এই বয়সী কেউ নেই। অন্যদিকে ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী মারা গেছে ১০৩ জন (শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ)। এছাড়া করোনা সংক্রমণ নিয়ে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৩১৭ জন (১ দশমিক ৯৮ শতাংশ) ও ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৮৯০ জন (৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ) মারা গেছেন।

বিভাগভিত্তিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান

করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুতে বরাবরই এগিয়ে ছিল ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ। তবে গত কিছুদিন ধরে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে করোনায় মৃত্যু বেড়ে। গত কিছুদিনের মধ্যে প্রতিদিনই সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখা গেছে খুলনা বিভাগে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু কোনোদিন হয়েছে ঢাকা বিভাগে, কোনোদিন চট্টগ্রাম বিভাগে, কোনোদিন রাজশাহী বিভাগে। সার্বিক হিসাবে অবশ্য এখনো মৃত্যুতে এগিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগই।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, ঢাকা বিভাগে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন ৭ হাজার ৯৮৯ জন, যা মোট মৃত্যুর ৪৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুই হাজার ৯৪১ জন মারা গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে মৃত্যুর হার মোট মৃত্যুর ১৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ এক হাজার ৭৩৭ জন মারা গেছেন খুলনা বিভাগে, যা মোট মৃত্যুর ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। সবশেষ এক হাজার মৃত্যুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে খুলনাতেই— ৩০১ জন।

এছাড়া রাজশাহী বিভাগে এক হাজার ২০৮ জন (৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ), রংপুর বিভাগে ৭১৯ জন (৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ), সিলেট বিভাগে ৫৬৯ জন (৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ), বরিশাল বিভাগে ৪৬৯ জন (২ দশমিক ৯৩ শতাংশ) ও ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন ৩৭২ জন (২ দশমিক ৩২ শতাংশ)।

সংক্রমণের গতিও ঊর্ধ্বমুখী

গত বছরের ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার ১০৩ দিনের মাথায় দেশে এক লাখ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। দিনটি ছিল ১৮ জুন। এর ৩০ দিনের মাথায় ১৮ জুলাই সংক্রমণ পেরোয় দুই লাখ। এর ৩৯ দিন পর ২৬ আগস্ট সংক্রমণ তিন লাখের ঘর অতিক্রম করে।

এরপর সংক্রমণের গতি কমে আসে অনেকটাই। ৬১ দিন পর ২৬ অক্টোবর দেশে করোনা সংক্রমণ অতিক্রম করে চার লাখের ঘর। এখান থেকে সংক্রমণ পাঁচ লাখে পৌঁছাতে সময় লাগে আরও ৫৫ দিন, গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ছিল দিনটি। এরপর সংক্রমণের গতি আরও কমে যায়। প্রথম এক লাখ সংক্রমণ শনাক্তেই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১০৩ দিন সময় লেগেছে। এরপর পাঁচ থেকে ছয় লাখ সংক্রমণ পেরোতে সময় লাগে ৯৯ দিন। এ বছরের ২৯ মার্চ ৬ লাখ অতিক্রম করে সংক্রমণ।

এরপরই সংক্রমণের গতি বাড়তে থাকে বলা যায় জ্যামিতিক হারে। ছয় লাখ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার ১৬ দিনের মাথায় ১৪ এপ্রিল সংক্রমণ পেরিয়ে যায় সাত লাখ। এরপর অবশ্য ৪৭ সময় লাগে পরবর্তী লাখে পৌঁছাতে। ৩১ মে ৮ লাখ সংক্রমণের ঘর স্পর্শ করে করোনা। এরপর ২৯ দিনে শনাক্ত হয়েছে আরও একলাখ সংক্রমণ। জুনের ২৯ তারিখে ৯ লাখের ঘর পেরোয় এটি। আর এরপর মাত্র ১০ দিনে আরও এক লাখ পেরিয়ে ১০ লাখ সংক্রমণের ঘর পেরিয়ে গেল।

সারাবাংলা/টিআর

করোনাভাইরাস করোনায় মৃত্যু কোভিড-১৯

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর