গণপরিবহন চালুর খবরে বাসের টিকেট উধাও!
১২ জুলাই ২০২১ ১৯:৫৫
ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ ঈদুল আজহা সামনে রেখে ১৫ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত শিথিল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জানানো হয়েছে, এই ৯ দিন খোলা থাকবে দোকানপাট, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে গণপরিবহন। এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হতে না হতেই শুরু হয়েছে ‘ঈদযাত্রা’র প্রস্তুতি। করোনার এই মহামারিকালে সংক্রমণ-মৃত্যুর রেকর্ড যখন প্রায় প্রতিদিনই নতুন করে লিখতে হচ্ছে, ঠিক সেই সময়েও বাস কাউন্টারগুলোতে শুরু হয়েছে চাপ। শুধু তাই নয়, বাস কাউন্টারগুলো বলছে, এরই মধ্যে অনেক ট্রিপের টিকেট বিক্রিও শেষ!
সোমবার (১২ জুলাই) বিকেল নাগাদ জানা যায়, ১৫ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৯ দিন সময়ের জন্য শিথিল থাকবে কঠোর বিধিনিষেধ। সন্ধ্যায় তথ্য অধিদফতর থেকে তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হবে আগামীকাল মঙ্গলবার (১৩ জুলাই)।
তবে গাবতলী টার্মিনালের বেশ কয়েকটি বাস কাউন্টারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বিবরণী প্রকাশের আগে বিকেল থেকেই বাসের টিকেট উধাও হতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, পরিবহন খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদে গণপরিবহন চালু থাকার বিষয়টি তারা আগে থেকেই জানতেন!
ঢাকা থেকে লালমনিরহাটের বুড়িমারী রুটে চলাচলকারী বরকত ট্রাভেলসের কাউন্টার ম্যানেজার সাদ্দাম হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ঈদের আগে বাস চলবে— এ খবর আগে থেকেই জানতাম। এ কারণে আজ সিদ্ধান্তের আগেই আমাদের বেশিরভাগ টিকেট শেষ হয়েছে। আর কিছু বাকি ছিল, তা আজকের সরকারি সিদ্ধান্তের পরপরই অনেকে ফোন করে বুকিং দিয়েছে।
সাদ্দাম আরও বলেন, ১৬ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত বাসের কোনো টিকেট নেই। এসি এবং নন এসি— কোনো টিকেটই নেই। এক সিট বাদ দিয়ে আরেক সিট বিক্রি করা হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে যে ভাড়া ১০০০ টাকা ছিল, সেটা ১৫০০ টাকা করা হয়েছে। আর ডাবল সিটে যখন যাত্রী বহন করা হতো, তখন এই ভাড়া ছিল মাত্র ৫০০ টাকা।
ঢাকা-রংপুর রুটে চলাচলকারী নাবিল পরিবহনের কল্যাণপুর কাউন্টার ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল মামুন সারাবাংলাকে বলেন, রংপুর ও দিনাজপুরগামী পরিবহনের বেশিরভাগ টিকেট ফোনে বুকিং নেওয়া হয়েছে। অল্প কিছু টিকেট রয়েছে। এগুলো আজকের মধ্যেই শেষ হয়ে যেতে পারে।
দেশের অন্যতম বড় পরিবহন কোম্পানি হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার আলী আকবর বলেন, বাসের অর্ধেক টিকেট শেষ। তবে আরও অনেক টিকেট রয়েছে। কিন্তু সেগুলো কতক্ষণ থাকবে, সেটি বলা মুশকিল। প্রতি মিনিটে কয়েকটি করে টিকেট বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের রয়েল কাউন্টারে যোগাযোগ করে জানা যায়, তারা অগ্রিম কোনো টিকেট বিক্রি করে না। যাত্রী উপস্থিত হওয়ার পর একটি বাসের সিটগুলো বিক্রি হয়ে গেলেই বাস ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে ঈদে যাত্রীর চাপ বেশি থাকবে ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। বলছেন, ঢাকা থেকে কুমিল্লা রুটে চলাচলকারী যেকোনো বাসে ঈদের আগে ও পরের কয়েকদিন যাত্রীর চাপ অনেক বেশি থাকে।
রাজধানীর আরেক বাস টার্মিনাল মহাখালীর এনা পরিবহনের ম্যানেজার জাকির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-সিলেট রুটের যাত্রীদের অনেকেই এরই মধ্যে ফোনে টিকেট চেয়েছেন। শুধু ঢাকা-সিলেট রুটের অগ্রিম টিকেট দেওয়া হচ্ছে। তবে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে টিকেট অগ্রিম কোনো টিকেট দেওয়া হয় না, ঈদের দেওয়া হবে না। যাত্রী এলে টিকেট বিক্রি করে তাৎক্ষণিকভাবে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হবে।
গণপরিবহন চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে এনা পরিবহনের ব্যবস্থা পরিচালক ও ঢাকা জেলা বাস মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকার গণপরিবহন খুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ইতিবাচক হয়েছে। সাধারণ জনগণ ভালোভাবে গ্রামে যেতে পারবেন। পরিবহন চালু না থাকলে জনগণ বাড়ি ঠিকই যেতেন, তবে গাদাগাদি ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যেতেন। এছাড়া পরিবহন চালু হওয়ায় ঈদের পরিবহন শ্রমিকদেরও একটা আয়ের উৎস হবে।
এর আগে, রোববার (১১ জুলাই) জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক থেকে জানানো হয়, আগামী ২১ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা পালন করা হবে। এর আগে ৬ দিন ও পরে তিন দিন গণপরিবহন চালু থাকবে। ঈদের আগে ছয় দিন সাধারণ মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে গেলেও মাত্র তিন দিন পরই তাদের ঢাকায় ফিরতে হবে, যা অনেক কষ্টকর হবে মনে করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা নেতারা। তাই তারা ঈদের পর সাধারণ মানুষ যেন ঢাকায় ভালোভাবে ফিরতে পারেন, সেজন্য আরও কয়েকদিন গণপরিবহন চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সরকারের কাছে পরিবহন নেতারা একটি আবেদনও দেবেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সরকার গরু খামারিদের কথা এবং সার্বিক অর্থনীতির কথা বিবেচনায় নিয়ে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসঙ্গে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাই করা হবে, সবই স্বাস্থ্যবিধি মেনে হবে।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর