দক্ষিণ আফ্রিকায় জুমা সমর্থকদের দাঙ্গা, নিহত ৪৫
১৩ জুলাই ২০২১ ২০:৫৯
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা জেলে যাওয়ার পর থেকেই দেশটিতে দাঙ্গা শুরু হয়েছে। জ্যাকব জুমার সমর্থকরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। বেশিরভাগ প্রতিবাদ কর্মসূচি সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। এরইমধ্যে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে লুটপাট। এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে রয়েছে দাঙ্গার সুযোগে লুটপাটে অংশ নেওয়া কয়েকজন। যেমন, সোমবার (১২ জুলাই) দক্ষিণ আফ্রিকার জনপদ সোয়েটোর একটি শপিং সেন্টারে লুটপাটের সময় পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন ১০ জন।
মূলত কোয়াজুলু-নাটাল ও গুয়াতেং প্রদেশে সহিংসতায় সর্বাধিক নিহতের ঘটনা ঘটছে। কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশের প্রধান সিহলে জিকালালা সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, তার প্রদেশে দাঙ্গায় এ পর্যন্ত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া গুয়াতেং প্রদেশ জানিয়েছে, সেখানে নিহতের সংখ্যা ১৯।
দেশটিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৮০০ জনের বেশি সহিংসতাকারীকে আটক করেছে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনা মোতায়েন করেছে সরকার।
দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রমাফোসা এবারের সহিংসতাকে ১৯৯০ দশকে বর্ণবাদী ব্যবস্থা বিলুপ্ত হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় সবচেয়ে বড় সহিংসতা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভেকি সেলে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দেশে এভাবে লুটপাট চলতে থাকলে, ঝুঁকিপূর্ণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে খাদ্যসরবরাহ বিঘ্নিত হবে এবং এতে দুর্ভিক্ষ শুরু হতে পারে।
তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নসিভিওয়ে ম্যাপিসা-নাকাকুলা বলেছেন, এখনই দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রয়োজন দেখছে না সরকার।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে ১৫ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন দেশটির সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালত। সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ সাজার রায় দেন প্রধান বিচারপতি সিসি খামপেপে।
২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সংঘটিত একাধিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে জ্যাকব জুমার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ঘুষ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগে তদন্ত চলছে। এসব তদন্তে সহায়তা করতে জ্যাকব জুমাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক। তবে জ্যাকব জুমা মাত্র একবার আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার উপ প্রধান বিচারপতি রে জনডো এসব অভিযোগের তদন্ত করছেন। আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে হাজিরা না দেওয়ায় জ্যাকব জুমার বিরুদ্ধে দেশটির সাংবিধানিক আদালতে অবমাননার অভিযোগ আনেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারক সিসি খামপেপে তার রায়ে বলেন, ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে গ্রেফতার করা ছাড়া আমার হাতে আর কোনো উপায় রইলো না। এটি আমরা করছি এই আশায় যে, আইনের শাসন ও বিচার প্রক্রিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী এমন একটি দ্ব্যর্থহীন বার্তা সমাজে ছড়িয়ে যাবে’।
রায় ঘোষণার পর পুলিশের হাতে ধরা দিতে এক সপ্তাহ সময় পান জ্যাকব জুমা। গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) আদালতের বেধে দেওয়া সময় শেষ হওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট আগে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন জ্যাকব জুমা।
জুমা এর আগে বলেছিলেন, তিনি জেলে যেতে প্রস্তুত। কিন্তু এই বয়সে মহামারির মধ্যে তাকে জেলে পাঠানোর মানে হলো তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা। তিনি আরও দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার।
জেলে যাওয়ার দিন থেকেই সাবেক প্রেসিডেন্ট জুমার সমর্থকরা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেছে। টানা ৫ দিনের সহিংসতায় এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৪৫ জন। এতে দেশটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। ইতিমধ্যে পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি সেনা মোতায়েন করেছে সরকার।
সারাবাংলা/আইই