Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাফল্যের চূড়ায় কুমিল্লা কমিশনারেট, ২৭ বছর আগের বকেয়াও আদায়!

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুলাই ২০২১ ১১:২৫

ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ভ্যাট আদায়ের বেহাল দশা ভ্যাট কমিশনারেটগুলোর। গত জুন মাসে তো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীন ১২টি ভ্যাট কমিশনারেটের কারওই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এর মধ্যেও গত বছরের জুনের তুলনায় দেড়গুণেরও বেশি প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট। এই অর্জন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ ২৭ বছরের বকেয়া এক রাজস্ব আদায়েরও বিরল নজির গড়েছে এই ভ্যাট কমিশনারেট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট এখন সাফল্যের চূড়ায় অবস্থান করছে।

বিজ্ঞাপন

কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটের তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষ মাস অর্থাৎ গত জুন মাসে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬৯ কোটি টাকা। সেখানে এই মাসে ভ্যাট আদায় (সাময়িক) হয়েছে ৪৯১ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ে ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ ছিল ৩০৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত বছরের জুনের তুলনায় এ বছরের জুনে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৬২ শতাংশ বেশি।

এদিকে, বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট ভ্যাট আদায় করেছে ৩ হাজার ১৩৪ কোটি টাকার। অথচ এর আগে কুমিল্লা কমিশনারেটের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় ছিল ২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা, যা অর্জিত হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। এর চেয়ে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে গত অর্থবছরে। গত মে মাসেও অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন জমায় টানা ১০ম মাসের মতো সেরা হয়েছিল কুমিল্লা।

জানা গেছে, এ কমিশনারেটের সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয় আবুল খায়ের টোবোকো কোম্পানি লিমিটেড থেকে। সিগারেট ছাড়া অন্যান্য খাত থেকেও ২০২০ সালের জুলাই থেকে এ বছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসে গড়ে ৯৮ কোটি টাকা করে রাজস্ব এসেছিল। অন্যদিকে বিদায়ী জুন মাসে এর পরিমাণ ছিল ২৪০ কোটি টাকা! অর্থাৎ অন্যান্য মাসের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ!

মহামারিতে নিজেদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেও এসব অর্জন কুমিল্লা কমিশনারেটের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভাবিত এ সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে দেড় শতাধিক কর্মকর্তার অক্লান্ত পরিশ্রমের গল্প। তার সঙ্গে রয়েছে এই কমিশনারেটের নিবিড় নেতৃত্ব, তদারকি। ২৭ বছরের পুরনো বকেয়া আদায়ও তারই একটি প্রমাণ দেয়।

বিজ্ঞাপন

যেভাবেই হোক, বকেয়া রাজস্ব আদায় করতে হবে— এমন টার্গেট নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তা। কিন্তু ২৭ বছরের পুরনো এক বকেয়া রাজস্ব তো প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। এরকম ঘটনায় নানা ধরনের জটিলতা জড়িয়ে থাকে। পারতপক্ষে তাই সবাই এ ধরনের ঘটনা এড়িয়ে চলতে চান। কিন্তু কুমিল্লা কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা কামরুজ্জামান হাল ছাড়েননি। দীর্ঘ ২৭ বছরের পুরনো বকেয়া নিয়ে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে দেখা করেন। মৃত ব্যক্তির সন্তানদের বোঝান। এরপর মৃত ব্যক্তির স্ত্রী ও সন্তানদের কাছ থেকে মরহুমের রেখে যাওয়া দীর্ঘ দিনের পুরনো বকেয়া সাড়ে ৯ লাখ টাকা আদায় করেন।

কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে নানামুখী উদ্যোগের ফলেই এই সাফল্য এসেছে। বিশেষ করে কর্মকর্তারা বলছেন কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরীর কথা। তিনি যোগ দেওয়ার পর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা, নিবিড় মনিটরিং ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করার ফলেই রাজস্ব জমার পরিমাণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত বেড়েছে।

কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তারা বলছেন, সদর দফতর, কুমিল্লা ও ছয়টি বিভাগে (কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া) রাজস্ব আদায়ের জন্য পৃথক টাস্কফোর্স গঠন করে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিপন সারাবাংলাকে বলেন, রাজস্ব আদায়ের জন্য বিভাগ থেকে একাধিক বিশেষ টিম গঠন করা হয়। রাজস্ব আদায়ের জন্যে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সশরীরে যেতে হয়। পর্যান্ত জনবল ও সার্কেল পর্যায়ে গাড়ি না থাকা সত্ত্বেও কর্মকর্তাদের আন্তরিক পরিশ্রমের ফলে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।

কুমিল্লা কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল হাকিম সারাবাংলাকে বলেন বলেন, করোনাকালে কুমিল্লা টিমে বিশেষ তৎপরতা অব্যাহত আছে। সাহস ও উদ্যম নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজস্ব আদায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যথাযথ রাজস্ব আদায় নিশ্চিতে উদ্যোগী হওয়ায় রাজস্ব আহরণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

সাফল্য নিয়ে কুমিল্লা কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, মহামারিতে আগের বছরের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন ছিল। সেখানে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬২ শতাংশ! ভয়কে জয় করে অর্জনকে এ পর্যায়ে নেওয়া সহজ ছিল না। একটি ব্যতিক্রমী পরিশ্রমী কর্মপ্রবণ উদ্যমী দলের পক্ষে এমন অর্জন সম্ভব। অর্থবছরের প্রথম থেকে দেড়শ সদস্যের টিমকে ৪৭টি জুম সভায় প্রশিক্ষিত ও নিবিড় মনিটরিং করা হয়েছে। সার্কেলগুলোর মধ্যে লাল-হলুদ-সবুজের সুস্থ প্রতিযোগিতা অভূতপূর্ব সাফল্যের অন্যতম কারণ।

সারাবাংলা/এসজে/টিআর

২৭ বছর আগের বকেয়াও আদায় কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর