‘বিচারালয় যেন বাণিজ্যালয়ে পরিণত না হয়’

ঢাকা: বিচারালয় কোন অবস্থাতেই যেন বাণিজ্যালয়ে পরিণত না হয়— নিজের কর্মজীবন শেষে সবার প্রতি এমন আহ্বান জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী।

সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত ৬৭ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ায় বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) ছিল বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর শেষ কর্মদিবস। বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।

এদিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীকে বিদায় সম্ভাষণ জানান। ভার্চুয়াল এই আয়োজনে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবীরা যুক্ত ছিলেন।

বিদায় বেলায় নিজের অনুভূতি জানিয়ে বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘সবাইকে আহ্বান জানাই, আসুন একটি সুস্থ-সরল-স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক বিচার বিভাগের অবকাঠামো আমরা রচনা করে যাই। আজ আমার বিচারিক জীবনের ইতি টানছি। এই মুর্হূতে একটি দাবি রেখে যেতে চাই— বিচারপ্রার্থীদের এই স্বর্গীয় আশ্রয়স্থল বিচারালয় কোনো অবস্থাতেই যেন বাণিজ্যালয়ে পরিণত না হয়। এটা বার ও বেঞ্চ— উভয়কেই শক্তভাবে রুখতে হবে।’

বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘৪১ বছরের এই দীর্ঘ বিচারিক জীবনে কতটুকু দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি, তার বিচারের ভার আপনাদের ওপর ন্যস্ত। শেষ সময়ে বলে যেতে চাই— আইনের শাসন ছাড়া কোনো দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। বাংলাদেশের উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা চলছে তার সফল অংশীদার হবে এই বিচার বিভাগ।’

নিজের স্ত্রীর সন্তানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই বিচারপতি বলেন, ‘গত ৪২ বছরে আমার স্ত্রী অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তার এই ত্যাগের ফলে আমার এই বিচারিক জীবন অনেকটাই সুন্দর ছিল। সন্তানেরা আমার বিচারিক জীবনে অনেক ত্যাগ করেছেন। জনগণের জন্য কাজ করতে আমাকে অনেক উৎসাহিত করেছেন। বিদায় বেলায় সহকর্মী, আইনজীবী এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’

বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ২৯ জুলাই কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ও এলএলবি পাস করে ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া বার অ্যাসোসিয়েশনে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এরপর ১৯৮০ সালে তিনি জুডিশিয়াল সার্ভিসে মুন্সেফ (বিচারক) হিসেবে যোগ দেন।

১৯৯৭ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী। এরপর ২০০৯ সালে তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। আর ২০১১ সালে তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন। এরপর ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগের বিচারপতি হন আবু বকর সিদ্দিকী। তার ছোট ভাই বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীও আপিল বিভাগের বিচারপতি।

সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর

অবসর বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী