‘ক্রেতাদের মাস্ক পরতে বললে অন্য দোকানে চলে যায়’
১৭ জুলাই ২০২১ ০৯:১৪
ঢাকা: ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করার দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর ছোটবড় মার্কেট ও শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। একে তো মানুষে ঠাসাঠাসি অবস্থা, তার ওপর স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও ছিল না দোকান মালিক ও প্রশাসনের তৎপরতা। অথচ এসব দোকান মালিক সমিতির নেতারা মার্কেট খোলার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলে দাবি জানিয়ে বারবার বলেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ব্যবসা করবেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানী সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আমরা সব ব্যবস্থা রেখেছি। হাত ধোয়ার বেসিন করেছি কিন্তু কেউ তার কাছে যায় না। দোকানদার কাউকে মাস্ক পড়তে বললে অন্য দোকানে চলে যায়। ক্রেতা বিচিত্র প্রকারের। তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা মুশকিল।
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই শুক্রবার (১৬ জুলাই) রাজধানীর বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, এভাবে সাতদিন চলার ফলে যে ক্ষতি হবে, তা হয়তবা একমাস বিধিনিষেধ দিয়েও আর পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।
রাজধানীর টিকাটুলি এলাকায় রাজধানী সুপার মার্কেট। এই মার্কেটে শিশুসহ নারী-পুরুষ সবাইকে সমানে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। কারো চলাফেরায় সামান্যতম স্বাস্থ্যবিধি মানার দৃশ্য ছিল না। দেশে যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ আকারে চলছে সেটাও ছিল না তাদের কার্যকলাপের চিত্রে। তারা হয়তো জানেনই না, দেশে করোনায় প্রতিদিন প্রায় ২০০ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। প্রতিদিন ১০ হাজারের ওপরে লোক আক্রান্ত হচ্ছে।
এদিকে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানলেন কী না এ নিয়ে মার্কেট কর্তৃপক্ষেরও কোনো মাথা ব্যথা নাই। শপিং মল বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্কে প্রবেশের সময় নিরাপত্তারক্ষীরা বারবার চেক করেন, কেউ মাস্ক ব্যতীত প্রবেশ করছে কী না? এমনকি জীবাণুনাশক দিয়ে হোল বডিসহ আসবাবপত্র স্প্রে করা হয়ে থাকে। তবে রাজধানী সুপার মার্কেটের মতো মার্কেটে এর কোনো কিছু চোখে পড়ার মত ছিল না।
আনিসুর রহমান তার স্ত্রী ছেলে মেয়েকে নিয়ে জুরাইন এলাকা থেকে মার্কেট করতে এসেছেন। তাদের কারও মুখে মাস্ক নেই। জানতে চাইতেই ক্ষেপে ওঠেন তিনি, আর কোনো প্রশ্ন নাই। মাস্ক পড়লে করোনা হবে না তার কোনো গ্যারান্টি আছে?
মেয়ের জন্য ড্রেস কিনে ১০ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে মার্কেট থেকে বের হন নাজমুন নাহার পলি। মুখে মাস্ক নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার দুই চারদিনের জন্য লকডাউন খুলে দিল কেন? বন্ধ ছিল ভালোই তো ছিল। সবাই ঘরে ছিলাম। মার্কেট খুলেছে তাই মেয়ে বায়না ধরেছে ড্রেস লাগবে। তাই মার্কেটে আসা।
রাজধানী সুপার মার্কেটের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা যায় মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায়। ১০ নম্বর গোল চত্বর থেকে কাফরুল থানার দিকে যেতে সড়কের কিছু অংশ ও ফুটপাত জুড়ে বসেছে অস্থায়ী মার্কেট। হাজার হাজার নারী সেখানে কেনাকাটা করতে এসেছেন। এমন অবস্থা যে, মানুষে মানুষে ঢেউ খেলছে সেখানে। বেশিরভাগেরই মুখে নেই মাস্ক। আবার কেউ মানুষের চাপে নড়াচড়াও করতে পারছে না।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কাজ করছেন এমন চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, সরকার বিধিনিষেধ শিথিল করলেও তদারকির কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এতে ১৪ দিনের বন্ধে যে লাভ হয়েছিল তা সাতদিনেই বিলীন হয়ে যাবে। শিথিল করার পাশাপাশি কঠোর তদারকিরও ব্যবস্থা রাখা উচিত ছিল।
প্রায় একই অবস্থা রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকাতেও। ক্রেতা-বিক্রেতা থেকে শুরু করে পথচারীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে প্রশ্ন করলেই উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘লকডাউন’ তুলে নিল কেন সরকার?
সারাবাংলা/ইউজে/এএম