কিউবার বিরুদ্ধে মার্কিন চক্রান্ত রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান
১৭ জুলাই ২০২১ ২২:৪০
ঢাকা: কিউবার বিপ্লবী সরকার ও জনগণের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার রোল মডেল সমাজতান্ত্রিক কিউবার বিরুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দ।
শনিবার (১৭ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সংহতি সমাবেশ থেকে এই আহ্বান জানান তারা।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা নাঈমা খালেদা মনিকা। সভা পরিচালনা করেন বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান লিপন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯৫৯ সালের সফল বিপ্লবের পর গত ৬০ বছরে কিউবা গোটা দুনিয়ার সামনে স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার একটা রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ৬০ বছর ধরে প্রতি বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক কিউবাকে ধ্বংস করার জন্য ও তাদের নেতা কমরেড ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে হত্যার জন্য ৬৩৮ বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।
এছাড়াও, বাংলদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থনকারী বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু কিউবা সরকার ও জনগণের পাশে থাকা তাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেছেন সমাবেশের বক্তারা।
বক্তরা বলেন, কিউবা একমাত্র দেশ যে দেশের নাগরিকদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যারাই যুক্তরাষ্ট্রে যাবে তাদেরকে নাগরিত্ব দেয়া হবে। কিন্তু দুই একজন মাদক কারবারী, দুষ্কৃতিকারী ছাড়া কোন কিউবান ওই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। ৬০ বছর ধরে অন্যায় অবরোধ জারি রেখে চরম অর্থনৈতিক সংকটেও সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে পুঁজিবাদী অভিমুখী করতে পারেনি কিউবানদেরকে। কিউবার বিপ্লবী জনগণ সমাজতন্ত্রের হীরা ফেলে পুঁজিবাদের কাঁচ হাতে তুলে নিয়ে ভিখিরি হতে চায়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ৯০ মাইল দূরে সাম্রাজ্যবাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সমাজতান্ত্রিক কিউবা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
বক্তরা আরও বলেন, ১৯৫৯ সালে বিপ্লবের পর সাম্রাজ্যবাদের মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নাকের ডগায় শ্রমিকশ্রেণির রাষ্ট্র মেনে নিতে পারেনি। শুরু হয় একের পর এক ষড়যন্ত্র, করপোরেট মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা। এতেও কাজ না হওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডির অনুমতি নিয়ে সিআইএ কিউবা থেকে পালিয়ে আসা মাদক কারবারী, জুয়ারি, ক্রিমিনালদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতি বিপ্লব ঘটিয়ে ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে চায়। সে লক্ষ্যে ১৯৬১ সালের ১৭ এপ্রিল ১৫০০ জন কিউবান ক্রিমিনালকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে বিপুল পরিমাণ মার্সেনারি ও উচ্চ প্রশিক্ষিত শতাধিক মার্কিন সামরিক ও সিআইএ এর সম্মিলিত বাহিনী ১৬টি বি-২৬ বোমারু বিমান, আটটি সি-৪৬ ও ছয়টি সি-৫৪ পরিবহন বিমান এবং ৫টি বড় সাপ্লাই জাহাজে করে প্রচুর ট্যাংক, আর্টিলারী ট্র্রাক, গোলাবারুদ নিয়ে শুরু হয় চরম অভিযান।
কিউবার পিপলস আর্মি এবং কিউবার বিপ্লবী জনতার প্রবল প্রতিরোধ প্রতিবিপ্লবী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে। ১৭-১৯ এপ্রিল ১৯৬১ মাত্র তিন দিনে অভিযান ইধু ড়ভ চরমং সমাপ্তি ঘটে দখলদার বাহিনীর চরম পরাজয়ের মাধ্যমে। এতে শতাধিক দখলদার নিহত হয়, ৩০০ জন আহত হয় এবং ১২০০ জন আটক হয়। মার্কিন বাহিনীরও চার জন নিহত হয় এবং অর্ধশত এজেন্ট আটক হয়। মার্কিন বাহিনীর সাতটি বোমারু বিমান, দুইটি জাহাজ সবগুলো ট্যাংক ধ্বংস হয় এবং বাকি সকল অস্ত্রশস্ত্র কিউবান বাহিনীর হস্তগত হয়। আটকৃতদের প্রায় বেশিরভাগ আটক হয় কিউবান জনগণের হাতে। ৬০ বছর পরে এবারেও মার্কিন চক্রান্ত ব্যর্থ করতে লাখো কিউবান সে দেশের প্রেসিডেন্ট দানিয়েল কানেজের আহ্বানে রাস্তায় নেমেছে। আশা করি আগের মতোই কিউবার বিপ্লবী জনগণ সকল ষড়যন্ত্র চক্রান্ত প্রতিবিপ্লবী অপতৎপরতা প্রতিহত করে কিউবার বিপ্লব ও সমাজতন্ত্রকে রক্ষা করবে।
বক্তরা বলেন, কিউবা সরকার করোনা মহামারিতে নিজের দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি ইতালি, ফ্রান্সসহ ২৭ দেশে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়ে বিশ্ব মানবতাকে রক্ষা করেছে। ভ্যাকসিন বাণিজ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পাঁচটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে। কিউবার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা জনগণের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অন্যদিকে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ কোন বহিঃশক্তি কিউবাকে ধ্বংস করতে পারবে না বলেও বক্তাগণ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।একইসঙ্গে, কিউবার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সরকারের পাশে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীকে সংহতি জানিয়ে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একেএম