১৫ লাখ মানুষের বাগেরহাটে মাত্র ১০০ শয্যার হাসপাতাল, নেই আইসিইউ
২০ জুলাই ২০২১ ১০:০৭
সারাদেশের মতো বাগেরহাটেও ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ ১৫ লাখ মানুষের এই জেলায় রয়েছে মাত্র ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল। যেটা পরিচালিত হচ্ছে আগের ৫০ বেডের সময়কার কর্মীদের দিয়েই। অন্যদিকে করোনা চিকিৎসায় সবচেয়ে জরুরি পূর্ণাঙ্গ কোনো আইসিইউ বেড নেই।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলার সিভিল সার্জন ডাক্তার কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, তিনটি আইসিইউ বেড থাকলেও দক্ষ জনবলের অভাবে সেগুলো এসবিইউ বেড হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এক কথায় হাসপাতলে এখনো পূর্ণাঙ্গ আইসিইউ বেড স্থাপন করা হয়নি।
তিনি জানান, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময় সম্প্রতি এই তিনটি আইসিইউ বেড প্রদান করেছেন। কিন্তু আইসিইউ বেড পরিচালনার জন্য টেকনিশিয়ান বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল নেই।
বাগেরহাটের একমাত্র ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে জানিয়ে কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, ৫০ শয্যার জনবল নিয়ে ১০০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। তারপরও এই জনবল নিয়েই করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি জানান, আগামী এক বছরের মধ্যে এই হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড এবং ২০টি আইসোলেশন ইউনিট করার জন্য ৭ কোটি ২ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। গণপূর্ত অধিদফতর ইতোমধ্যেই দরপত্র আহ্বান করেছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাটে এখন পর্যন্ত ১১০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। প্রতিদিনই মৃত্যু হচ্ছে করোনা উপসর্গ নিয়ে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কে এম আজিজুর রহমান জানান, বাগেরহাটের করোনা পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই প্রাণঘাতি এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসবে।
বাগেরহাটের করোনা চিকিৎসার সার্বিক বিষয় নিয়ে খুলনা বিএল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবিএম মোশারফ হোসেন বলেন, আমার মনে হয় সরকারের মধ্যে দুটি অংশ রয়েছে। এই দুটি অংশের সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে এবং খুশি করতে ব্যস্ত। তবে একটি অংশ দেশ ও জাতির কল্যাণ চাচ্ছে। করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাগেরহাট জেলায়ও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির বাগেরহাট জেলার সাধারণ সম্পাদক ফররুখ হাসান জুয়েল বলেন, গতবছরের আগস্ট থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত একটি সময় পেয়েছিলাম। এই রোগটি সারাবিশ্বে একবার হয়ে আবার ফিরে আসছে। এই তথ্য সরকারের কাছেও ছিল। কিন্তু সরকার এই সময়টুকু কাজে লাগায়নি। করোনা মোকাবিলার জন্য কোনো প্রস্তুতি নেইনি। ফলে আজকের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নানামুখী সংকট থাকলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন করোনা চিকিৎসায় দায়িত্বরতরা। স্থানীয় সংসদ সদস্যের দেওয়া দুটি গাড়িতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চারজন স্বাস্থ্যকর্মী বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ করছেন। চিকিৎসকরা যেন গ্রামে রোগীর বাড়িতে যেতে পারেন সেজন্যও গাড়ি দিয়েছেন ওই সংসদ সদস্য। ‘ডাক্তারের কাছে রোগী নয়, রোগীর কাছে ডাক্তার।’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে দুইজন চিকিৎসক সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এএম