Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনায় ১৩ মাসের মৃত্যু পরের সাড়ে ৩ মাসে দ্বিগুণ

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২০ জুলাই ২০২১ ১৪:১০

ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিত্র ক্রমেই আগের তুলনায় অনেক বেশি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। দিন গেলেই সংক্রমণ ও মৃত্যুতে হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সবশেষ হিসাব বলছে, এখন পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে মোট মৃত্যু পেরিয়ে গেছে ১৮ হাজার। আতঙ্কের তথ্য হলো— এর অর্ধেক মৃত্যুই ঘটেছে সবশেষ প্রায় সাড়ে তিন মাস সময়ে। অর্থাৎ গত বছরের মার্চ থেকে শুরু করে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৩ মাসে করোনা সংক্রমণ নিয়ে যত মানুষ মারা গেছেন, তার চেয়েও বেশি মানুষ মারা গেছেন এ বছরের এপ্রিল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সময়ে।

বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর ১৮ মার্চ প্রথম করোনায় মৃত্যুর সাক্ষী হয় বাংলাদেশ। এরপর এ বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৩৮৯ দিনে দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু হয় ৯ হাজার ৪৬ জনের। অন্যদিকে গত ১ এপ্রিল থেকে গতকাল সোমবার (১৯ জুলাই) পর্যন্ত মাত্র ১১০ দিনেই করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৭৯ জনের।

স্বাভাবিকভাবেই এপ্রিল থেকে পরের সাড়ে তিন মাসে মৃত্যুর হারও বেড়েছে। আগের ১৩ মাসে ৬ লাখ ১১ হাজার ২৯৫ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল সে হিসাবে ওই সময়ে সংক্রমণ বিবেচনায় মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অন্যদিকে ১ এপ্রিল থেকে পরের ১১০ দিনে দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৫ জনের শরীরে। এই সময়ে সংক্রমণ বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এরই মধ্যে গ্রামাঞ্চলেও কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে যত বেশি সংক্রমণ বাড়ছে, মৃত্যুর ঝুঁকিও তত বাড়ছে। বিশেষ করে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি ও বিভিন্ন ধরনের রোকে আক্রান্তরা তো আছেনই, এখন তরুণদের মধ্যেও করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু বাড়ছে। এছাড়া অনেকেই করোনা সংক্রমিত হলেও হাসপাতালে যেতে দেরি করছেন। ফলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হওয়ার কারণেও অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ঈদুল আজহার সময়ে সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের পাশাপাশি ঈদের পর কঠোর বিধিনিষেধ যথাযথভাবে অনুসরণের আহ্বান জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

বিজ্ঞাপন

মাস হিসাবে মৃত্যুর পরিসংখ্যান

দেশে গত বছরের ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। ওই মাসে সব মিলিয়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হয় করোনায়। এরপর করোনায় মৃত্যু বাড়তে থাকে। গত বছরের এপ্রিলে ১৬৩ জন, মে মাসে ৪৮২ জন, জুনে ১ হাজার ১৯৭ জন, জুলাইয়ে ১ হাজার ২৬৪ ও আগস্টে ১ হাজার ১৭০ জনের মৃত্যু হয়। এরপর অবশ্য কিছুটা কমে আসে মৃত্যুর গতি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৯৭০ জন, অক্টোবরে ৬৭২ জন, নভেম্বরে ৭২১ জন ও ডিসেম্বরে ৯১৫ জনের মৃত্যু হয়। এ বছরের শুরুর দিকেও করোনায় মৃত্যুর গতি কিছুটা তুলনামূলকভাবে কম। জানুয়ারিতে ৫৬৮ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৮১ জন ও মার্চে ৬৩৮ জনের মৃত্যু হয় করোনায়। সব মিলিয়ে ১৩ মাস, সুনির্দিষ্টভাবে বললে ৩৮৯ দিনে ৯ হাজার ৪৬ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল করোনা।

এ বছরের এপ্রিল থেকে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর গতি বাড়তে থাকে রীতিমতো জ্যামিতিক হারে। কেবল এপ্রিল মাসেই প্রাণ হারান ২ হাজার ৪০৪ জন। মে মাসে মৃত্যু কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৬৯ জনে। তবে জুনে ফের ১ হাজার ৮৮৪ জনের প্রাণ কেড়ে নেয় করোনা। আর সব রেকর্ড তছনছ করে দিয়ে জুলাইয়ের প্রথম ১৯ দিনেই করোনা কেড়ে নিয়েছে তিন হাজার ৬২২ জনের প্রাণ।

সব মিলিয়ে প্রথম ৩৮৯ দিনে ৯ হাজার ৪৬ প্রাণহানির বিপরীতে পরের ১১০ দিনে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা ৯ হাজার ৭৯। অর্থাৎ শেষ সাড়ে তিন মাস সময়ে করোনা মৃত্যু দ্বিগুণ হয়েছে। আর সবশেষ ১৫ দিনের প্রতি ৫ দিনে হাজার মৃত্যুর সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ।

২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যু যে ৫ দিনে

১৯ জুলাই: কোভিড-১৯ সংক্রমিত ২৩১ জনের মৃত্যু, যা এখন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড
১১ জুলাই: ২৩০ জনের মৃত্যু, যা ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু
১৫ জুলাই: ২২৬ জনের মৃত্যু, যা করোনা সংক্রমণ নিয়ে একদিনে তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু
১৮ জুলাই: ২২৫ জনের মৃত্যু, যা করোনা সংক্রমণ নিয়ে ২৪ ঘণ্টায় চতুর্থ সর্বোচ্চ মৃত্যু
১২ জুলাই: ২২০ জনের মৃত্যু, যা করোনা সংক্রমণ নিয়ে একদিনে পঞ্চম সর্বোচ্চ মৃত্যু

এদিকে, দেশে এখন পর্যন্ত মোট ১২ হাজার ৫৫০ জন পুরুষ এবং পাঁচ হাজার ৫৭৫ জন নারী করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন। শতাংশ হিসাবে করোনায় মোট মৃত ব্যক্তির ৬৯ দশমিক ২৪ শতাংশ পুরুষ, ৩০ দশমিক ৭৬ শতাংশ নারী।
এ পরিস্থিতিতে করণীয়

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে করণীয় কী— জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বেশি বেড়েছে। একই সময়ে কিন্তু সংক্রমণও অনেক বেড়েছে। সংক্রমণ বাড়লেই বয়স্ক ও কো-মরবিডিটি যাদের আছে তাদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়বে। আর বয়স্ক ও এ ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। তাই, সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ডা. আলমগীর আরও বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে সবচেয়ে জরুরি হলো ব্যক্তির সচেতনতা। সরকারকে অবশ্যই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু ব্যক্তি সচেতন হয়ে সরকারি পদক্ষেপে সহযোগিতা না করলে বিপদ বাড়বে। কারণ, কোনো এলাকায় একজন সংক্রমিত হলেই তার পরিবার-সমাজে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকবে।

এ কারণেই ঈদুল আজহার সময় সরকারি বিধিনিষেধ শিথিল থাকলেও সবাইকে মাস্ক পরতে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পরামর্শ দেন ডা. আলমগীর। তিনি বলেন, বিধিনিষেধ শিথিল মানেই স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে উদাসীনতা নয়। সবাইকে সচেতন হতে হবে। ঈদে আনন্দ করতে গেলেও সতর্ক থাকতে হবে। নইলে ভুগতে হবে আমাদেরই।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

করোনাভাইরাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর