Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আপিল বিভাগে কমছে বিচারক, বাড়ছে মামলা

কামরুল ইসলাম ফকির, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ জুলাই ২০২১ ০৮:১৫

ঢাকা: দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে শুরু করে নিম্ন আদালত পর্যন্ত প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে মামলার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে সে অনুপাতে বাড়ছে না বিচারকের সংখ্যা। উপরন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা কমে যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচাপতির সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ জনে। অথচ ২০০৯ সালে আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ছিল ১১ জন।

সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৯ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের শেষে সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগে আপিল মামলা ছিল ২ হাজার ৯৫০টি। ওই বছরে নতুন করে আপিল দায়ের করা হয় ৫৪৮টি। পুরো বছরে আপিল নিষ্পত্তি হয় মাত্র ১৪৪টি। বছর শেষে আপিল বিভাগে অনিষ্পন্ন (পেন্ডিং) থেকে যায় ৩ হাজার ৩৫৪টি মামলা।

বিজ্ঞাপন

বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মোট মামলার ৫৭ শতাংশ ছিল পিটিশন, ২৯ শতাংশ ছিল বিবিধ পিটিশন আর ১৪ শতাংশ ছিল আপিল। বছরের শুরুতে অনিষ্পন্নকৃত পিটিশন ছিল ১০ হাজার ৫৬৫টি, নতুন মামলা ফাইল করা হয় ৬ হাজার ৩৪৬টি। ওই বছরে পিটিশন নিষ্পত্তি হয় মাত্র ৩ হাজার ৪০৫টি। বছরে শেষে ১৩ হাজার ৫০৬টি পিটিশন অনিষ্পন্ন অবস্থায় থেকে যায়।

বিবিধ পিটিশনের মধ্যে ২০১৯ সালে শুরুতে অনিষ্পন্নকৃত পিটিশন ছিল ৬ হাজার ৯২৭টি। ওই বছরে নতুন করে আরও ২ হাজার ৫৮৪টি বিবিধ পিটিশন দায়ের হয়। ওই বছরে নিষ্পত্তি হয় মাত্র ২ হাজার ৭৫৪টি বিবিধ পিটিশন। বছরে শেষে অনিষ্পন্ন অবস্থায় থেকে যায় ৬ হজার ৭৫৭টি বিবিধ পিটিশন।

১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়। আপিল বিভাগে ১৯৭২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে মামলার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে যেভাবে মামলার সংখ্যা বাড়ছে, সেই অনুপাতে মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আবার মামলা বৃদ্ধির অনুপাতে বিচারকও নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

বিজ্ঞাপন

১৯৭২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতিসহ বিচারক ছিল তিন জন। আর সে সময় অনিষ্পন্নকৃত পিটিশন ছিল ২ হাজার ২৮৪টি। এর পরের বছর অনিষ্পন্নকৃত পিটিশনের সংখ্যা বেড়ে হয় ২ হাজার ৩০০টি। ৭৪ সালে হয় ২ হাজার ৩০৮টি, ৭৫ সালে হয় ২ হাজার ৩১৪টি। এভাবে ১৯৭৮ সালে পিটিশনের সংখ্যা বেড়ে হয় ২ হাজার ৪০০টি। ১৯৮০ সালে হয় ২ হাজার ৫৩৯টি। প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে এ সংখ্যা বেড়ে ১৯৯০ সালে হয় ২ হাজার ৮১৭টি। ৯১ সালে হয় ৩ হাজার ৩টি। এরপর প্রতি বছর পিটিশনের সংখ্যা বাড়তেই থাকে।

২০০০ সালের শেষে পিটিশনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ হাজার ২৭৮টি। ২০০১ থেকে প্রতি বছর পিটিশনের সংখ্যা বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকে। তবে ২০১০ সালের দিকে এসে আপিল বিভাগে অনিষ্পত্তিকৃত পিটিশনের সংখ্যা কিছুটা কমে হয় ৪ হাজার ৪৩০টি। পরের বছর থেকে আবার অস্বাভাবিকভাবে সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০১১ সালে আপিল বিভাগে ৬ হাজার ৬৮২টি পিটিশন অনিষ্পন্ন থেকে যায়। এরপর ২০১৮ সালে এসে আপিল বিভাগে অনিষ্পন্নকৃত পিটিশনের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ওই বছর অনিষ্পন্ন থেকে যায় ১০ হাজার ৫৬৫টি পিটিশন। এরপর ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ১৬ হাজার ৫০৬টি পিটিশন অনিষ্পন্ন অবস্থায় থেকে যায়।

একইভাবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিবিধ পিটিশন এবং আপিলের সংখ্যা প্রতিবছর বাড়তে থাকে। বছর শেষে বিপুল পরিমাণ মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় থেকেও যায়। ২০১৯ সাল শেষে ৬ হাজার ৭৫৭টি বিবিধ পিটিশন অনিষ্পন্ন অবস্থায় থেকে যায়। আর আপিল অনিষ্পন্ন থাকে ৩৩৫৪টি।

এছাড়া গত পাঁচ দশক ধরে আপিল বিভাগে প্রতিবছরই বিচারকের সংখ্যাও ওঠানামা করতে থাকে। ১৯৭২ সালে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ছিল তিনজন। ৭৩ সালে এসে হয় চার জন, ৭৫ সালে তা বেড়ে হয় পাঁচ জন। পরে ১৯৮০ সালেও আপিল বিভাগে বিচারপতির ছিল পাঁচ জন। এরপর দীর্ঘ সময় বিচারপতির সংখ্যা চার থেকে পাঁচ জনে ওঠানামা করতে থাকে। ১৯৯৯ সালে এসে আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা হয় ছয় জন। পরে ২০০৩ সালে সাত এবং ২০০৪ সালে হয় আট জন। এরপর ২০০৯ সালে আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ জনে। এটাই সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে আপিল বিভাগে সর্বোচ্চ বিচারপতি থাকার ঘটনা। এরপর আবার বিচারপতির সংখ্যা কমতে থাকে। কমতে কমতে ২০২১ সালের জুলাই মাসে এসে আবার পাঁচ জনে এসে ঠেকেছে।

হাইকোর্টে বিভাগে মামলা ও বিচারকের সংখ্যা

২০১৯ সালের শেষে হাইকোর্ট বিভাগে ৯৭ হাজার ৬১৬টি দেওয়ানী মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় ছিল। একই সময়ে ফৌজদারি মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় ছিল ২ লাখ ৯২ হাজার ৪২৯টি। ওই বছর শেষে ৮৭ হাজার ৮৫৩টি রিট মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় থাকে। এছাড়াও ২০১৯ সালে হাইকোর্ট বিভাগে ১১ হাজার ১৭০টি মূল (Original) মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় থেকে যায়।

২০১৯ সালের শেষে হাইকোর্ট বিভাগে অনিষ্পন্নকৃত মোট মামলার মধ্যে ৬০ শতাংশ হলো ফৌজদারি মামলা, ২০ শতাংশ হলো দেওয়ানী মামলা, ১৮ শতাংশ রিট এবং ২ শতাংশ মূল (Original) মামলা ছিল।

বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি আছেন ৯২ জন। আর আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচ জন বিচারপতি দায়িত্ব পালন করছেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

আপিল বিভাগ বিচারক

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর