Sunday 29 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্কুলে ফেরাতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের তালিকা হচ্ছে

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ জুলাই ২০২১ ২৩:১৭ | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২১ ২৩:১৮
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফাইল ছবি

ঢাকা: প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে সবেমাত্র মাধ্যমিকে পা রেখেছে সাইফুল। নতুন বইয়ের পাতা উল্টে-পাল্টে দেখার আগেই মহামারি করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে প্রিয় বিদ্যালয়। একদিকে বিদ্যালয় বন্ধ, অন্যদিকে বাড়িতে পড়ানোর কেউ নেই। অনলাইন কিংবা টেলিভিশনে পাঠদানের যে ব্যবস্থা সরকার করেছে সে সুযোগও তার আওতার বাইরে। যে কারণে পটুয়াখালীর প্রত্যন্ত গ্রাম কমলাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী আপাতত পড়াশুনা গুটিয়ে বাবার কাজের সহযোগী হয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে দেড় বছর ধরে দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যে কারণে দারিদ্রপীড়িত এলাকার ছেলেমেয়েদের এখন সময় কাটে বাবা মায়ের সঙ্গে খেত-খামারে কাজ করে। ফলে তাদের নিয়মিত পড়াশুনায় দূরত্ব বাড়ছে। বাড়ছে ঝরে পড়ার আশঙ্কা। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নীতিনির্ধারকদেরও।

বিজ্ঞাপন

এই ঝরে পড়া কিংবা বিদ্যালয়ে না ফেরা শিক্ষার্থীর সংখ্যা কত হতে পারে তার একটি জরিপ শুরু করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাধ্যমিকেও চলছে কাজ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঝরে পড়ার হার চিহ্নিত করা গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এসব শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যালয় না খোলা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না কত সংখ্যক শিক্ষার্থী হারিয়েছি। গত বছর আমরা দেখেছি ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছে। বাকি যারা দেয়নি ধরে নিয়েছে তারা আর বিদ্যালয়ে ফিরবে না। আসলে এ বছর শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট পাওয়ার পরে একটা প্রাথমিক ধারণা করা যাবে। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে।’

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধকালীন সারাদেশে আট থেকে ১৪ বছর বয়সী ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের একটি জরিপ শুরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যেসব এলাকায় বিদ্যালয় বর্হিভূত শিশু রয়েছে তার একটি ম্যাপিং করে শিক্ষার্থী যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর জরিপ যাচাই-বাছাই করে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী চিহ্নিত করা হবে।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া, পাঠদান ব্যহতসহ নানা বিষয়ে একটি রিকোভারি প্ল্যান বাস্তবায়ন চলছে। এত দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকলে গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী হারাবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু কত সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে সে বিষয়ে একটা জরিপ করা হচ্ছে। যা বাস্তবায়ন করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর। পাশাপাশি এই সংকটে যাতে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার মধ্যে থাকে সেজন্য আমরা টেলিভিশন ও অনলাইনে পাঠদান করে যাচ্ছি।’

জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি- ৪)-এর আওতায় আউট অব স্কুল চিলড্রেন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো (বিএনএফই)। রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (রস্ক -২) ছাড়া দেশের ৬৪ জেলার ৩৪৫টি উপজেলায় এবং সব সিটি করপোরেশনসহ ১৫টি শহর এলাকায় এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। রস্ক বাস্তবায়নে কৌশল অনুযায়ী শিশু নির্বাচন কমিটির (ক্যাম্পেইন কমিটি) সভাপতি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ক্যাচমেন্ট এরিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা জরিপ কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত রয়েছেন।

এদিকে মাধ্যমিক স্তরেও ঝরে পড়ার হার জানতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে পিছিয়ে পড়া এলাকার বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী কিছু ঝরে পড়বে। বিশেষ করে মেয়েদের বাল্য বিয়ের প্রবণতা রয়েছে। ছেলে শিক্ষার্থীরা দারিদ্রের কারণে বিভিন্ন পেশায় ঢুকে যাচ্ছে। সরকার চাচ্ছে এদের সংখ্যা বের করে কীভাবে বিদ্যালয়ে ফেরানো যায় তার ব্যবস্থা করা।

এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এত দীর্ঘ সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকলে ঝরে পড়ার হার বাড়বে এটা ধরেই নিয়েছি। কারণ তারা দেড় বছর ধরে ক্লাস করতে পারছে না। স্কুল-কলেজের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক নেই। অনেক দরিদ্র শ্রেণি বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। মেয়েদের বাল্য বিয়ে হচ্ছে। এটা আমাদের কানে আসছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা বোর্ডের দায়িত্বে। শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ হলে আমরা বুঝতে পারব যে, কী পরিমাণ ঝরে পড়ছে। যারা রেজিস্ট্রেশন করেছিল তার আলোকে ফরম পূরণ হয়। ফরম পূরণ কী রকম হবে তা দেখলে বুঝতে পারব কত শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। তখন আমরা তাদের স্কুলে ফেরাতে পরিকল্পনা নেব। সেজন্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি শহর এবং গ্রামের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশুনায় বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে। শহরের অভিভাকরা নিজেরা পড়াচ্ছে। আবার অনলাইনে ক্লাসের সুযোগ পাচ্ছে। গ্রামে তো সে সুযোগ নেই। যে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে সে অভিভাবকের কাছে পড়তে পারছে না। আবার অনেকে অনলাইন কিংবা অভিভাবক কারও সহযোগিতাই পাচ্ছে না। সেজন্য আমরা শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এর কারণ শিক্ষার্থীরা যাতে স্কুলের সংস্পর্শে থাকে। বৈষম্য কমিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার স্রোতের মধ্যে আনার জন্যই এই উদ্যোগ।’

অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘অ্যাসাইনমেন্টের উছিলায় যদি ছেলে-মেয়েগুলো পড়াশুনার ট্রাকে ফিরে আসে- সেজন্য এই উদ্যোগ। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপের পাশাপাশি পড়াশুনার তাড়না থাকবে। এই অ্যাসাইনমেন্ট পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। যেমন ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে উঠবে আবার সেভেন থেকে এইটে উঠবে। আমরা পরীক্ষা নিতে না পারলে তখন অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নের একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে। সবচেয়ে বড় কথা অ্যাসাইনমেন্টের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সবার সহযোগিতা গ্রহণ করুক। পড়াশুনার মধ্যে থাকুক। এ কারণে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে।’

অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই না। সারাবিশ্বের পরিস্থিতি একই। কেউ পাবলিক পরীক্ষা নিতে পারছে না। আজ আমরা যে পরিস্থিতির মুখোমুখি, তাতে কারও হাত নেই। আমাদের সব পরিকল্পনা ভেসতে গেছে। আমি অভিভাবকদের বলব, আপনারা নিজের সন্তানকে সময় দিন। তাদের পাশে থাকুন। সুসময় একদিন ফিরবেই।’

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

ঝরে পড়া শিক্ষার্থী স্কুল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর