Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১ মাসে ২ গ্রামের ৪৪ জনের মৃত্যু তবু করোনা পরীক্ষায় অনীহা

রফিকুল আলম বকুল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৯ জুলাই ২০২১ ১০:৫৮

মেহেরপুর: গাংনী উপজেলার দুটি গ্রাম জোড়পুকুরিয়া ও গাড়াডোব। এরমধ্যে জোড়পুকুরিয়া গ্রামের কবরস্থানে গিয়ে দেখা গেল, এক সারিতে নতুন ২৪টি কবর। বাঁশ দিয়ে ঘেরা কবরগুলো ওই গ্রামের বিভিন্ন বয়সী মানুষের। ভোরের দিকে মসজিদের মাইকে ভেসে আসা মৃত্যুর খবর গ্রামের মানুষের কানে বেজেই যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। একজনের লাশ দাফন শেষে বাড়ি ফেরার আগেই আরেকজনের মৃত্যুর খবর! গ্রামের ইতিহাসে এতো মানুষের মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম। ভীতি ছড়িয়েছে সকলের মনে। তবুও করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ থাকা মানুষের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে না।

বিজ্ঞাপন

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মেহেরপুরে করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৫৬৮। এরমধ্যে সদরে ১৬১, গাংনী ৩০৭ ও মুজিবনগরে ১০০ জন।

গ্রামের সচেতন মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নানা ধরনের গুজব, ভীতি আর অনিহায় করোনা পরীক্ষা থেকে দূরে সরে আছেন গ্রামের মানুষজন। এতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার অনেক গ্রামের চিত্র এমন হলেও করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষের অসচেতনতাকেই দায়ী করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

জানা গেছে, জোড়পুকুরিয়া ও গাড়াডোব গ্রামে মারা যাওয়া মানুষজনের মধ্যে করোনা আক্রান্ত, বার্ধক্য, দীর্ঘদিনের রোগাক্রান্ত এবং কিছু মানুষের করোনা উপসর্গও ছিল। এছাড়াও বিপুল সংখ্যক মানুষ সর্দি, জ্বর ও করোনার অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে করোনা পরীক্ষার আওতার বাইরে রয়েছেন।

জোড়পুকুরিয়া গ্রামের লিটন হোসেন জানান, প্রতিদিন অন্তত ৩০ জন মানুষ তার কাছে চিকিৎসার জন্য আসেন। এরমধ্যে বেশিরভাগই করোনা উপসর্গ নিয়ে। জোর করেও এদেরকে করোনা পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করলেন এই পল্লী চিকিৎসক।

তিনি বলেন, জোড়পুকুরিয়া ও আশপাশের গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির মানুষেরই করোনা উপসর্গ আছে। পরীক্ষা করলে এদের মধ্যে ৭০ ভাগের উপরে পজিটিভ হবে বলে ধারণা তার।

জানা গেছে, গেল এক মাসে জোড়পুকুরিয়া গ্রামে যে ২৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন, এদের মধ্যে একজন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। বাকিদের কেউ করোনা পরীক্ষা করেননি। পরীক্ষা করা গেলে হয়তো এদের মধ্যে বেশিরভাগই করোনা পজিটিভ পাওয়া যেত। এতো কিছুর পরেও গ্রামের মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানা ও করোনা পরীক্ষার বিষয়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে বিরত থাকছেন।

বিজ্ঞাপন

গাড়াডোব গ্রামের কয়েকজন জানান, করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও করোনা পরীক্ষা নিয়ে নানা ধরনের গুজবে ডুবে আছে গ্রামের মানুষ। ফলে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ আক্রান্ত হলেও পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না।

করোনা পরীক্ষা ও আক্রান্ত হলে কোনো ভীতি নেই উল্লেখ করে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দীন বলেন, ঠাণ্ডা কাঁশি যাদের হচ্ছে, তারা যদি সচেতন হয় তাহলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাদেরকে হাসপাতালে আসতে হবে। প্রয়োজনে টেস্ট হতে হবে। তাছাড়া অনেকে তথ্য গোপন করছেন, বিধায় অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

সারাবাংলা/এএম

করোনাভাইরাস গাংনী মেহেরপুর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর