Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৮ বছর বয়সীদের ভ্যাকসিনের নিবন্ধন শুরু ৮ আগস্ট

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩০ জুলাই ২০২১ ০১:১৫

ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমে নিবন্ধনের বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর করা হচ্ছে। ৮ আগস্ট থেকে ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের নাগরিকরা জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে। আর যারা এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি, তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) রাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দেশের সব নাগরিককে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার লক্ষ্য থেকেই সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, যাদের বয়স ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি, তারা জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সুরক্ষায় ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন ৮ আগস্ট থেকে। যদি কারও জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকে, তাহলেও তিনি ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে তাকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির (মেয়র কিংবা উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান) কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। সেই প্রত্যয়নপত্র নিয়ে ভ্যাকসিন কেন্দ্রে গেলেই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

ভ্যাকসিনের বয়সসীমা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, সরকার সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি সব প্রক্রিয়া ও পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে। আর এরই ধারাবাহিকতায় ভ্যাকসিন নিতে প্রয়োজনীয় বয়সসীমাও ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হচ্ছে।

ডা. খুরশীদ আলম বলেন, সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমাদের ভ্যাকসিন নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সেটি মূলত আইসিটি বিভাগ থেকে পরিচালনা করা হয়। সেই প্ল্যাটফর্মে কী পরিমাণ চাপ পড়বে, সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী ধাপে ধীপে বয়সসীমা কমানো হচ্ছে। ৪০ থেকে ৩৫ ও পরে ৩৫ থেকে ৩০ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে সেটি ২৫ বছরে নামিয়ে আনা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবার জন্য নিবন্ধনের সুযোগ উন্মুক্ত করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত বছরের নভেম্বরে প্রথম ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার জন্য চুক্তি করে সরকার। পরে এ বছরের ৫ জানুয়ারি প্রথম ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসে বাংলাদেশে। ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৬ জনকে পরীক্ষামূলকভাবে সেই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। ওই দিনই ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীদের নিবন্ধনের জন্য ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ‘সুরক্ষা’ চালু করা হয়। সেখানে নিবন্ধিতদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি।

এদিকে, সিরামের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনা হলেও প্রথম চালানে ৫০ লাখের পর দ্বিতীয় একটি চালানে মাত্র ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসে দেশে। এছাড়া ভারত সরকারের কাছ থেকে দুই দফায় উপহার পাওয়া যায় ৩২ লাখ ডোজ অক্সফোর্ডের কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন। এরপর ভারতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হলে আর সিরামের কাছ থেকে ভ্যাকসিন পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে দেশে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের মজুত শেষ হলে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচিতে ছেদ পড়ে। তখনো প্রথম ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেননি ১৪ লাখেরও বেশি মানুষ।

এরপর সরকারের নানামুখী তৎপরতায় ধীরে ধীরে ভ্যাকসিনের সংকট কাটতে শুরু করে। প্রায় ৩১ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে পাঠায় চীন সরকার। একইসঙ্গে কোভ্যাক্সের আওতায় দেশে ফাইজারের এক লাখ ৬০০ ডোজ ভ্যাকসিন আসে। এরপর চীনের কাছ থেকে কেনা সিনোফার্মের আরও ৪০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এবং কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এরই মধ্যে দেশে এসেছে। সিনোফার্মের আরও ২০ লাখ ডোজ এসে পৌঁছাবেই সকালের মধ্যেই।

এ অবস্থায় গত ৫ জুলাই ফের সুরক্ষা প্ল্যাটফর্ম উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীদের জন্য। তবে শুরুতে ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য ন্যূনতম বয়সসীমা ৪০ করা হলেও ওই সময়ে বয়সসীমা কমিয়ে ৩৫, এরপর ৩০ করা হয়। বৃহস্পতিবার সেটি কমিয়ে ২৫ বছরে আনা হয়েছে।

যেভাবে নিবন্ধন করা যাবে সুরক্ষায়

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পেতে আগ্রহীরা সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েবসাইটে (www.surokkha.gov.bd) গিয়ে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। অ্যাপটি ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে।

পরিচয় যাচাইয়ে এই অ্যাপে বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরি আছে। এর মধ্যে একটি নির্বাচন করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে নিবন্ধন শুরু করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যাচাই করে সব ঠিক থাকলে স্ক্রিনে নিবন্ধনকারীর নাম দেখানো হবে বাংলা ও ইংরেজিতে। সেখানে একটি ঘরে একটি মোবাইল ফোন নম্বর চাওয়া হবে, যে নম্বরে তাকে পরবর্তীতে ভ্যাকসিন সংক্রান্ত তথ্য এসএমএস করা হবে। ওই মোবাইল নম্বরেই একটি ওটিপি পাঠানোর পর সেটি যাচাই করে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।

কেন্দ্রে গিয়ে নিতে হবে ভ্যাকসিন

নিবন্ধনের পর ভ্যাকসিন নিতে যাওয়ার আগে ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। সুরক্ষা ওয়েব পোর্টাল বা অ্যাপের ‘টিকা কার্ড সংগ্রহ’ বাটনে ক্লিক করে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্মতারিখ দিয়ে ‘যাচাই করুন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর নিবন্ধনের সময় দেওয়া মুঠোফোনের নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে ওটিপি (ওভার দ্য ফোন) কোড দিয়ে ‘ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড’ বাটনে ক্লিক করলে টিকা কার্ড ডাউনলোড হবে।

এসএমএসের মাধ্যমে পাওয়া ভ্যাকসিন নেওয়ার তারিখে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে। এসময় ভ্যাকসিন কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ নেওয়ার পর সুরক্ষা ওয়েব পোর্টাল থেকে ভ্যাকসিন সনদ সংগ্রহ করা যাবে।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

ভ্যাকসিন ভ্যাকসিন নিবন্ধন সুরক্ষা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর