শেষ হচ্ছে কাগুজে টেন্ডারের দিন
১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৯:১৭ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ১৫:৪২
জোসনা জামান, স্টাফ করেসপনডেন্ট
ই-টেন্ডারিং-এ যুক্ত হচ্ছে সরকারি সব সংস্থা। ফলে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত দরপত্রে কাগুজে টেন্ডার আর হবে না। তবে পুরোপুরি কাগজের দরপত্র শেষ হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। ১০০ কোটি টাকার উপরে দরপত্র ই-জিপিতে (ইলেকট্রনিক্স গভর্মেন্ট প্রকিউরমেন্ট) শুরু করতে এরইমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়া শেষ করতে সময়ের প্রয়োজন বলে জানিয়েছে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ই-জিপি পরিচালনাকারী সংস্থা সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)। ই-টেন্ডারিং বাস্তবায়নে সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সারাবাংলাকে বলেন, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অন্যায় বন্ধ করতে হলে সিস্টেমের পরিবর্তন দরকার। সরকারি কেনাকাটায় টেন্ডারবাজিসহ সব ধরনের দুর্নীতি বন্ধে সিস্টেমে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন সেটি বিস্তৃত করা হচ্ছে। যখন সব দরপত্রই ই-জিপিতে হবে তখন আর দুর্নীতির সুযোগ থাকবে না। হানাহানি-মারামারির দিন শেষ হয়ে যাবে।
সিপিটিইউ সূত্র জানায়, ১ হাজার ৩০০টি সরকারি সংস্থা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে গত ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ই-জিপিতে যুক্ত হয়েছে ১ হাজার ১৮৬টি সংস্থা। বাকি ১১৪টি সংস্থা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই ই-জিপিতে যুক্ত হবে। সংস্থা বলতে বলা হয়েছে যেমন এলজিইডি একটি সংস্থা। এর আওতায় ক্রয়কারী এনটিটি রয়েছে প্রায় ৮শ। এরকম প্রতিটি সংস্থার আবার ক্রয়কারী এনটিটি রয়েছে। এখন পর্যন্ত ই-জিপিতে মোট আহ্বান করা দরপত্রের সংখ্যা হচ্ছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৭১৫টি। এগুলোর মোট মূল্য ১ লাখ ২১ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। এছাড়া ই-জিপিতে নিবন্ধিত দরদাতা প্রায় ৪০ হাজার ৪৪ জন। নিবন্ধিত ৪৫টি ব্যাংকের ৩৫০০ শাখা। গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এ সিস্টেমে সম্পাদিত হয়েছে ৭০ হাজার ৫২৪টি চুক্তি। এসব চুক্তির মোট মূল্য ৫০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। তবে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক দরপত্র, বুদ্ধিবৃত্তিক সেবা (পরামর্শক) এবং ১০০ কোটি টাকা বেশি দরপত্র ই-জিপিতে আহ্বান করা হয় না। শিগগিরই আন্তর্জাতিক দরপত্র ও বুদ্ধিবৃত্তিক সেবা ক্রয় ই-জিপিতে যুক্ত হচ্ছে। এ জন্য কাজ শুরু করেছে সিপিটিইউ।
জানতে চাইলে সিপিটিইউ-এর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাস্তবায়ন পরীবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব মো. মফিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, চেষ্টা করা হচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যেই সবগুলো সরকারি সংস্থাকে ই-জিপিতে যুক্ত করতে।
তিনি জানান, এরই মধ্যে এই প্রক্রিয়ার সুফল মিলতে শুরু করেছে। ঘরে বসেই দরপত্র সংক্রান্ত সব কাজ করতে পারছেন ঠিকাদাররা। পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দরপত্রের প্রস্তাব, মূল্যায়ন চুক্তি ব্যবস্থাপনা ও ই-পেমেন্টসহ সংশ্লিষ্ট অনেক কাজই স্বল্প সময়ে, সহজে ও সমন্বিতভাবে করা সম্ভব হচ্ছে।
ই-টেন্ডারিং-এর সুফল প্রাপ্তি প্রসঙ্গে সিপিটিইউ জানিয়েছে, এ সিস্টেম চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। ২০০৭ সালে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে প্রতি দরপত্রে অংশগ্রহণকারী দরদাতার গড় সংখ্যা ছিল ৪ জন। চলতি বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। তাছাড়া বেড়েছে সরকারি ক্রয়কার্যের দক্ষতাও।
এক্ষেত্রে দেখা যায়, দরপত্রে প্রাথমিক বৈধতার মেয়াদে ২০০৭ সালে দরপত্র অ্যাওয়ার্ডের শতকরা হার ছিল ১০ শতাংশ। ২০১৬ সালের সর্বশেষ হিসাব মতে সেটি বেড়ে হয়েছে ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সময়মতো প্রতিটি কাজ করা হচ্ছে কি না সেটি স্বয়ংক্রিয় মনিটরিং করা হয়। ফলে কাজ ফেলে রাখার সুযোগ নেই। দরপত্রের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষই সময়মতো কাজ করছেন। ই-জিপির ফলে স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে।
২০০৭ সালে দরপত্র অ্যাওয়ার্ড প্রকাশ করা হতো শতকরা ১৫ শতাংশ ২০১৭ সালে এসে তা শতভাগে দাঁড়িয়েছে।
সিপিটিইউ এর মহাপরিচালক মো. ফারুক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ই-জিপি ডাটা সেন্টারের কার্যকারিতা অনেক বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে নতুন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে এবং তা ভালভাবে কার্যকর। দরপত্রের ক্ষেত্রে কমছে টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি ও অনিয়মও। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের আওতায় সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)ই-জিপি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে বলেও জানান তিনি।
সরকারি অর্থ খরচে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা চালু করা হয়। ২০১১ সালের ২ জুন এ প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম পর্যায় সরকারি চারটি সংস্থা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে পরীক্ষামূলকভাবে ই-টেন্ডারিং চালু করা হয়। সেটি সফলভাবে শেষ হওয়ায় নতুন করে সরকারি কেনাকাটায় ই-জিপি সিস্টেমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সহায়তা করছে বিশ্বব্যাংক। এজন্য একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্পে প্রায় ৪৪০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সারাবাংলা/জেজে/একে/জিআ