Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাছ ধরার ‘বাইর’ বানিয়ে জীবন চলে ১১ পরিবারের

বিজয় দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩১ জুলাই ২০২১ ০৮:১৮

নেত্রকোনা: জেলার সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ভেলুয়াতলী গ্রাম। এই গ্রামেরই ১১ পরিবার সারাবছর বাইর (মাছ ধরার ফাঁদ) তৈরি করেন। বংশ পরম্পরায় তারা এই মাছ ধরার ফাঁদ তৈরি করছেন। এর মধ্য দিয়েই চলে তাদের সংসার।

বাইর তৈরি করা তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা। নারী ও পুরুষ উভয়ই সংসারের কাজ শেষে প্রতিদিন বসে পড়েন বাইর তৈরির কাজে। সারাদিন বসে বসে মাছ ধরার এই উপকরণ তৈরি করেন তারা।

বিজ্ঞাপন

সরজমিনে দেখা গেছে, তারা একে অন্যের বাড়িতে গিয়ে গল্পগুজব করছে, কিন্তু হাত থেমে নেই! গল্পের তালে তালে বাইর বুনে যাচ্ছেন অনেকে। বাইর তৈরির জন্য প্রথমে একটি গোলাকার চাক তৈরি করতে হয়, যা সাধারণত পুরুষেরা তৈরি করেন। এরপর বোনার কাজ করতে থাকেন নারীরা। বাজার থেকে বাঁশ কিনে আনা ও বাজারে বিক্রি করার কাজটিও পুরুষেরা করেন।

বাইর বুনন শিল্পী আব্দুল হালিম জানান, বর্ষা মৌসুমে বাইরের চাহিদা বেশি থাকে কিন্তু তাদের এই বাইর তৈরির কাজ চলে সারা বছর। ১২ মাসের মধ্যে সাধারণত ৪ মাস বাইর বিক্রি করা হয় না। তবে বিক্রি না হলেও তারা বাইর তৈরি করে ঘরে সংরক্ষণ করে রাখেন। যখন বৃষ্টি বা বর্ষা শুরু হয় তখন সংরক্ষণ করা বাইরগুলো একটু বেশি দামে বিক্রি করা হয়। বর্ষার শুরুতে বাইরের চাহিদা বেশি থাকে এবং দামও ভালো পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি।

বাইর তৈরিতে দু’টি প্রধান উপকরণ প্রয়োজন হয়। বাঁশ ও প্লাস্টিকের সুতলি। ১১ পরিবারের সবাই-ই বাজার থেকে বাঁশ কিনে বাইর তৈরি করেন। প্রতিটি বাঁশের দাম পড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। একেকটি বাঁশ দিয়ে প্রায় ২২ থেকে ২৫টি বাইর তৈরি করা যায়। ৪ জন মানুষ যদি সমন্বয় করে কাজ করেন তাহলে ৫ দিনে ২৫টি বাইর তৈরি করা সম্ভব। প্রতিটি বাইরের আকার আকৃতি অনুযায়ী দাম পড়ে ৪০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

প্রস্তুতকার আব্দুল মোতালিব জানান, তারা বাজার থেকে বাঁশ কিনে এনে সাইজ মতো কেটে পুকুরের পানিতে প্রায় ৭ দিন ভিজিয়ে রাখেন। তারপর সেই বাঁশ দিয়ে ছোট ছোট কাঠি তৈরি করে রৌদ্রে শুকিয়ে সেই কাঠিগুলো আগুনে তাপ দেন, যাতে কোনো আঁশ না থাকে। তারপর তৈরি করা হয় মাছ ধরার এই বাইর।

নানা জাতের বাইর তৈরি করেন তারা। যেমন- পেসা, কাট্টুয়া দরিবাইর, উইন্না, টাঙ্গাইলা, ধুলুক, সামুক বাইর ইত্যাদি। এসব বাইরের নাম যেমন ভিন্ন তেমনি এগুলোর ব্যবহারও ভিন্ন।

যেমন কোনটা কম পানিতে, কোনটা বেশি পানিতে আবার কোনটা ছোট মাছের জন্য, কোনটা বড় মাছের জন্য, কোনটা কম স্রোতের জন্য, কোনটা বেশি স্রোতের জন্য। এভাবে স্থান বিশেষে বাইরের আকার আকৃতিও ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে। সব ধরণের বাইর আবার সবাই তৈরি করতে পারে না। আকার আকৃতি ও ভিন্নতার উপর নির্ভর করে ‘বাইরে’র দরদামও।

বর্তমান পরিস্থিতে সংকটের কথা জানিয়ে পরিবারের সদস্যরা জানান, কোভিড-১৯ এর মহামারির জন্য সরকার ঘোষিত লকডাউনে বাইর তৈরির কাজ চলমান থাকলেও বিক্রি কমে গেছে। ঠিকমত বাজারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে যাদের প্রয়োজন তারা বাড়িতে এসে বাইর কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তবে এতে তাদের আয় কমে গেছে।

সারাবাংলা/এমও

কলমাকান্দা বাইর মাছ ধরা মাছ ধরার ফাঁদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর