Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অবাক লাগে আমার দলের লোকেরা কীভাবে জড়িত থাকে: শেখ হাসিনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১ আগস্ট ২০২১ ১৫:৩১

ঢাকা: ১৫ আগস্ট জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যকাণ্ডের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এটিই অবাক লাগে যে, এর সঙ্গে আমাদের ( আওয়ামী লীগ) যারা তারা কী করে জড়িত থাকে? শুধু তাই নয় এই ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা সেটি এখনও আবিষ্কার হয়নি। সেটি একদিন না একদিন আবিষ্কার হবে।

রোববার (১ আগস্ট) সকালে ‘জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্ত ও প্লাজমা দান কর্মসূচির উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর চত্বরে যুক্ত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুরনাহার লাইলী, দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

বঙ্গবন্ধু কন্যা ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘এদেশীয় কিছু পাকিস্তানি দালাল চক্র, তাদের তোষামোদী-খোষামোদী পদলেহনকারী কিছু গোষ্ঠী তারা কেন জানি বাঙালির অভ্যুদয়, বাঙালির এই বিজয়কে কখনো মেনেই নিতে পারেনি। দুঃখজনক হলো যে, নিজের দলের ভেতর খন্দকার মোশতাক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। আবার অনেকেই তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এই ঘটনা ঘটাতে সামরিক বাহিনীর কিছু সদস্য তাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছিল। কাজেই উচ্চ পর্যায়ে যদি কেউ না থাকে তাহলে এটি কখনো সম্ভব ছিল না। আর উচ্চ পর্যায়ে তাদের সঙ্গে কে ছিল সেটি তো কর্নেল ফারুক-রশিদ বিবিসি’তে সাক্ষাৎকার দিয়েছিল, সেই সাক্ষাৎকারে তারা বিস্তারিত বলেছিল। তারা বলেছিল, জিয়াউর রহমান উপ সামরিক সেনাপ্রধান ছিল তার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল, সম্পর্ক ছিল এবং সফল হতে পারলে সে তাদের পাশে থাকবে এই কথা দিয়েছিল। কাজেই মোশতাক-জিয়ার যে সখ্যতা এবং তাদের যে এই কাজের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পৃক্ততা এটা তো স্পষ্ট।’

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘১৫ আগস্ট যখন খবরটা পাই আমরা কিছুতেই তা ভাবতে পারিনি। বাংলাদেশের মানুষের ওপর আমার বাবার অগাধ বিশ্বাস ছিল। তিনি সবসময় বিশ্বাস করতেন, বাঙালি কখনও তার গায়ে হাত দিতে পারবে না। আর পাকিস্তানিরা যখন চেষ্টা করে তাকে হত্যা করতে পারেনি আর বাঙালিরা কেন মারবে? অনেকেই অনেকভাবে তাকে খবর দিয়েছেন বা বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি কখনও বিশ্বাস করেননি। কোন রাষ্ট্রপ্রধান-সরকার প্রধান বলেছেন, তিনি একটা কথাই বলেছেন- এরা আমার সন্তানের মতো। এরা কেন আমাকে মারবে? আর সেই বিশ্বাসের প্রতিদান দিলো তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।’

ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে খুনিদের বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সে কথা তুলে ১৫ আগস্ট আপনজন হারা শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমান তাদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়, ব্যবসা করার সুযোগ দেয়। বিপুল অর্থের মালিক করে দেয়। জিয়ার পথ ধরে আমরা দেখেছি জেনারেল এরশাদ এই খুনিদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়, রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেয়। এমনকি ভোট চুরি করে পার্লামেন্টের মেম্বার করে। তার থেকেও এক ধাপ উপরে গিয়ে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে খুনি রশিদকে পার্লামেন্টে বসায় বিরোধীদলের নেতার চেয়ারে এবং আরেক খুনিকে পার্লামেন্টের মেম্বার করে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমি আরেকট কথা আপনাদের জানাতে চাই, যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হলো পাকিস্তানি অনেক চিন্তাবিদ, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ; অনেকেই বলেছিল যে বাংলাদেশ ছিল নাকি তাদের কাছে একটা বোঝা। কারণ এই বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বেশি, ক্ষুধার্ত বেশি, সব ধরনের অনগ্রসর। কাজেই এটি পাকিস্তানের জন্য বোঝা! কিন্তু পাকিস্তানিরা ভুলে গিয়েছিল তাদের যতটুকু উন্নয়ন সব অর্থ জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান)। কারণ একমাত্র বাংলাদেশ থেকেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হতো। বাংলাদেশ থেকেই সবকিছু যেত এবং সেটি নিয়ে তারা নিজেদের উন্নত করে। কিন্তু বাংলাদেশকে তারা দারিদ্র্যগ্রস্ত রেখে যায়, ক্ষুধার্ত রেখে যায়, বাংলাদশকে বঞ্চিত রেখে যায়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের হত্যার বিচার করেছি। তবে এ ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা তা এখনও আবিষ্কার হয়নি। তবে একদিন না একদিন আবিষ্কার হবে, এটি ঠিক। সব থেকে বড় কাজ হলো দেশটাকে নিয়ে এই মানুষগুলোকে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে স্বপ্ন দেখেছিলেন। দেশের মানুষের উন্নয়ন করার এবং সেই উন্নয়ন করাটাকেই আমি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। তাই পেছনে কে ষড়যন্ত্র করেছে, কী করেছে সেদিকে আমি না গিয়ে আমার কাজ হচ্ছে ক্ষুধার্ত দারিদ্র্য মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের জীবনমান উন্নত করা।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ এ আমরা সরকার গঠন করলাম। তখন থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমরা যে রূপকল্প দিয়েছিলাম ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকেব মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। আজকে বাংলাদেশ আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। এখন জাতির পিতার ১০১তম জন্মবার্ষিকী। পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের যে উন্নয়নের গতিধারাটা এটা হয়ত আমরা আরও অব্যাহত রাখতে পারতাম। যদি করোনা নামক মহামারিটা না দেখা দিতো।’

এটি শুধু আমাদের না সারাবিশ্বব্যাপী আজকে অর্থনৈতিক মন্দা, মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়েছে। তার থেকে আমরাও মুক্ত না। তবুও আমরা আমাদের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

সারাবাংলা/এনআর/একে

১৫ আগস্ট ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড আওয়ামী লীগ জাতির পিতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর