দেশে করোনায় মৃত্যু ১ লাখের নিচে না: মির্জা ফখরুল
২ আগস্ট ২০২১ ১৫:৫৭
ঢাকা: বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু এক লাখের নিচে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২ আগস্ট) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। লালমনিরহাট বিএনপির উদ্যোগে জেলার কোভিড-১৯ হেল্প সেন্টার উদ্বোধন এবং করোনাভাইরাস সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানে এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা (সরকার) বলছে- এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ৯১৪ জন মারা গেছে। আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, পত্রিকাতেই আছে বাড়িতে মৃত্যুর সংখ্যা হচ্ছে ৬৫ ভাগ। তাহলে চিন্তা করেন। এই ২০ হাজার ৯১৪ জনের সঙ্গে ৬৫ ভাগ যোগ করেন। তাহলে এই সংখ্যা একলাখের নিচে কখনোই না।’
করোনা ‘আক্রান্ত ও মৃত্যুর’ সংখ্যা নিয়ে সরকার জাতিকে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকারের যে হিসাব তা সঠিক নয়। তাদের হিসাবে দেখা যাচ্ছে গতকাল পর্যন্ত ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৩২৮ জন শনাক্ত হয়েছেন- এটা একদম ডাহা মিথ্যা কথা। মানুষ টেস্টই করতে পারছেন না। তারা উপজেলা পর্যায়ে টেস্ট দেন না। জেলা পর্যায়ে টেস্ট দেয়, সেখানে গিয়েও মানুষ টেস্ট করতে পারে না। ঢাকায় যে কেন্দ্রগুলো আছে সেখানেও দিনে দুই ঘণ্টা টেস্ট করা হয়, বাকি সময় আর হয় না। এখানেই কিন্তু স্ক্রিন আউট করে দিচ্ছে।’
‘তারা যে তথ্যগুলো দেয় সেটা শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য, প্রতারণা করার জন্য তারা এই তথ্যগুলো জনগণের সামনে দেয়’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘সরকার করোনা মোকাবিলা করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং জনগণের জীবন নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলছে। আমরা প্রথম থেকে বলছি, এটা যেহেতু বৈশ্বিক মহামারি এবং ভয়াবহ একটি বিষয়, এটাকে মোকাবিলা করতে হবে সকলকে সঙ্গে নিয়ে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম একটা জাতীয় কমিটি গঠন করে জাতীয় বিশেষজ্ঞসহ সমস্ত জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই করোনা মহামারিকে মোকাবিলা করার জন্য।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, যেকোনো দুর্যোগ অথবা মহামারি পুরোটা হয়তো নির্মূল করা যায় না, কোনোটারই সমাধান করা যায় না। কিন্তু এটা অনেক সুষ্ঠু ও সন্দুরভাবে হ্যান্ডেল করা যায়, যদি দেশের মানুষকে আমরা সম্পৃক্ত করতে পারি। আজকে যদি রাজনৈতিক দলগুলো সম্পৃক্ত হতো, এনজিওগুলো সম্পৃক্ত হতো, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলো সম্পৃক্ত হতে পারতো তাহলে, পরিস্থিতি এতো মারাত্মক আকার ধারণ করতো না।”
আইসিইউ বেড নিয়েও মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘করোনা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড না থাকলেও তারা (স্বাস্থ্য অধিদফতর) তথ্য দিচ্ছে যে আইসিইউ বেড আছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে ভোলা, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, জামালপুর- এই পাঁচ জেলায় করোনা রোগীদের জন্য ২০টি আইসিইউ রয়েছে। কিন্তু আসলে এগুলোতে কোনো আইসিইউ নাই।’
লকডাউন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কঠোর লকডাউনের কয়দিন পরে গণপরিবহন ছেড়ে দিল, ঈদ আসলে ছেড়ে দিল। তারপরে শ্রমিকদের ছুটি দিল তারা ঈদের আগে ছুটিতে চলে গেল। এভাবে তারা সংক্রমণ গ্রামের দিকে আরও বেশি করে পাঠিয়ে দিল। সীমান্ত আমরা বন্ধ করতে বলেছিলাম। কারণ, ভারতে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট বাড়ছে। সেইভাবে সরকার বন্ধ করল না। বিভিন্ন স্থলবন্দরে ভারত থেকে ট্রাক আসল, চালক, সহকারীরা আসল, তারা এই পাশে থাকল, সংক্রমণ বাড়িয়ে দিল। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সংক্রমণ বেড়ে গেল।’
তিনি বলেন, ‘এটা তাদের সিদ্ধান্তহীনতা নয়, এটা পরিকল্পিত। তারা তো বলেই যে, বাংলাদেশে ৫ লাখ লোক, ১০ লাখ লোক মরে গেলে কী হবে? এতো দেশের মানুষ। এই হচ্ছে এই সরকার। যাদের জনগণের প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই, যারা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে রাজনৈতিকভাবে। এখন তারা মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করছে।’
নেতা-কর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। আমাদের জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, দলের স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি মানুষের সঙ্গে থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করছে। বিএনপি জনগণের পাশে আছে, পাশে দাঁড়াচ্ছে।’
লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক।
সারাবাংলা/এজেড/এএম