Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মডেল মৌ ও পিয়াসার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২ আগস্ট ২০২১ ২১:৫৯

সোমবার মডেল মৌ আক্তার (বাঁয়ে) ও মডেল পিয়াসাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়

ঢাকা: মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে মাদকসহ গ্রেফতার মডেল মাহবুব ফারিয়া পিয়াসা ও মডেল মরিয়ম আক্তার মৌ ওরফে মৌ আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাদের দু’জনকেই আটকের সময় তাদের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মদসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য জব্দ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দু’জনের বিরুদ্ধেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদনে আদালতে তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেছেন।

সোমবার (২ আগস্ট) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালত মৌ আক্তার ও ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলামের আদালত পিয়াসার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাদের দু’জনকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

মৌ আক্তারের রিমান্ড আবেদনে ডিবি পরিদর্শক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মৌ তাদের জানিয়েছেন— ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে তিনি মাদক সংগ্রহ করতেন। তার বাসায় নাচ ও গানের আসর বসিয়ে লোকজন ডেকে এনে অর্থের বিনিময়ে তাদের কাছে মদ, ইয়াবাসহ অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য বিক্রি করা হতো। এ কার্যকলাপের সঙ্গে আরও দুই-তিন জন জড়িত বলেও জানিয়েছেন মৌ।

আশেক ইমামের আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মৌ একজন নারী মাদক ব্যবসায়ী। তিনি তার ফ্ল্যাটে সহযোগী মাদক ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের নাইট পার্টির কথা বলে ডেকে এনে মাদক বিক্রি করে যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে ধাবিত করছেন।

আরও পড়ুন-

মডেল পিয়াসার বিরুদ্ধে শহিদুল ইসলামের আদালতে রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পরিদর্শক আলমগীর সিদ্দিক। রিমান্ড আবেদনে পিয়াসার বিরুদ্ধেও মৌ আক্তারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর সাদৃশ অভিযোগ উঠে আসে। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি পিয়াসা জানিয়েছেন— ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদক সংগ্রহ করতেন। বাসায় নাচ ও গানের আসর বসিয়ে লোকজন ডেকে এনে অর্থের বিনিময়ে তাদের কাছে মদ, ইয়াবা, সিসাসহ অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য বিক্রি করতেন। অবৈধ মাদকদ্রব্য এবং ইয়াবা, বিদেশি মদ ও বিয়ার ও সিসা সেবন ও বিক্রির জন্য নিজের কাছে রাখার কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।

মডেল পিয়াসা ও মৌ আক্তারের কাছ থেকে উদ্ধার করা ইয়াবা, বিদেশি মদ সংগ্রহের উৎস, বেচাকেনার প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উদঘাটন এবং তার সহযোগী আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনার জন্য রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

আদালতে নেওয়া হচ্ছে মডেল মৌ আক্তারকে

এদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু শুনানির সময় বলেন, মৌয়ের বাসা থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। মাদক ইয়াবা মরণব্যাধি। যুব সমাজ মাদকে আসক্ত হয়ে দেশের ক্ষতি করছে। মৌ বাসায় আসর বসিয়ে মানুষকে আহ্বান করতেন সেখানে। আরও অসামাজিক কার্যকলাপ চালাতেন।

তবে মৌয়ের পক্ষে তার আইনজীবী জামিল সিদ্দিক বাপ্পী বলেন, মৌ তিন সন্তানের জননী। তার ছোট সন্তানের বয়স ২০ বছর। সামাজিকভাবে হেয় করতে তাকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। করোনাকালে মানবিক দিক বিবেচনায় আসামির জামিন প্রার্থনা করেন।

অন্যদিকে, শহিদুল ইসলামের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি শুনানিতে বলেন, আসামি পিয়াসার বাসা থেকে ৭৮০ পিস ইয়াবা, আট বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। পিয়াসা তার বাসায় নাচ, গানের আসর বসাতেন। আমোদ-ফূর্তি করতেন। মাদকের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স থাকলেও পিয়াসার মতো কিছু মুখোশধারীরা মাদক সরবরাহ, বিক্রি করছে। যুব সমাজকে ধ্বংস করছে।

আদালতে নেওয়া হচ্ছে মডেল পিয়াসাকে

আদালতে পিয়াসার পক্ষে অ্যাডভোকেট আরিফ হোসেন মজুমদার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, পিয়াসা অভিজাত পরিবারের সদস্য। ভালো একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। কোনো ধরনের মাদক ব্যবসার সঙ্গে তিনি আদৌ জড়িত নন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ আসেনি। তিনি কোনো বারের সদস্যও নন। এটি একটি সাজানো মামলা। তাকে আটক করার ঘটনাকে সাজানো নাটক অভিহিত করে রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করেন এই আইনজীবী।

পরে আশেক ইমামের আদালত মডেল মৌ আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিন এবং শহিদুল ইসলামের আদালত মডেল পিয়াসাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে, রোববার (১ আগস্ট) রাতে পিয়াসার বারিধারার ধারায় অভিযানে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। রাত পৌনে ১২টার দিকে ওই বাসা থেকে পিয়াসাকে আটক করা হয়। সেখান থেকে বিদেশি মদ, ইয়াবা ও সীসা জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ।

এদিকে, রোববার দিবাগত মধ্যরাতে মৌ আক্তারের মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসায় অভিযান শুরু করে ডিবি। পরে রাত সোয়া ১টার দিকে তাকে আটকের তথ্য জানানো হয়। তার বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ জব্দ করে ডিবি।

মৌ আক্তারকে আটকের পর ডিবি’র যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর-রশীদ বলেন, তারা দু’জন (পিয়াসা ও মৌ) একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। দু’জনের বাসায় বিদেশি মদ, ইয়াবা, সিসা পাওয়া গেছে। তারা দিনের বেলা ঘুমাতেন, রাতে উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করতেন। তাদের কাজই ছিল উচ্চ পরিবারের সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে পার্টির নামে তাদের বাসায় ডেকে আনা। এরপর মাদক খাইয়ে তাদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি-ভিডিও তুলে রাখতেন তারা। পরে সেসব ভিডিও-ছবি ভিকটিমদের পরিবারকে পাঠাবে বলে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিতেন।

সারাবাংলা/এআই/টিআর

টপ নিউজ মডেল পিয়াসা মডেল মৌ মরিয়ম আক্তার মৌ মাহবুব ফারিয়া পিয়াসা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর