ঢাকা: আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে গড়ে তোলা সংগঠন ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. মনির খান ওরফে দর্জি মনিরের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (৪ আগস্ট) বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মন্ডলের আদালত শুনানি শেষে এই রিমান্ডের আদেশ দেন।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক এ আদেশ দেন।
এর আগে, গত মঙ্গলবার (৩ আগষ্ট) দর্জি মনিরের বিরুদ্ধে কামরাঙ্গীরচর থানায় ঈসমাইল হোসেন নামে এক ব্যক্তি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, দর্জির দোকানে চাকরি করতো মনির। হঠাৎ করে সে নিজেকে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আইডির মাধ্যমে বন্ধু হয়। সে একেক সময়ে একেক রাজনৈতিক পদবী, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এমডি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ছাড়াও আরো অনেক মন্ত্রী-এমপিদের সাথে নিজের ছবি কম্পিউটার সফটওয়্যার মাধ্যমে এডিট করে বসিয়ে নিজেকে বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পদের নাম ব্যবহার করে।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, সে এবং তার সহযোগীরা ঢাকা মহানগরীতে এবং বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কমিটি দেওয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেয়। সে তার ভুঁইফোড় সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতো। এছাড়া রাজনৈতিক প্রধানের নাম করে টাকা আদায়, বিভিন্ন চাকরি দেওয়া এবং পদায়নের জন্য অনেক লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে।
গত ৩০ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে কামরাঙ্গীরচর থানার মাদবর বাজার ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে তার সংগঠনের পদ প্রদানেএবং বড় বড় নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক করে দেওয়ার নাম করে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। সে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে ছবি এডিট করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে নিজের ছবি বসিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ছবি এবং বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য প্রচার করে।
এর আগে গত রোববার (১ আগস্ট) রাতে রাজধানী থেকে দর্জি মনিরকে আটক করে ডিবি পুলিশ। মনিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন দলটির অনেক নেতার সঙ্গেই তার ‘ওঠা-বসার ছবি’ আছে। আর এসব ছবি ফটোশপে কারসাজি করা।
তিনি ভুঁইফোঁড় ওই সংগঠন খুলে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের অনেক নেতাকে টাকার বিনিময়ে পদ দিয়েছেন। এছাড়া, মনির জমির দালালি এবং তদবির-বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার স্বপ্ন এখন কেরানীগঞ্জ ও সাভারের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ঢাকা-২ আসনের এমপি হওয়া।
আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’র মতো সংগঠনের সঙ্গে দলটির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যারা এ ধরনের ভুঁইফোঁড় সংগঠন চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।