Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বজন খুঁজে পেলো আগুনে পোড়া শরীরগুলো

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৫ আগস্ট ২০২১ ০০:৩১

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডসের কারখানা। হঠাৎ এক সন্ধ্যায় সেই কারখানাতেই ছড়িয়ে পাড়ে ভয়াবহ আগুন। সেই আগুনের লেলিহান শিখা কেড়ে নেয় ৫২টি তাজা প্রাণ। এর মধ্যে চার জনকে চেনা গেলেও বাকি ৪৮টি মরদেহ চেনার কোনো উপায় ছিল না। শুধু তাই নয়, কয়েকটি মরদেহ ছিল এমন— নারী নাকি পুরুষ, সেটি পর্যন্ত বোঝার উপায় ছিল না।

আগুনে পুড়ে কয়লা সেই মরদেহগুলোর পরিচয় অবশেষে  শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। জীবনের রহস্য লুকিয়ে থাকে যে ডিএনএ’তে, সেই ডিএনএ পরীক্ষা করে বের করা হয়েছে, এই মরদেহের স্বজন কারা। শেষ পর্যন্ত স্বজনদের খুঁজে পেয়েছে মরদেহগুলো, স্বজনরা পেয়েছেন হারিয়ে ফেলা মানুষটিকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গ থেকে সেই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে আগুনে পোড়া মরদেহগুলো।

বিজ্ঞাপন

আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বুধবার (৪ আগস্ট) ঢামেক মর্গ থেকে ২৪টি মরদেহ হস্তান্তর করা হবে স্বজনদের কাছে। সে অনুযায়ী সকাল থেকেই মর্গের সামনে ছিল স্বজনদের ভিড়। দুপুর দেড়টার দিকে শুরু হয় মরদেহগুলোর হস্তান্তর প্রক্রিয়া। দুপুর সোয়া ২টা নাগাদ সেগুলো বুঝে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেন স্বজনরা।

রুপগঞ্জের হাসেম ফুডসের কারখানার সেই আগুনের ঘটনায় নিহত আয়াত হোসেনের (১৯) মরদেহটি প্রথমে তুলে দেওয়া হয় তার স্বজনদের কাছে। ছেলের মরদেহ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বুঝে নেন বাবা এনায়েত হোসেন। জানালেন, গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ার পথে রওনা হবেন। সেখানেই সমাহিত করবেন সন্তানকে।

এরপর একে একে হস্তান্তর করা হয় আরও ২৩টি মরদেহ। এর মধ্যে ৯টিই কিশোরগঞ্জের— তাহের উদ্দিনের ছেলে নাঈম ইসলাম, নিজাম উদ্দিনের মেয়ে সাহানা আক্তার (১৮), খোকনের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৩৮), ঝর্ণা আক্তারের মেয়ে ফারজানা (১৪), সুজনের মেয়ে ফাতেমা আক্তার (১৫), গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মুন্না (১৬), স্বপন মিয়ার মেয়ে সাগরিকা সায়লা, আব্দুল কাইয়ুমের মেয়ে খাদিজা আক্তার (১৬) ও মাহতাব উদ্দিনের স্ত্রী সাহানা আক্তার (৪৪)।

বিজ্ঞাপন

বাকি মরদেহগুলোর মধ্যে ছিল— নোয়াখালীর আবুল কাসেমের ছেলে রাশেদ (২৫) ও বাশারের ছেলে তারেক জিয়া (১৫); নারায়ণগঞ্জের বেলাল হোসেনের মেয়ে মিতু আক্তার ও সুমাইয়া আক্তারের মা ফিরোজা (৩৬); গাইবান্ধার হাসানুজ্জামানের মেয়ে নুসরাত জাহান টুকটুকি; নেত্রকোনার কবির মিয়ার মেয়ে হিমা আক্তার; পাবনার শাহাদত খানের ছেলে মোহাম্মদ আলী; নেত্রকোনার আজমত আলীর মেয়ে তাকিয়া আক্তার; বগুড়ার নয়ন মিয়ার মেয়ে নাজমা খাতুন; হবিগঞ্জের আব্দুল মান্নানের মেয়ে ইসরাত জাহান তুলী; ডেমরার নাজমুল হোসেনের মা নাজমা বেগম (৩৫); ভোলার কবির হোসেনের ছেলে রাকিব হোসেন (২১); এবং গাজীপুরের লিলি বেগমের ছেলে রিপন মিয়া (১৮)।

সবার শেষে বাবা জসিম উদ্দিনের কাছে হস্তান্তর করা হয় রিমা আক্তারের (২৩) মরদেহ। জসিম উদ্দিন জানান, তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুরে। এখন যাবে সেখানেই। গ্রামের বাড়িতে শেষ নিদ্রায় শায়িত করবেন মেয়েকে।

মরদেহগুলো হস্তান্তরের সময় ছিলেন নারায়ণগঞ্জে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবারকে মরদেহ দাফন-কাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বাকি ২১টি মরদেহ আগামী শনিবার (৭ আগস্ট) স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

হাসেম ফুডসের কারখানায় দগ্ধ মরদেহের মধ্যে ১৫টি রাখা আছে রাজধানীর শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। জানা গেছে, সেখান থেকে মরদেহগুলো শনিবার সকালে ঢামেক মর্গে নিয়ে আসা হবে। তারপর এখানে থাকা বাকি ছয়টি মরদেহসহ সবগুলো হস্তান্তর করা হবে এখান থেকেই।

গত ৮ জুলাই সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডসের ওই কারখানায় আগুন লাগে। ডেমরা, কাঞ্চন, সিদ্ধিরগঞ্জ, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৮টি ইউনিট মিলেও সারারাতে সে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। কারখানায় দুই দিক থেকেই তালাবন্ধ চতুর্থ তলা থেকে উদ্ধার করা হয় ৪৯টি মরদেহ, যার কোনোটিই দেখে চেনার কোনো উপায় ছিল না। কয়েকটি মরদেহের ক্ষেত্রে পুরো শরীরও পাওয়া যায়নি। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া মরদেহগুলো শনাক্ত করার কোনো উপায়ই ছিল না।

৯ জুলাই মরদেহগুলো নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে। পরে দেখা যায়, দুইটি ব্যাগে থাকা মরদেহের অংশগুলো মূলত একই ব্যক্তির। সে হিসাবে ৪৮টি মরদেহের স্বজনদের খুঁজতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয় ওই কারখানায় নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনদের। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ৪৫টি মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এর মধ্যে ২৪টি হস্তান্তর করা হলো আজ। পরিচয় শনাক্ত হওয়া ২১টি মরদেহ হস্তান্তর করা হবে আগামী শনিবার। আর বাকি তিনটি মরদেহ এখনো বেওয়ারিশ পড়ে রয়েছে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে।

ছবি: হাবিবুর রহমান

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/এসএসআর/টিআর

ডিএনএ পরীক্ষা মরদেহ হস্তান্তর রূপগঞ্জ কারখানায় আগুন সজীব গ্রুপ হাসেম ফুডস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর