Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চার ভাই-বোনকে রেখে চলে গেলেন বাবা-মা, দাদা-দাদি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৬ আগস্ট ২০২১ ০৮:৪৪

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: আপন বলতে আর কেউ থাকল না তাদের। একটি বজ্রপাতের ঘটনায় ৪ ভাই-বোনকে রেখে পরপারে চলে গেছেন তাদের বাবা-মা, দাদা-দাদিসহ পরিবারের ৯ জন সদস্য। চার ভাই-বোনের মধ্যে বড় ভাই সিহাব (১৪)। তার ছোট আরও তিন বোন সোনিয়া (১০), তানিয়া (৮) ও তাজরিন (২)। তাদের মধ্যে বড় ভাই সিহাব মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই সবার দুশ্চিন্তা তাদেরকে ঘিরেই। তাদেরকে দেখার মতো আর কেউ বেঁচে নেই। বজ্রপাতে পরিবারের সকলকে হারিয়ে তারা চার ভাই-বোন এখন নিঃস্ব।

গত বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুরে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁকা ঘাটে বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয়। এসময় বরপক্ষের ১৬ জনসহ স্থানীয় এক মাঝি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। বরপক্ষের মোট ৪৭ জন সদস্য নিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে কনের বাড়িতে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়াও বজ্রপাতের ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

বড় তিন ভাই-বোন বাড়িতে রেখে ছোট মেয়ে তাজরিনকে নিয়ে ভাগনের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের মহরাজনগর ডানপাড়ার মৃত তবজুলের ছেলে সাদিকুল (৩৫) ও তার স্ত্রী টকিয়ারা বেগম (৩০)। বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হলেও বেঁচে গেছেন ২ বছরের শিশু তাজরিন। এছাড়াও তাদের দাদা তবজুল (৭০), দাদি জমিলা বেগমও (৫৮) মারা গেছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাজরিনকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সে হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) দুপুরে নিহত সাদিকুলের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, আশেপাশের গ্রাম থেকে দলে বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষ ছুটে আসছেন। ছোট বোন তাজরিন হাসপাতালে ভর্তি থাকায় বাকি ৩ ভাই-বোনকে ঘিরে রেখেছে সবাই। তবে তাদের মুখে কোনো কথা নেই। বড় ভাই সিহাব মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় কথা বলতে পারেন তা তেমন। বাকি দুই বোনও জানেন না তাদের বাসায় কি হয়েছে, কোথায় গেছে তাদের বাবা-মা, দাদা-দাদি।

তাদের নানী মুনিজা বেগম বলেন, ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চা। তাদের দেখাশোনা করারও কেউ থাকল না। তারা এখন কি খাবে, কেমন করে খাবে সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তাদের সকলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বাবা-মা না থাকলে, দাদা দাদি অনেককেই মানুষ করে গড় তোলে। কিন্তু তাদের কি দুভার্গ্য যে তাদের দাদা-দাদিও মারা গেল।

তাদের খালা নুরেসা বেগম জানান, বড় ছেলেটার মাথায় সমস্যা। তারপর রয়েছে আরও ৩ মেয়ে। তাদের আদর যত্ন, ভালোবাসা দেওয়ার কেউ নেই। সরকার ও প্রশাসনকে অনুরোধ করব তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও তাদের ফুফা মোহাম্মদ আলী জানান, বজ্রপাতের সময় সেখানেই তাদের বাবা-মা মারা যান। কিন্তু আল্লাহর রহমতে মায়ের কোলে থাকা শিশু তাজরিন বেঁচে যায়। পরে উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, কনের বাড়িতে যাওয়ার পথে বৃষ্টি আসলে দক্ষিণ পাঁকা ঘাটের একটি ছাউনিতে তারা আশ্রয় নেয়৷ তার কিছুক্ষণ পরই বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই ১৭ জন মারা যান।

বজ্রপাতের ঘটনায় অন্যান্য নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ঘাটাপাড়ার সাত্তার আলীর ছেলে সহবুল (৩০), চর সূর্যনারায়নপুর গ্রামের টিপুর স্ত্রী বেলী বেগম (৩২), মহরাজনগর ডানপাড়ার জামালের ছেলে লেচন (৫০), রফিকুল ইসলামের ছেলে বাবলু (২৬), তেররশিয়া দক্ষিণপাড়ার মৃত মহবুলের ছেলে রফিকুল (৬০), সূর্যনারায়নপুরের ধুনু মিয়ার ছেলে সজিব (২২), একই গ্রামের সাহালালের স্ত্রী মৌসুমী (২৫), বাবুডাইংয়ের মকবুলের ছেলে টিপু (৪৫), কালুর ছেলে আলম (৪০), মোস্তফার ছেলে পাতু (৪০), সুন্দরপুরের সেরাজুলের ছেলে আতিকুল ইসলাম ডাকু (২৪)।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফফাত জাহান বলেন, নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে লাশ দাফনের খরচ হিসেবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আহতদের ৭ হাজার করে টাকা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে আরও সহায়তা করা হবে।

সারাবাংলা/এসএসএ

চার ভাই-বোন বজ্রপাত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

এখনো সালমানকে মিস করেন মৌসুমী
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৩

সালমান শাহ্‌কে হারানোর ২৮ বছর
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৪

সম্পর্কিত খবর