সেই স্মৃতি আজও নাড়া দেয়: সাঈদ খোকন
১ এপ্রিল ২০১৮ ১৬:৫৩
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গ্রেনেড হামলার স্মৃতি মনে করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, সেই দিনের স্মৃতি আজও নাড়া দেয়।
তিনি বলেন, সে সময়টা এমনই ছিল। কিছুদিন বেশ কিছু গুজব উঠেছিল- জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর আক্রমণ হতে পারে, যে কোনো সময় একটা ঘটনা ঘটতে পারে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীর মুখে মুখে ছিল। সবাই আশঙ্কা-আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে চলছিল। তারপর যা হওয়ার হলো। আমার বাবাও সেদিন রক্তাক্ত হলেন।
রোববার দুপুরে রাজধানীর নগর ভবনে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে তিনি এ স্মৃতিচারণ করেন। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হানিফের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
সাঈদ খোকন বলেন, গ্রেনেড হামলায় আমাদের ২৪ নেতাকর্মী মারা গেলেন। আমিও সেদিন সেখানে ছিলাম। আমি নেত্রীর বাঁয়ের এক হাত দুরে একটি ট্রাকে ছিলাম। নেত্রীকে অনেকটাই আগলে রেখে আমার বাবা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনেকেরই আশঙ্কা ছিল কিছু একটা হতে পারে। নেত্রীর প্রতি আনুগত্য ও ভালবাসা সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেখিয়েছিলেন। সে দিন মোহাম্মদ হানিফসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীকে বাঁচিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, একের পর এক স্প্লিন্টারের আঘাতে রক্ত ঝরছিল। আমি পার্টি অফিসে বাবার কাছে যাই। বাবা প্রায়ই পড়ে যাচ্ছিলেন, আমি তাকে জড়িয়ে ধরি। আমার শরীরেও রক্ত, দুই পায়ে স্প্লিন্টার লেগেছিল। আমি খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে হাঁটছিলাম। নিজে আহত থাকার কারণে বাবাকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। বোমা বিস্ফোরণে বাবার পুরো শরীর থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। এরপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে ও বাবাকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আমার বাবার আনুগত্য ও ভালবাসা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক রাজনীতিতে বিরল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র আরও বলেন, নেত্রীর প্রতি আনুগত্য ও ভালবাসার এই দৃষ্টান্ত আমাদের অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। আজকে বাবার জন্মবার্ষিকীতে তার রেখে যাওয়া দৃষ্টান্ত হোক আমাদের সবার অনুকরণীয়। এই দিনে আমরা শপথ নিতে পারি- আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হলেও আমরা তা করবো। বঙ্গবন্ধু কন্যার যে কোনো প্রয়োজনে আমরা সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত।
মোহাম্মদ হানিফ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর এবং অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র উল্লেখ করে তিনি বলেন, বোমা হামলার ক্ষত বয়ে বেড়ালেও আমার বাবা দুই বছরেরও বেশি সময় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তাঙ্গনে এক সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। বোমা হামলার ক্ষতের কারণে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তীব্র যন্ত্রণায় ভুগে ওই বছরের ২৮ নভেম্বর ৬২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাবা।
বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের বর্ণনা দিয়ে সাঈদ খোকন বলেন, ওই সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক ছিলাম। আমরা বাসায় থাকতে পারতাম না। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আমরা বাসায় থাকতে পারিনি। সেই দুঃসময়ের স্মৃতি আমাদের আজও নাড়া দেয়। আমরা সেই কঠিন সময় পার করেছি। আজকে অনেকে অনেক কথা বলেন। অনেকে সরকারের সমালোচনা করেন। কিন্তু আমরাও তো সেই দুঃসময় পার করে এসেছি। কী অত্যাচার, কী নির্যাতন গেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর দিয়ে। সেটা তো আমরা ভুলিনি, আজও মনে করি। সেই দুঃসময়ে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এই শহরের মানুষকে সংগঠিত করেছিলেন।
সারাবাংলা/এসআর/এমআইএস