এইচএসসি পরীক্ষা: প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে সর্বাত্মক উদ্যোগ
১ এপ্রিল ২০১৮ ১৯:২৭
॥ মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ॥
ঢাকা: সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে এবারের উচ্চ-মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা। মোট ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ পরীক্ষায় অংশ নেবে অন্তত ১৩ লাখ পরীক্ষার্থী। এ জন্য সবগুলো শিক্ষা বোর্ডই তাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আর প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে এবার অন্যবারের চেয়ে কঠোর ও কৌশলী নীতি অবলম্বন করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে অতীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটলেও এ পরীক্ষায় তেমনটি ঘটবে না।
বিগত পাবলিক পরীক্ষাগুলোয় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা কেবল দেশেই নয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভোটের বছরে এটাই শেষ বড় কোনো পাবলিক পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসে অতীতের যে কলঙ্ক রয়েছে, তা মুছতে না পারলে ভোটের মাঠেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ অবস্থায় নির্বাচনী বছরে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে তাই মরিয়া সরকার।
পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা কক্ষে আসন নিতে হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে যত রকম উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন, এর সবই করা হয়েছে। আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে এসএমএস করে সেট কোড এর নির্দেশনা পাঠানো হবে। তারপর প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা যাবে। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমন মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন, যা দিয়ে ছবি তোলা যায় না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেবে ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ৭৭১ জন। দেশের মোট আট হাজার ৯৪৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী মোট দুই হাজার ৫৪১টি কেন্দ্রে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৭৯টি ও কেন্দ্র বেড়েছে ৪৪টি। আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে দশ লাখ ৯২ হাজার ৬০৭ জন, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিমে এক লাখ ১২৭ জন, কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি বিএম-এ এক লাখ ১৭ হাজার ৭৫৪ জন এবং ডিআইবিএসে ৯৬৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছয় লাখ ৯২ হাজার ৭৩০ জন ছাত্র এবং ছয় লাখ ১৮ হাজার ৭২৭ জন ছাত্রী। এবার বিদেশের সাতটি কেন্দ্রে ২৯৯ জন শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবে। এর মধ্যে ১৫৯ জন ছাত্র এবং ১৪০ জন ছাত্রী।
শুধু বাংলা প্রথমপত্র দিয়ে ২০১২ সালে সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতির সূচনা হয়েছিল। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৩টি বিষয়ের ২৫টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ থেকে মোট ২৮টি বিষয়ে ৫৪টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে জানিয়েছে, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা কক্ষে আসন নিতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে এসএমএস করে সেট কোড এর নির্দেশনা পাঠাবে শিক্ষা বোর্ড। তারপর প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলা যাবে। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমন মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন, যা দিয়ে ছবি তোলা যায় না।
এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইনও। তিনি বলেছেন, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি কৌশলী পন্থায় এগোচ্ছি। সবার সহযোগিতাও চেয়ে আসছি। আমাদের চাওয়া, প্রশ্নপত্র ফাঁস বা এ সংক্রান্ত গুজবে না মেতে অভিভাবকরা যেন ছেলেমেয়েদের ভালোভাবে লেখাপড়া করান। শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সেজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে খেয়াল রাখতে হবে। অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীদের প্রতি দৃষ্টি দিতে শিক্ষকদের কাছে আবেদন জানাই।
তিনি আরও বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস যাতে ঠেকানো যায় এ জন্য আমার ইতোমধ্যেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চেয়েছি। তারাও মাঠে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১৬০জন সন্দেহভাজনকে তারা আটক করেছে। তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ৮জন কর্মকর্তাকে (অতিরিক্ত সচিব পদ মর্যাদার) ৮টি বোর্ডে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে শিক্ষা সচিব বলেন, এবারের পরীক্ষা প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নকল মুক্ত করতে আমাদের উদ্যোগের কোনো ঘাটতি নেই।
এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে বিভিন্ন সামাজিক ও গবেষণা সংস্থাও মাঠে নেমেছে। ইতোমধ্যে রাজধানীতে মানববন্ধন করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। এসময় টিআইবির কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৫ সালে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে টিআইবি যে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সরকার সেটি অনুসরণ করলে প্রশ্নপত্র ফাঁস মহামারী আকারে ছড়াতো না।
এ বিষয়ে শিক্ষা গবেষক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা রোধ করতে হলে প্রশাসনকেই কঠোর হতে হবে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সরকার কঠোর হয়েছে। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে সরকারের এই কঠোর মনোভাব যেন কেবল ফাঁকা বুলি না হয়। নির্বাচনী বছরে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা গেলে সেটা সরকারের জন্যই ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের মতো এবারও দৃষ্টিজনিত বিশেষভাবে সক্ষম , সেরিব্রাল পালসিজনিত বিশেষভাবে সক্ষম এবং যাদের হাত নেই এমন বিশেষভাবে অক্ষম পরীক্ষার্থীরা শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবেন। এ ধরনের পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবেন। আর অটিস্টিকসহ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা পাবে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময়। এ ধরনের শিক্ষার্থীরা অভিভাবক, শিক্ষক বা সাহায্যকারী নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।
ছবি: শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন-এর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।
সারাবাংলা/এমএস/এমআইএস/এটি
আরও পড়ুন
এইচএসসি পরীক্ষা: কড়া নজরদারিতে মোবাইল ব্যাংকিং
উচ্চ মাধ্যমিক এইচএসসি পরীক্ষা প্রশ্নপত্র ফাঁস শিক্ষা মন্ত্রণালয়