ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমিত হয়ে শেষ চার দিনেই মৃত্যু ঘটেছে এক হাজার ১১ জনের। দেশে এর আগে কেবল ৪ থেকে ৭ আগস্ট ও ৫ থেকে ৮ আগস্ট সময়ের মধ্যেও চার দিনে সহস্রাধিক মৃত্যু ঘটেছিল দেশে। অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ফের একদিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে দেশে। গত ৫ আগস্টও ২৬৪ জন মারা গিয়েছিলেন। সবশেষ ২৪ ঘণ্টার হিসাব মিলিয়ে দেশে করোনায় মৃত্যু পেরিয়ে গেল ২৩ হাজার।
মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা সংক্রমিত ২৬৪ জন মারা গেছেন, যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরিসংখ্যান।
সাম্প্রতিক সময়ের করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর তথ্যই বলছে, এই ভাইরাস কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। কেননা, সবশেষ ২৪ ঘণ্টার হিসাবসহ দেশে ৫২১ দিনে মৃত্যু হয়েছে ২৩ হাজার মানুষের। অথচ শেষ ৯৯ দিনেই করোনা নিয়ে মৃত্যু ঘটেছে এর অর্ধেক অর্থাৎ সাড়ে ১১ হাজার মানুষের। অন্যদিকে কেবল জুলাই মাসেই মৃত্যু হয়েছিল ৬ হাজার ১৮২ জনের, গড়ে প্রতিদিন ১৯৯ জনেরও বেশি। আবার আগস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনেই করোনায় মারা গেছেন ২ হাজার ৪৭৬ জন, গড়ে প্রতিদিন ২৪৭ জনেরও বেশি!
যেভাবে করোনায় মৃত্যু ২৩ হাজারে
দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। প্রায় একমাস পর ১৫ এপ্রিল করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০-এর ঘরে পৌঁছায়। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০১ জন। একমাস পাঁচ দিন পর ২৫ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচশ ছাড়িয়ে যায়। এর ১৫ দিনের মাথায় ১০ জুন এই সংখ্যা স্পর্শ করে হাজারের ঘর। সে হিসাবে দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের ৯৫ দিনে করোনায় মৃত্যু স্পর্শ করে হাজারের ঘর।
এর ২৫ দিন পর ৫ জুলাই দুই হাজার ছাড়িয়ে যায় করোনায় মৃত্যু। এরপরের এক হাজার মৃত্যু হয় আরও দ্রুত— মাত্র ২৩ দিনে। ২৮ জুলাই তিন হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যায় করোনায় মৃত্যু। দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে চার এবং পাঁচ হাজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে সময় লাগে ২৮ দিন করে। ২৫ আগস্ট চার হাজার ও ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যায় মৃত্যু।
এরপর করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর গতি সামান্য কমে যায়। ২২ সেপ্টেম্বরের ৪৩ দিন পর ৪ নভেম্বর ছয় হাজার, এর ৩৮ দিন পর ১২ ডিসেম্বর সাত হাজার এবং তার ৪২ দিন পর ২৩ জানুয়ারি করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু পেরিয়ে যায় আট হাজারের ঘর। এরপর মৃত্যু ৯ হাজারের ঘরে যেতে সময় লাগে ৬৭ দিন, এ বছরের ৩১ মার্চ দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজার পেরিয়ে যায়। এরপর সংক্রমণ ভয়াবহ হয়ে উঠলে ২৫ এপ্রিলই করোনায় মোট মৃত্যু ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর ১৬ দিন পরে অর্থাৎ ১১ মে মৃত্যু ছাড়ায় ১২ হাজারের ঘর।
১১ জুন দেশে করোনায় মৃত্যু ১৩ হাজার ছাড়ায়। এর পরের হাজার মৃত্যুতে সময় লাগে ১৫ দিন। ২৬ জুন দেশে করোনায় মৃত্যু ১৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর ঠিক আট দিন পরেই ৪ জুলাই দেশে করোনায় মৃত্যু ১৫ হাজারে পৌঁছায়। এরপর ৪ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ছয় দিনে দেশে এক হাজার ৯২ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
১০ থেকে ১৪ জুলাই, ১৫ থেকে ১৯ জুলাই, ২০ থেকে ২৪ জুলাই— এই সময়ের প্রতি পাঁচ দিনেই করোনায় মৃত্যু ছাড়িয়েছে এক হাজার করে। অর্থাৎ ১৪ জুলাই ১৭ হাজার, ১৯ জুলাই ১৮ হাজার ও ২৪ জুলাই করোনায় মৃত্যু ১৯ হাজার ছাড়ায়। এর চার দিনের মাথায় ২৮ জুলাইয়েই মোট মৃত্যু ২০ হাজারের ঘর অতিক্রম করে।
এরপর ২ আগস্ট ২১ হাজার, ৬ আগস্ট ২২ হাজার ও সবশেষ আজ ১০ আগস্ট করোনা সংক্রমণ নিয়ে মোট মৃত্যু ২৩ হাজারও ছাড়িয়ে গেল।
করোনায় মৃতদের দুই–তৃতীয়াংশ পুরুষ
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যুবরণকারী ২৬৪ জনের ১২৮ জন পুরুষ, ১১৭ জন নারী। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ২৩০ জন পুরুষ ও সাত হাজার ৬৬৭ জন নারী করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন। শতাংশ হিসাবে করোনায় মোট মৃত ব্যক্তির ৬৬ দশমিক ৫২ শতাংশ বা দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ, ৩৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ নারী।
বিভাগভিত্তিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান
করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুতে বরাবরই এগিয়ে ছিল ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ। সার্বিক হিসাবে অবশ্য এখনো মৃত্যুতে এগিয়ে এই দুই বিভাগ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, ঢাকা বিভাগে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন ১০ হাজার ২৪৫ জন, যা মোট মৃত্যুর ৪৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চার হাজার ৪৩৪ জন মারা গেছেন চট্টগ্রাম বিভাগে। এই বিভাগে মৃত্যুর হার মোট মৃত্যুর ১৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ তিন হাজার ৬৬ জন মারা গেছেন খুলনা বিভাগে, যা মোট মৃত্যুর ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগে এক হাজার ৭২৯ জন (৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ), রংপুর বিভাগে এক হাজার ১৪৯ জন (৫ দশমিক ০২ শতাংশ), সিলেট বিভাগে ৮৭৩ জন (৩ দশমিক ৮১ শতাংশ), বরিশাল বিভাগে ৭৫৭ জন (৩ দশমিক ৩১ শতাংশ) ও ময়মনসিংহ বিভাগে মারা গেছেন ৬৪৪ জন (২ দশমিক ৮১ শতাংশ)।