আগস্টের ১০ দিনেই সংক্রমণ সোয়া লাখ, ঘণ্টায় ৫২৮ জন
১০ আগস্ট ২০২১ ২৩:৪৯
ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কোনোভাবেই। আগস্টের প্রথম ১০ দিনেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে এক লাখ ২৬ হাজার ৮৩৮ জনের মাঝে। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ৬৮৩ জনের শরীরে। আর এই ১০ দিনে দেশে প্রতি ঘণ্টায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৫২৮ জনের মাঝে!
সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমিত ব্যক্তির মৃত্যুও বাড়ছে। এই ১০ দিনে মোট মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৪৭৬ জনের। সে হিসাবে প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন ২৪৭ জন। আর প্রতি ঘণ্টায় মারা গেছেন ১০ জনেরও বেশি!
দেশে গত বছরের মার্চে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের পর জুন-জুলাই মাসে সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছেছিল। পরে সংক্রমণ কমতে থাকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ বছরের মার্চে ফের বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এপ্রিলে তা একদফা সব রেকর্ড ভেঙে দেয়। পরে ফের কিছুটা কমে জুনের শেষ দিক থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে আগস্টের ১০ দিনেও।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত জুলাই মাসের ৩১ দিনে দেশে ১১ লাখ ৩১ হাজার ৯৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এসব নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় তিন লাখ ৩৬ হাজার ২২৬টি নমুনায়। নমুনা পরীক্ষা বিপরীতে এই সময়ে সংক্রমণের হার ছিল ২৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। এই ৩১ দিনে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু ছিল ছয় হাজার ১৮২ জনের।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সংক্রমণ শনাক্তের দিক থেকে গেল জুলাই ছিল প্রথম স্থানে। এ মাসে প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার ৫২১টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৫২ জনের মাঝে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। একইসঙ্গে এ মাসে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে প্রতি ঘণ্টায় ৮ জন মারা যায়।
অন্য দিকে আগস্টের প্রথম ১০ দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগস্টের ১০ দিনে চার লাখ ৭১ হাজার ১৪৭টি নমুনা পরীক্ষা করে এক লাখ ২৬ হাজার ৮৩৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এই ১০ দিনের মধ্যে কেবল একটি দিনে দেশে ১০ হাজারের কম কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সে হিসাবে এই সময়ে দেশে প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার ৯৬৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫২৮ জনের মাঝে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।
মৃত্যু পরিসংখ্যানেও আগস্টের ১০ দিনে ছিল ভয়াবহ। এই ১০ দিনের প্রতিদিনই দুই শতাধিক কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে সরকারি হিসেবে। এর মাঝে ৫ আগস্ট ও ১০ আগস্ট দুই দিনই সর্বোচ্চ ২৬৪ জন করে মারা গেছেন। আর ১০ দিনে মোট মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৪৭৬ জনের। সে হিসাবে এই ১০ দিনে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের।
আগস্টের ১০ দিনে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের হারে অবশ্য কিছুটা নিম্নুমুখী ধারা দেখা যাচ্ছে। তবে এখনো এ হার ২৬ শতাংশের বেশি। জুলাইয়ের ৩১ দিনের হিসাব বলছে, ওই মাসে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছিল ২৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। সেখানে আগস্টের প্রথম ১০ দিনে এই হার ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণের হারের এই সামান্য পরিবর্তনকে পরিস্থিতির উন্নতি বলার কোনো সুযোগ নেই।
কী করণীয় এ পরিস্থিতিতে?
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে বারবারই স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের তাগিদ দিয়ে আসছিলেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের পরামর্শ মেনে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলেও বুধবার (১১ আগস্ট) থেকে সে বিধিনিষেধ উঠে যাচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা এখনো বলছেন, সরকারের সদিচ্ছার সঙ্গে সঙ্গে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন।
জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল সারাবাংলাকে বলেন, সম্প্রতি সংক্রমণ শনাক্তের হার কিছুটা কমলেও তাতে কোনো কিছু শিথিল করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটি কিছু সুনির্দিষ্ট স্থানের তথ্য। এটি সারাদেশের তথ্যের প্রতিনিধিত্ব করে কি না, সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। তাই সংক্রমণের ধারা খানিকটা নিম্নমুখী হলেও কোনো কিছুতে শিথিল হওয়া যাবে না। এমনকি এই হার ২০ শতাংশের নামলেও সন্তুষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। টানা কয়েক সপ্তাহে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিয়ন্ত্রণে না নামলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে বিবেচনা করা যাবে না।
বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় মাস্ক পরা এবং কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন এই জনস্বাস্থ্যবিদ। তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে মাস্কের যে কোনো বিকল্প নেই— এটি প্রথমে মানুষকে বোঝাতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে, কেউ যেন মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হন। একইসঙ্গে সংক্রমিতদের আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। পজিটিভ আসার পর নয়, উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরই যেন আইসোলেশন করানো যায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। পজিটিভ রিপোর্ট দেওয়ার পর ফলোআপ করতে হবে যেন তার মাধ্যমে সংক্রমণ না ছড়ায়।
ড. আহমেদ জামিল করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়টিও সুপরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়নের তাগিদ দিলেন। তিনি বলেন, হার্ড ইমিউনিটির ভাবনা সম্পূর্ণ বোকামি। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের সঙ্গে সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীও করতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে— ভ্যাকসিন নিতে হবে সবাইকে, অন্যরা না পেলে শুধু নিজে নিলে হবে না। আবার সরকারকেও পর্যাপ্ত ভ্যাকসিনের মজুত নিশ্চিত করে সে অনুযায়ী প্রয়োগের পরিকল্পনা করতে হবে। এগুলো যদি নিশ্চিত করতে পারি না তবে আমাদের আরও ভয়াবহ দিন দেখতে হতে পারে যা হয়তো আগস্টের এই ১০ দিনের পরিসংখ্যানের চেয়েও হবে ভয়ংকর।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর