রাঙ্গামাটির দুর্গম এলাকায় করোনার ভ্যাকসিন গেল হেলিকপ্টারে

রাঙ্গামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম বড়থলি ইউনিয়নে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পৌঁছানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) সকাল ১০টায় জেলার কাপ্তাইয়ে অবস্থিত কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের হ্যালিপ্যাড থেকে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বড়থলি ইউনিয়নের উদ্দেশে রওনা দেয়। হেলিকপ্টারে বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রশ্মি চাকমার নেতৃত্বে স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে যান।

ডা. রশ্মি চাকমা জানান, বিলাইছড়ির দুর্গম ফারুয়া ইউনিয়নে গণটিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হলেও বেশি দুর্গম এলাকা হওয়ায় বড়থলি ইউনিয়নে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর মঙ্গলবার বড়থলিতে ৬০০ ডোজ ভ্যাকসিন নিয়ে আমরা রওয়ানা দিয়েছি। এছাড়া ভ্যাকসিনদান কার্যক্রমের পাশাপাশি বিলাইছড়ি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে চিকিৎসাসেবা এবং ইপিআই কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী সঙ্গে নেওয়া হয়েছে।

বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান জানান, বিভিন্ন সময়ে বড়থলি ইউনিয়নের মানুষের সংকট ও ইউনিয়নের প্রকল্পসমূহ সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও দুর্গমতা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে সেখানে যাওয়া সম্ভব হয়নি। করোনাভাইরাসের গণটিকাদান কার্যক্রম সফল করার জন্য আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের টিম নিয়ে বড়থলি যাচ্ছি। আশাকরি সফলভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শেষে ফিরে আসব।

রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে প্রশাসনসহ স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মীরা করোনার ৬০০ ডোজ ভ্যাকসিন নিয়ে বড়থলি ইউনিয়নে গিয়েছেন। ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইনটি ৪নম্বর বড়থলি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে করা হবে। এর জন্য আগে থেকেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।

তবে ভ্যাকসিন প্রয়োগে শঙ্কা প্রকাশ করে ডা. বিপাশ খীসা বলেন, আমরা ২৫ বছরের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনছি। এর মধ্যে দুর্গম এই ইউনিয়নে জনসংখ্যাও তুলনামূলকভাবে কম। অনেকেই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) না থাকার কারণে ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে পারবেন না। আবার একটি এলাকা থেকে আরেকটি এলাকার দূরত্ব অনেক বেশি। তাই মনে হচ্ছে, ২ শতাধিক ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা সম্ভব হবে, যদিও আমরা ৬০০ ডোজ ভ্যাকসিন পাঠিয়েছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ যারা ক্যাম্পেইনে গিয়েছেন তারা ফিরে এলে কত ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

জেলা প্রশাসন ও আদমশুমারীর সবশেষ তথ্য মতে, বিলাইছড়ির দুর্গম বড়থলি ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা ৩৮৬৭ জন। পুরো ইউনিয়নজুড়ে ২৩টি গ্রামে প্রায় ৭শ পরিবার বসবাস করছে। বিলাইছড়ি সদর থেকে বড়থলি ইউনিয়নের দূরত্ব ১১৬ কিলোমিটার। যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ইঞ্জিনচালিত নৌকা কিংবা পায়ে হাঁটা। পুরো ইউনিয়নে সরকারি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। তবে ৯টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। নেই কোনো হাটবাজার।

এদিকে দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ, টিকা কার্যক্রম, স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিস (সিজিএস) বিভাগ। প্রতিষ্ঠানটির সবশেষ কোভিড পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের ৬৪ জেলার ভ্যাকসিন প্রদানের তালিকায় জনসংখ্যার প্রতি ১০০ জনের মধ্যে কত জন মানুষ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে সেই হিসাবে শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে তিন পার্বত্য জেলা। সিজিএসের সবশেষ তথ্য বলছে, ৬ আগস্ট পর্যন্ত প্রতি ১০০ জনের ভ্যাকসিন গ্রহণের মধ্যে রাঙ্গামাটি জেলা পঞ্চম, বান্দরবান ষষ্ঠ ও খাগড়াছড়ি দশম স্থানে রয়েছে। রাঙ্গামাটির ভ্যাকসিন গ্রহণের হার ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ, বান্দরবানের ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ ও খাগড়াছড়ির ৭ দশমিক ১২ শতাংশ। এছাড়া সবচেয়ে র্শীষে রয়েছে ঢাকা জেলা ১২ দশমিক ৬৭ ও সবচেয়ে নিম্নে রয়েছে সুনামগঞ্জ ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।

সারাবাংলা/এসএসএ

ভ্যাকসিন গেল হেলিকপ্টারে