Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খালের ওপর ব্রিজ, উজানের পানিতে ডুবে গেছে ৮ গ্রামের ফসল

রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৩ আগস্ট ২০২১ ০৮:২৮

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রাম। এই গ্রামেরই একটি খালের ওপর রয়েছে একটি ব্রিজ। আর সেই ব্রিজটিই তিতুদহ ও গড়াইটুপি ইউনিয়নের আটটি গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রিজের নিচে নেই কোনো স্লুইস গেট। এতে চিত্রা নদীর উজানের পানিতে গ্রামগুলোর প্রায় সাত হাজার একর জমির ধান ও সবজিসহ অন্যন্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ও গড়াইটুপি ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে চলে গেছে হিজলগাড়ী-সরোজজগঞ্জ সড়ক। এই সড়কের গোলাপনগর গ্রামের শেষ প্রান্ত ও গড়াইটুপি ইউনিয়নের শুরুর মুখেই রয়েছে চিত্রা নদীর পাশ দিয়ে বেরিয়ে আসা বোয়ালখালি খাল। সেই খালের উৎসমুখে রয়েছে একটি ছোট ব্রিজ।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা বলছেন, চিত্রা নদীর উৎস ও প্রতিমুখ খনন না থাকায় নদীর পানি ওই ব্রিজের নিচ দিয়ে উজানে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিতুদহ ও গড়াইটুপি ইউনিয়নের গোলাপনগর, গোষ্ট বিহার, গড়াইটুপি, বিত্তিরদাড়ি, তিতুদহ, গহেরপুর, বাটিকাডাঙ্গা, গবরগাড়া, ছিলিন্দিপাড়া গ্রাম মাঠের জমিতে পানি উঠে গেছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামগুলোর প্রায় ৭ হাজারর একর জমির ফসল।

স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোবারেক, মান্না, জলিল, দুখি, কদর, ঝন্টুসহ বেশ কয়েকজন বললেন, চিত্রার উজানের পানি বোয়ালিয়া গ্রামের খালের ওই ব্রিজের নিচ দিয়ে চলে আসায় মাঠের পর মাঠ তলিয়ে গেছে। তাদের কয়েকজন ধানের আবাদ করছিলেন ক্ষেতে। কিন্তু ঘরে ওঠার আগেই সেই ধান পানির নিচে ডুবে গেছে। শুধু ধান নয়, বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ ছিলও বেশকিছু এলাকায়। সেসব সবজিও পানির নিচে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

কৃষকরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে ফসলের জন্য বৃষ্টির পানিই যথেষ্ট ছিল। চিত্রা নদীর অপ্রত্যাশিত উজানের স্রোতের পানি ফসলের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্লুইস গেট তৈরি করে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে গ্রামের মাঠগুলো পানির নিচেই থাকবে।

তারা আরও বলেন, যখন পানির প্রয়োজন তখন নদীতে পানি থাকে না। আর যখন বৃষ্টি হয় তখন চিত্রা নদীর অতিরিক্ত পানি উজানে ঢুকে ফসলের ক্ষতি করে।

চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলাতে দর্শনা মাথাভাঙ্গা নদীর গোপালখালী ব্রিজের উৎসমুখ থেকে গড়াইটুপি ইউনিয়নের শেষ সীমানা পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার স্থানজুড়ে চিত্রা নদী ছড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৩ কিলোমিটার নদী খনন করেছে। আর উৎসমুখের কিছু পরে ৩ কিলোমিটার এবং শেষের ৭ কিলোমিটার অংশের খনন এখনো বাকি।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিতভাবে নদী ও খাল খননের কারণে অপ্রত্যাশিত পানিতে কৃষি জমি নষ্ট হওয়া ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিশেষ করে গড়াইটুপি ইউনিয়নের কালুপোল, খাঁড়াগোদা এলাকায় চিত্রা নদী খনন না করায় বর্ষার পানি বের হতে পারছে না। জমে থাকা অতিরিক্ত পানি বোয়ালিয়া গ্রামের ব্রিজের নিচ দিয়ে উজানে প্রবাহিত হয়ে ফসলের মাঠ প্লাবিত হয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে এলাকাবাসী বলছেন, বোর্ড কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবেই এখন পর্যন্ত ওই ব্রিজের নিচে স্লুইস গেট স্থাপন করা যায়নি। আর ফসল হারিয়ে তাদের সেই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার খেসারত দিতে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের।

গড়াইটুপি ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান রাজু সারাবাংলাকে বলেন, এ ইউনিয়নের মধ্যে সাত কিলোমিটার চিত্রা নদী খনন এখনো বাকি আছে। এ কারণে নদীর পানি স্বাভাবিক গতিতে প্রবাহিত হতে পারছে না। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়ছে আর সেই পানি উজানে চাপ তৈরি করছে। এর আগে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সভায় অনেকবার তুলে ধরেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, এ সমস্যার বিষয়টি অনেকেই জানিয়েছে। ভুক্তভোগীরা যদি লিখিতভাবে জানান, সে ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আর অভিযোগের আঙুল যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে, সেই বোর্ডের চুয়াডাঙ্গা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ বলেন, চিত্রা নদী খনন করতে গিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। খনন কাজের অধীন এলাকায় খাস ও মালিকানাধীন জমিও রয়েছে। সে কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে এই জমিগুলো অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলেই নদী খননের কাজ ফের শুরু হবে। তখন এ সমস্যার সমাধান হবে।

সারাবাংলা/টিআর

চুয়াডাঙ্গা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর