Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এলপিজি নিয়ে বিইআরসির গণশুনানি স্থগিত

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ আগস্ট ২০২১ ১৩:২৮

ঢাকা: চার মাস আগের নির্ধারণ করা দামের ওপরে ফের গণশুনানির আয়োজন করতে যাওয়ায় তা আটকে দিয়েছে হাইকোর্ট। তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস-এলপিজির দাম নির্ধারণে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসির ওই শুনানি নিয়ম বহির্ভূত উল্লেখ করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই রুল জারি করেছে।

এজন্য মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) এলপিজির মূল্য পুননির্ধারণে বিইআরসি যে গণশুনানির আয়োজন করেছিল, তা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখতে হচ্ছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতেই নিয়ম ভেঙে বিইআরসি এই উদ্যোগ নিয়েছে। এদিকে হাইকোর্টের রুল বিশ্লেষণ করে তার জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, দেশে বেসরকারি-খাতে এলপিজির ব্যবসা শুরু হয় ২০ বছর আগে। প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত কমে আসায় গত কয়েক বছরে বাজারে এলপিজির চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি বিস্তৃতিও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুরু থেকেই এলপিজির দাম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ ছিল ব্যবসায়ীদের হাতে। চাহিদা সংকটের সময় তাদের ইচ্ছেমত দাম বাড়ানোর অভিযোগও রয়েছে। আর তা মেনেই ভোক্তারা এতদিন এলপিজি ব্যবহার করে আসছেন। এই পরিস্থিতি থেকে ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে ২০১৬ সালে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব। ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৫ আগস্ট একমাসের মধ্যে গণশুনানির মাধ্যমে এলপিজির দাম নির্ধারণের নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের সে নির্দেশ মানতে পারেনি বিইআরসি। পরে আদালতে সেজন্য ক্ষমাও চায় জ্বালানি খাতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। পরে তারা দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়। সে উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয় ২০২১ সালের ১২ জুলাই। নতুন ওই মূল্যে ভোক্তা পর্যায়ে সরকারি এলপিজি গ্যাসের প্রতি সাড়ে ১২ কেজি প্রতি সিলিন্ডারের দাম ৫৯১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর বেসরকারি সমান আয়তনের সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয় ৯৭৫ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিমাসেই এই দাম পরিবর্তিত হতে পারে বলে বলা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে পাইকারি গ্যাসের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকার অজুহাত দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত কোনো দামই ভোক্তা পর্যায়ে কার্যকর করা যায়নি। দেশের কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে এলপিজির সিলিন্ডার বিক্রি হতে দেখা যায়নি। বরং সরকার নির্ধারিত দামের চেয়েও ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত সিলিন্ডার প্রতি এলাকা ভেদে বাড়তি টাকা রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

ব্যবসায়ীদের বক্তব্য আন্তর্জাতিক মূল্যের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত দামের সামঞ্জস্যতা না থাকায় তা মানা সম্ভব হয়নি। জানা যায়, এলপিজির দাম পুননির্ধারণ করতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিইআরসির নানা দেন দরবারও হয়েছে। এলপিজির দাম নির্ধারণের পর থেকেই এই দাম পুননির্ধারণের জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিইআরসিকে তাগিদ দেওয়া হয়। তারা বিইআরসির কাছে দাম পুননির্ধারণ করতে আবেদন জানিয়েছে। এরমধ্যে এলপিজির দাম আরও চার দফা ঘোষণা করেছে বিইআরসি। চার মাস পরে এসে বিইআরসি ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ এপ্রিল গণশুনানির মাধ্যমে এলপিজির যে দাম নির্ধারণ করেছিল তা পুননির্ধারণের উদ্যোগ নেয়। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, বিইআরসির এই উদ্যোগ নিয়মবহির্ভূত।

এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের জিম্মি করে রেখেছে। অধিক পরিমাণে মুনাফা লাভ করেছে। এখন যখন একটা শৃঙ্খলায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে, তখনই তারা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিইআরসি তাদের নির্ধারিত মূল্য ব্যবসায়ীদের মানাতে বাধ্য করতে পারেনি, এটা তাদের ব্যর্থতা।

এই প্রেক্ষাপটে আদালতে আরেকটি রিট আবেদন করে ক্যাব। এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, একটা সময় ছিল ব্যবসায়ীরা তাদের পছন্দমত যেমন খুশি এলপিজির দাম নির্ধারণ করতো। তারা ভোক্তাদের ঠকাতো। ক্যাব মামলা করার পর জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু সে দাম কোনো ব্যবসায়ী মানেননি। উল্টা চার মাস পরে সেই প্রথম দফার মূল্য নতুন করে পুনর্বিবেচনার জন্য গণশুনানির আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, বিইআরসি যে দামের আদেশের ওপরে শুনানি করতে যাচ্ছে সেটি গত ১২ এপ্রিলের দেওয়া দামের বিষয়। এরমধ্যে আরও চারটি দাম সমন্বয়ের আদেশ দিয়েছে কমিশন। এ অবস্থায় আগের আদেশের কার্যকারিতা থাকে না। সেক্ষেত্রে কমিশন এই শুনানি করতে পারে না।

পাল্টা জবাবে এলপিজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠা ওমেরার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, এলপিজির যে দাম বিইআরসি নির্ধারণ করে দিয়েছে তা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। এটা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিল না।

তিনি আরও বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলেছি এমনভাবে নির্ধারণ করা হোক যেটা ভোক্তা ও সরবরাহকারী উভয়পক্ষের সামর্থ্যের মধ্যে থাকে। কিন্তু বিইআরসি তা করতে পারেনি বলে আমরা পুননির্ধারণের জন্য আবেদন করেছি।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল সারাবাংলাকে বলেন, আমরা ক্যাবের দায়ের করা রিট আবেদনের নোটিশ পেয়েছি। যদিও আদালতের আদেশের কপি পাওয়া যায়নি। আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করব এবং কমিশনে মিটিং হবে। আদালত যে আদেশ দিয়েছে অবশ্যই সেটা পালনীয়। তবে সকল সিদ্ধান্ত কমিশনের বৈঠকেই নেওয়া হবে।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, বিইআরসি গত ১২ এপ্রিল প্রথম এলপিজির দাম নির্ধারণ করে। এরপরে আরও চারটি আদেশ দিয়েছে। এখন সেই ১২ এপ্রিলের প্রথম আদেশ রিভিউ করতে চাচ্ছে। সবশেষ তারা গত ২৯ জুলাই আদেশ দেয়। সে অনুযায়ী বর্তমান এলপিজির দাম ঘোষণা করা আছে। সেখানে চারটি আদেশ ডিঙিয়ে কি করে প্রথম আদেশ রিভিউ করা যায়? ওই আদেশ তো এখন নেই। সেটার সুযোগই নেই। তিনি বলেন, ওই আদেশ রিভিউ হলে পরের চার আদেশ থাকবে না, এটা করে একটা প্যাচের সৃষ্টি করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, আদালতের নির্দেশে গত ১২ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ নিয়ে গণশুনানি করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। এর ৯০ দিনের মাথায় ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপিজির মূল্য বেধে দেয় বিইআরসি। এরপর প্রতিমাসেই আমদানি মূল্য বিবেচনায় নিয়ে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। সবশেষ গত ২৯ জুলাই মূল্য সমন্বয় করা হয়। সে আদেশ অনুযায়ী বর্তমান এলপিজির সাড়ে ১২ কেজির প্রতি সিলিন্ডারের দাম ৯৯৩ টাকা। আর সরকারি পর্যায়ে উৎপাদন খরচ না থাকায় সিলিন্ডার আগের দাম ৫৯০ টাকা রয়েছে।

সারাবাংলা/জেআর/এএম

এলজিপি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

গুলশানে দুইজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫৫

ঢাকার পথে প্রধান উপদেষ্টা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩৩

সম্পর্কিত খবর