কিছুতেই কমছে না চালের দাম, বছরে বেড়েছে ৮ শতাংশ
১৯ আগস্ট ২০২১ ২৩:০৫
ঢাকা: সরকার চাল আমদানিতে শুল্ক কমালেও বাজারে এখনও তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং চালের বাজার এখনও উর্ধ্বমুখীই রয়েছে। বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে চালের দাম কমেছে— মিলাররা এমন দাবি করলেও খুচরা বাজারে দেখা গেছে, দাম আগের মতোই রয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, মোটা চালের দাম কমেছে এবং শিগগিরই চালের বাজার স্থিতিশীল হবে।
দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়েছে সরকার। গত ১২ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানিয়েছে। এর আগে চাল আমদানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে এখন ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানি করা যাচ্ছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে খাদ্যশস্যের সরকারি মজুদ রয়েছে ১৬ কোটি ৭৯ লাখ টন। এর মধ্যে চাল ১৩ কোটি ৮৯ লাখ টন, গম ২ কোটি ৯ লাখ টন এবং ধান ১ কোটি ৪০ লাখ টন। এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইতোমধ্যে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বেসরকারিভাবে ৭ লাখ টন চাল আমদানি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) কারওয়ান বাজারের পাইকারি বাজারে মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, আটাশ ৪৭ থেকে ৫০ টাকা, নাজির ৬২ থেকে ৬৮ টাকা ও স্বর্ণা ৪৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৫, আটাশ ৫০ থেকে ৫৫, স্বর্ণা ৫০ ও নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সরু চাল ৬০ থেকে ৬৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও দাম একই রকম ছিল। আর এক মাস আগে দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। আর গেল বছরের এই দিনে এ জাতীয় চালের দাম ছিল ৫৪ থেকে ৬৪ টাকা। সেই হিসাবে চালের দাম বাজারে এখনও ঊর্ধ্বমুখী এবং বছরে শতাংশিক হিসাবে দাম বেড়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার মাঝারি মানের চাল ৫০ থেকে ৫৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৮ টাকা এবং এক মাস আগে ৫০ থেকে ৫৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এক বছর আগে এই চালের দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। এ জাতীয় চালের দাম বছরে বেড়েছে ৩ শতাংশ। এছাড়া, বর্তমানে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৪৭ থেকে ৫২ টাকা ও এক মাস ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতো। এক বছর আগেও এ জাতীয় চালের দাম ছিল ৪২ থেকে ৪৮ টাকা। সেই হিসাবে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ।
জানতে চাইলে কাওরান বাজারের মেসার্স হাজী ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের মালিক জসিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে চালের দাম কিছুটা কমেছে। বস্তায় ১০ থেকে ২০ টাকা। কিন্তু যেখানে বস্তায় দাম বেড়েছে ৩০০ টাকা সেখানে ১০ থেকে ২০ টাকা কমানোকে কম বলে না। চালের বাজার এখনও চড়াই রয়েছে। বাইরে থেকে চাল আসবে- এই প্রস্তাবনার পর মিলাররা দাম ১০ থেকে ২০ টাকা কমিয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বাজারে আমদানিকৃত চাল না আসছে, কিংবা নতুন চাল না উঠছে, বাজার ততক্ষণ স্থিতিশীল হবে না।’
জানতে চাইলে নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোধ চন্দ্র সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বস্তাতেই চালের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে। আমাদের এখানে মিনিকেট এখন ২ হাজার ৫৫০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা বস্তায় বিক্রি হচ্ছে। আগে ২ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৮৫০ টাকা ছিল। নাজিরশাইল ২ হাজার ৮০০ টাকা বস্তাতে বিক্রি হচ্ছে, বস্তায় দাম ২০০ টাকা কমেছে। আটাশ এখন ২ হাজার ৪০০ টাকা বস্তায় বিক্রি হচ্ছে। সব চালের দামই বস্তায় ১০৯ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে। সেক্ষেত্রে কেজিতে কমেছে দাম ২ থেকে ৩ টাকা।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে এখন ক্রেতা নেই। আগে দিনে ১৫০ গাড়ি চাল বিক্রি হতো, আর এখন ২০ থেকে ২৫ গাড়ি বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা চাল আসবে আসবে বলা হলেও কোনোটাই হচ্ছে না। আর বাজারে চালের দাম না কমার কারণ হলো- মোকামে আগের অনেক চাল রয়ে গেছে। বেশি দামে কেনা চাল তারা কমে বিক্রি করছে না। বাড়ানোর সময় ঠিকই আগে বাড়ায়, কিন্তু কমানোর সময় কমায় না।’
এ প্রসঙ্গে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম সারাবাংলাকে বলেন, ‘চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। শুল্ক কমিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে। ওএমএসে চাল দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে মোটা চালের দাম কমে গেছে। কিন্তু মানুষ মোটা চাল কম খায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চলছে। আউশ ধান বাজারে উঠতে শুরু করেছে। বেসরকারিভাবে ৭ লাখ মেট্রিক টনের উপরে চাল এসেছে। আমরা আশাবাদী দ্রুতই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘লকডাউনের কারণে কেয়ারিং কস্ট বেশি থাকায় ও বাজারে চালের স্বল্পতার কারণে দাম বেড়ে গিয়েছিল। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই লকডাউন ছিল। অনেকেই আবার চাল অল্প অল্প করে স্টক করেছে। গোয়েন্দা বিভাগ বলছে, অবৈধ কারসাজি থাকতে পারে। আমরা বলেছি আপনারা তথ্য দিন। তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সব মিলিয়ে আমরা আশাবাদী যে, দ্রুতই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম
আমাদানি শুল্ক কমছে না খাদ্য মন্ত্রণালয় চালের দাম টিসিবি নাজিরশাইল মিনিকেট