ঢাকা: দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে পরিস্থিতি কাবুল বিমানবন্দরের চেয়েও ভয়াবহ হবে বলে মন্তব্য করেছেন ‘নাগরিক সমাজ’-এর নেতারা। সমাবেশ থেকে ঢাবি শিক্ষক আসিফ নজরুলের দেওয়া ‘বিতর্কিত’ ফেসবুক স্ট্যাটাসের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়।
শুক্রবার (২০ আগস্ট) দুপুরে শাহবাগ সত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও বন্দি ছাত্রনেতাদের মুক্তির দাবি এবং আসিফ নজরুলকে হুমকি প্রদান ও হয়রানির প্রতিবাদে এ নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন- নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, জেএসডির কার্যকরী সভাপতি আনিছুর রহমান খান, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, ইসতিয়াক আজিজ উলফাত, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর, রাষ্ট্রচিন্তার অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়কারী শহিদ উল্লাহ কায়সার, সদস্য ডা. জাহিদ উর রহমান, নাগরিক মহিলা ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌসি আক্তার, ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রাশেদ খান, যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন, যুব অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মনজুর মোর্শেদ মামুন, শ্রমিক অধিকার পরিষদদের আহ্বায়ক আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা নগর আহ্বায়ক সৈকত আরিফসহ অন্যরা।
সমাবেশে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘যে জাতি সম্মান দিতে জানে না সেই জাতির কপালে বিপর্যয় আছে। সাহসী শিক্ষকের সঙ্গে যা হচ্ছে তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দায় আছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে আপনার একটা নৈতিক দায়িত্ব আছে। যারা আসিফ নজরুলের সঙ্গে অন্যায় করেছে, অন্যায় বহাল রেখেছে তাদের পক্ষ থেকে পাবলিকলি আসিফ নজরুলের কাছে ক্ষমা চান। আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে একটা উদাহরণ সৃষ্টি হবে। আপনার অনুসারীরা এসব থেকে শিখবে। আদব-কায়দা শিখবে। আদব-কায়দা না শিখলে জাতির উন্নতি হয় না।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি কথা দিয়েছিলেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ছাত্রদের নামে কোনো মামলা হবে না। তিন বছর ধরে সে মামলা ঝুলছে। আপনার কথার মূল্য না থাকলে দেশবাসী যাবে কোথায়? একইভাবে নরেন্দ্র মোদির আগমণের প্রতিবাদ করায় ৫৪ জন ছাত্রের এখনও জামিন দেননি। শুধু জামিন না, এ সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করুন। তাহলে আর কাবুলের দৃশ্য দেখতে হবে না। নয়ত কাবুলের দৃশ্য পুনরাবৃত্তি হওয়া আশ্চর্য কিছু না।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আসিফ নজরুলের স্ট্যাটাসে কারও নাম বলে নাই। চোরের মন পুলিশ পুলিশ। নাম না বললেও ওরা (আওয়ামী লীগ) বুঝেছে যে আসিফ নজরুল ওদের কথা বলেছে। আসিফ নজরুল যা বলেছে তা প্রত্যেক মানুষের মনে ব্যানার হয়ে বুলঝে। বাংলাদেশে যদি ঠিকঠাক মতো নির্বাচন হয় তাহলে বাংলাদেশের বিমানবন্দরে অবস্থা কাবুলের থেকে ভয়াবহ হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ক্ষমতা থেকে নামলে তাদের (আওয়ামী লীগ) পরিণতি আফগানস্থানের কাবুল বিমানবন্দরে মত হবে। প্লেনের চাকা ধরে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। এখনো সময় আছে, পদত্যাগ করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। জনগণ হয়ত আপনাদের ক্ষমা করবে। নয়ত এদেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমতা থেকে নামিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হোক নূর বলেন, ‘শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধি হিসাবে এই দুর্বৃত্তায়নের আমলে অন্যায়, অবিচার, দুঃশাসন নিয়ে কথা বলছেন আসিফ নজরুল স্যার। তিনি যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তা কি অবাস্তব কথা? সাহস থাকলে নিরেপক্ষ নির্বাচন দিয়ে দেখেন। অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।’